ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

ছয় দশকেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ভয়ানক জোডিয়াক কিলার

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:৫৯ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার জ্যাক দ্য রিপারের কথা জানেন না এমন মানুষ কমই আছেন। যারা থ্রিলার গল্প কিংবা সত্য ঘটনা জানতে আগ্রহী তারা নিশ্চয়ই জোডিয়াক কিলারের নামও শুনেছেন নিশ্চয়ই। জোডিয়াক কিলারের আসল নাম জানা যায়নি। এটি পুলিশের দেওয়া কোড নাম ছিল।

ঘটনার পর পেরিয়ে গেছে ৬০ বছর। এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে এই সিরিয়াল কিলার। ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৯ সালের অক্টোবর। এই দশ-এগারো মাসের মধ্যে সানফ্রান্সিসকো, লেক বেরিয়েসা, ভাল্লেজো, বেনিসিয়ায় রহস্যময় ভাবে আক্রান্ত হন সাতজন। তাদের বয়স ১৬ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। চারজন পুরুষ। তিনজন নারী। তবে প্রাণে বেঁচে যান দুজন।

হত্যার পর থানায় চিঠি পাঠাতেন এই কিলার। পুলিশ ঘটনাস্থল তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো ‘ক্লু’ পায়নি পুলিশ। এক্ষেত্রে তাদের ‘সাহায্য’ করতে এগিয়ে আসে খোদ জোডিয়াক কিলারই! ‘সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকল’-এ সংকেতচিহ্ন সহ চিঠি পাঠাতে থাকে সে। সব মিলিয়ে পুলিশের হাতে আসে ৩৪০টি কোড! কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সেই সব কোড থেকে খুনিকে ধরার কোনো সূত্রই মেলেনি। আসলে যে ধরনের কোড খুনি পাঠাত সেগুলোতে বারোটি রাশিচিহ্ন থাকত। তাই খুনির নামকরণ হয়ে গেল ‘জোডিয়াক কিলার’।

ছয় দশকেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ভয়ানক জোডিয়াক কিলারদিস ইজ দ্য জোডিয়াক স্পিকিং ওয়েবফিল্মের দৃশ্য

জোডিয়াক কিলারের প্রথম স্বীকার ছিল ১৬ বছরের বেটি লউ জেনসেন এবং ১৭ বছরের ডেভিড আর্থার ফ্যারাডে। এই দুই কিশোর-কিশোরীর সেদিনই ছিল প্রথম ডেট। প্রেমিক ডেভিড তার প্রেমিকাকে নিয়ে গিয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার লেক হেরমান রোডে। ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর দুজনের দেহ আবিষ্কার করেন এক পথচারী। নিজেদের গাড়ির পাশেই পড়েছিল তারা। শরীরে গুলির চিহ্ন।

এরপরের শিকার ২২ বছরের তরুণী ডারলেন ফেরিন। ১৯৬৯ সালের ৪ জুলাই সদ্য মা হওয়া ওই তরুণীকে গুলি করে হত্যা করে জোডিয়াক কিলার। এখানেই শেষ নয়, তার গাড়িতে থাকা ১৯ বছরের মাইকেল ম্যাজেউও আহত হন আততায়ীর গুলিতে। কিন্তু তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

ভাল্লেজোর পার্কিং লটের এই হামলা নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দেয় আমেরিকায়। ক্রমেই চর্চা শুরু হয়ে যায় জোডিয়াক কিলারকে কেন্দ্র করে। একে একে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকে অপরাধী। দিশেহারা হয়ে যায় পুলিশ। আজ পর্যন্ত এই মামলায় একজনই সন্দেহভাজনের সন্ধান পেয়েছিল পুলিশ। তার নাম আর্থার লেই অ্যালেন। সে পেশায় ছিল একজন শিক্ষক।

এক সময় এই আর্থারকেই আসল জোডিয়াক কিলার মনে করতে থাকেন। তিনিই ছিলেন এই মামলার একমাত্র সন্দেহভাজন। এছাড়া এই আর্থার তার বন্ধুদের কাছে জোডিয়াক কিলারকে নিয়ে নানান ধরনের গল্প করে বেড়াতেন। এছাড়া আর্থার একজন দোষী সাব্যস্ত হওয়া শিশু যৌন নির্যাতনকারী। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী জোডিয়াক কিলারের আদলের সঙ্গে তার আশ্চর্য সাদৃশ্য।

তবে ১৯৯২ সালে মারা যায় সে। এরপর মেলে আরও একটা ‘ক্লু’। একটা জোডিয়াক ওয়াচ তথা রাশিচিহ্ন ঘড়ি। অর্থাৎ সেই ঘড়ির মধ্যে ছিল রাশিচক্রের ছবি। তবে সংবাদপত্রে লেখা তার চিঠিগুলোর মূল কপির ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছিল। তা আর্থারের সঙ্গে মেলেনি। ফলে ‘অফিসিয়ালি’ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যায়নি। কিন্তু আজও এই মামলায় কুয়াশামাখা তার উপস্থিতি।

এই মামলায় অনেককেই সন্দেহ করেছে পুলিশ। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন। নানান ভাবে চেষ্টা করেছেন তারা। কিন্তু কোনোভাবেই এই কিলারকে ধরতে পারেননি তাকে। তাই আজো ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে জোডিয়াক কিলার।

ছয় দশকেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ভয়ানক জোডিয়াক কিলার

তবে ২০২১ সালে একদল শখের গোয়েন্দা দাবি করেন, তারা জোডিয়াক কিলারকে খুঁজে পেয়েছেন। তার নাম গ্যারি ফ্রান্সিস পোস্টে। সে একজন সিরিয়াল কিলার হিসেবেই কুখ্যাত। তবে বর্তমানে আর ইহজগতে নেই সে। কিন্তু তার সঙ্গে অভিযুক্তর আদল মেলা বা খুনের প্যাটার্নের মিল যাই থাকুক, তা অকাট্য প্রমাণ হতে পারে না। সুতরাং গ্যারি সাহেবও হিসেবে বাইরেই থেকে যায়।

এছাড়া করোনার সময় এক সফটওয়্যার ডেভেলপার, এক কম্পিউটার প্রোগ্রামার এবং এক গণিতবিদ দাবি করেন, তারা নাকি সমাধান করে ফেলেছেন সংকেত সূত্রের! সব সংকেত একত্র করে নাকি দেখা যাচ্ছে, লেখা রয়েছে, ‘আমাকে খুঁজে বের করতে মজা পাচ্ছেন? আমি কিন্তু গ্যাস চেম্বারে ভয় পাই না। তা আসলে আমাকে স্বর্গের কাছাকাছিই নিয়ে যাবে। এই পৃথিবীতে আমি একাধিক ক্রীতদাস রেখে যাব। যারা আমার জন্য কাজ করবে।’

তবে এই দাবি আমলে নেননি কেউ। কারণ এমন সংকেত তো গত শতকের পাঁচের দশকে মার্কিন সেনাবাহিনী ব্যবহার করত। তাহলে কি জোডিয়াক কিলার আগে সেনাবাহিনীতে ছিল? বলাই বাহুল্য, এই উত্তরও মেলেনি। নেটফ্লিক্সের মতো জনপ্রিয় ওটিটি মঞ্চ অবশ্য তাকে নিয়ে তৈরি করে তথ্যচিত্র ‘দিস ইজ দ্য জোডিয়াক স্পিকিং’। সেখানেও তাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রাখতে হয়েছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

কেএসকে/জিকেএস

আরও পড়ুন