মুগদা হাসপাতালের বহির্বিভাগের সেবা নেওয়া মানে ‘যুদ্ধ জয়’

রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ পূর্ব বিশাল এলাকার জন্য ৫০০ শয্যার একটি মাত্র হাসপাতাল মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ঘনবসতিপূর্ণ এ এরিয়ার সরকারি হাসপাতালটির সক্ষমতার চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি রোগীর চাপ থাকে। সামলাতে হিমশিম খান চিকিৎসক-কর্মকর্তারা। দীর্ঘ সিরিয়ালে কষ্ট পান রোগীরাও।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সরেজমিনে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ চিত্র দেখা গেছে। বাইরে রোদের তাপ, ভেতরে রোগীর চাপ। এক অসহ্য পরিস্থিতি। রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনরাও অতিষ্ঠ।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
সকালে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকলেই নিচতলায় চোখে পড়ে টিকিট কাউন্টার। তিন দিকেই মানুষের সিরিয়াল। টিকিট তো নয়, মনে হবে ত্রাণের সিরিয়াল। ভোরে এসে সিরিয়াল ধরে টিকিট নিয়ে দিন দিন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরা কঠিন।
রোগীরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালে আস্থা বেশি। তাই আমরা আসি। কিন্তু সিরিয়ালেই কষ্ট। টিকিটে সিরিয়াল, চিকিৎসক দেখানোয় সিরিয়াল, আবার টেস্ট দিলে তো কথাই নেই। ওটা আরেক যুদ্ধক্ষেত্র। টিকিট কেটে রোগী দেখানো যায় দিনে দিনে, কিন্তু পরীক্ষা দিলে আরও দু-একদিন আসা লাগবেই।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
শিল্পী আক্তার ডেমরা থেকে এসেছেন। গত বুধবার ডাক্তার দেখিয়েছেন। আজ রিপোর্ট দেখাতে এসেছেন। সকাল ৮টায় এসে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষায় আছেন।
বিজ্ঞাপন
তার পাশের সাথী আক্তার গত রোববার ডাক্তার দেখিয়েছেন। আজ রিপোর্ট দেখাতে এসেছেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় তার সিরিয়াল এলে ডাক্তার খেতে গেছেন। বিরক্ত হয়ে বসে আছেন টেবিলে। আবার সিরিয়ালে গিয়ে বাধে বিপত্তি। অন্যরা মানতে নারাজ তার সিরিয়াল। অর্থাৎ বিরক্তি প্রকাশও করা যাবে না!
আরও পড়ুন
- সব হাসপাতালে হচ্ছে সরকারি ফার্মেসি, কম দামে মিলবে ২৫০ রকম ওষুধ
- ‘মা, আমরা কি এখন সবাই মারা যাবো?’
- ‘মার্চ ফর গাজা’য় বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাসেবা দেবে এনডিএফ
জাগো নিউজকে সাথী আক্তার বলেন, যেভাবে সব জায়গায় সিরিয়াল আর কষ্ট! অসহ্য! জরুরি কোনো রোগী এলে মারাই যাবে। তারপরও আসি, ডাক্তারদের চিকিৎসা ভালো। আস্থা রাখা যায়।
বিজ্ঞাপন
শিল্পী ও সাথী দুজনেরই অভিযোগ- তারা কোনো পরীক্ষা হাসপাতালে করতে পারেননি। হাসপাতালে একেক পরীক্ষার জন্য একেক সময় দেয়। আবার থাকে লম্বা সিরিয়াল। সময় মেলানো কঠিন। তাই, তারা বাধ্য হয়ে বাইরে (বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার) থেকে টেস্ট করিয়ে আনছেন।
পাটুয়াটুলি থেকে মা রুমা বেগমের সঙ্গে এসেছে তিন বছরের আনাবিয়া। ঠান্ডা লাগছে, ডাক্তার দেখাবে। রুমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, আসছি সকালে সিরিয়ালে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখাইছি, এখন ওষুধ নেওয়ার সিরিয়ালে। এখানে সবই ভালো, শুধু সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকাটাই কষ্ট।
রেখা বেগম নাতনির ঠান্ডাজনিত কারণে এসেছেন। পুত্রবধূ ডাক্তারের সিরিয়ালে, তিনি নাতনি নিয়ে বেঞ্চে বসে আছেন। তারও একই অভিযোগ গরমের মধ্যে এখানে সিরিয়ালে থাকাটা বড় কষ্টের। বাকি সব ঠিক আছে।
বিজ্ঞাপন
তবে চিকিৎসকদের দাবি, তাদের সক্ষমতার চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি রোগী হয়। সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হয়।
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. জেড এম এস সালেহীন জাগো নিউজকে বলেন, সার্জারির বহির্বিভাগে ১৩টা রুমে রোগী দেখা হয়। প্রতিদিন ৭-৮শ রোগী আসে। এর মধ্যে ১০০-১৫০ ভর্তি উপযোগী। ৪০ জন আগেই ভর্তি আছে। প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ জন ভর্তি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
মেডিসিনের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আউটডোরে মেডিসিনের দৈনিক ৮০০ থেকে ১০০০ রোগী দেখি আমরা। আমাদের তো মূলত ৫০০ বেডের হাসপাতাল। বিভিন্ন বিভাগের জন্য ভাগ করা আছে। আমাদের মেডিসিন বিভাগে রোগী ভর্তি আছে ৩০০ প্রায়। এটি সক্ষমতার তিনগুণ বেশি।
আরও পড়ুন
- চিকিৎসা বঞ্চিত চরের মানুষের দুঃখগাঁথা
- চিকিৎসকদের পরীক্ষা ফি কমানোসহ ৭ দাবিতে ভিসির সঙ্গে এনডিএফের বৈঠক
হাসপাতালের আউটডোর ইনচার্জ আল শামীমা জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় ৪০টি রুমে ৫০ থেকে ৬০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেবা দেন। প্রতিদিন আউটডোর ৩২শ থেকে ৩৫শ রোগী আসে। এরমধ্যে ৫০-৬০ ভর্তি দেওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, গত রোববার বহির্বিভাগের ৩ হাজার ৩২৯ জন টিকিট কেটে চিকিৎসা নিয়েছে। তাদের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ৫৩ জন। আজও আমাদের প্রায় সাড়ে তিন হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মেজবাহুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি হাসপাতাল কাউকে তো ফেরানোর সুযোগ নেই। সাধ্যমতো সবাইকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। সেবাবিহীন কেউ থাকে না। তবে, ভোগান্তির যে অভিযোগ সেটাও অসত্য নয়, সক্ষমতার চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি রোগী সামাল দিতে হয়। ভোগান্তি তো কিছুটা হবেই।
এসইউজে/এমএএইচ/এমএস
বিজ্ঞাপন