ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

রাত জেগে ইবাদতের জন্য ব্যবহৃত কফি মুসলিম দেশে ছিল নিষিদ্ধ

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:৪০ এএম, ০১ অক্টোবর ২০২৪

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় পানীয়র নাম কফি। কফি পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। বিশ্বের উন্নত দেশ তো বটেই আমাদের দেশেও আছেন অসংখ্য কফিপ্রেমী। যাদের সকাল শুরু হয় এক মগ ব্ল্যাক কফি দিয়ে। এরপর সারাধিন কাজের ফাঁকে, আড্ডায় চলে আরও কয়েক মগ কফি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কফিপ্রেমীদের কিন্তু গ্রুপও আছে। যেখানে একেকজন তাদের পান করা সেরা সব কফির সাজেশন দেন অন্য বন্ধুদের। নানান রকম কফির রেসিপিও শেয়ার করেন অনেকে। আবার শহরের কিংবা দেশের বাইরে কোথায় কোন কফিশপ সেরা তা জানতে পারেন একে অন্যের মাধ্যমে। দারুণ সব কফির ফটো শেয়ার করেন বন্ধুদের সঙ্গে সবাই।

জানেন কি, আজ আন্তর্জাতিক কফি দিবস। বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে দিনটি। এই উপলক্ষ্যে কফিপ্রেমীদের গ্রুপগুলোতে চলছে নানান কনটেস্ট। বিভিন্ন কফিশপগুলো বিশেষ ছাড়ও দিচ্ছে ক্রেতাদের। জানেন কি, এই জনপ্রিয় পানীয় আবিষ্কার হয়েছিল একটি ছাগলের মাধ্যমে।

শুনতে অবাক লাগলেও এটিই সত্যি। পুরোনো কিংবদন্তী অনুযায়ী, নবম শতকে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ ইথিওপিয়ার কাফা অঞ্চলের খালিদ নামের এক আরব বাসিন্দা ছাগল চরানোর সময় খেয়াল করেন যে, তার ছাগলগুলো জামের মতো এক ধরনের ফল খাচ্ছে। সে ব্যাপারটি তেমন গুরুত্ব দেয়নি। তবে পরবর্তীতে সে লক্ষ্য করে এই ফলগুলো খাওয়ার পর প্রাণীগুলোকে অনেক সতেজ দেখাচ্ছে। এমনকি তার ছাগলগুলো সারারাত না ঘুমিয়ে পার করে দেয়।

রাত জেগে ইবাদতের জন্য ব্যবহৃত কফি মুসলিম দেশে ছিল নিষিদ্ধ

এরপর খালিদ ওই ফলগুলোকে সিদ্ধ করে সর্বপ্রথম কফি তৈরি করেন। একদল সন্ন্যাসীকে তার পর্যবেক্ষণ জানানোর পর ঐ ফল থেকে পানীয় তৈরি করে তারা উদ্দেশ্য ছিল সারারাত জেগে প্রার্থনা করা। এরপর কফি নামক এই পানীয় ইথিওপিয়া থেকে ইয়েমেনে রপ্তানি করা হয়। সেখানে সুফী-সাধকরা বিশেষ উপলক্ষে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য এটি পান করতেন।

এরপরই বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রসার লাভ করে পানীয়টি। ফলে ইথিওপিয়াকে কফির জন্মস্থান মনে করা হয়। ইথিওপিয়ায় জন্ম নেওয়া কফি গাছ থেকে পাওয়া কফিকে বলা হয় ‘অ্যারাবিকা’।

পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষদিকে কফি পৌঁছে যায় মক্কা ও তুরস্কে। যেখান থেকে ১৬৪৫ সালে এটি যায় ইতালির ভেনিস নগরীতে। ১৬৫০ সালে পাস্ক রোসী নামের এক তুর্কীর হাত ধরে এটি ইংল্যান্ডে প্রবেশ করে। তিনি লন্ডন নগরীর লোম্বার্ড স্ট্রিটে সর্বপ্রথম কফির দোকান দেন।

কফি যে শুধু ঘরেই উপভোগ করা হতো, তা কিন্তু নয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন শহরে কফির দোকানগুলোকে বলা হতো ‘কাহভেহ খানেহ’। ঐসব কফির দোকানগুলো পরবর্তীতে দৈনন্দিন আড্ডা, জমায়েতের জায়গা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেসময় এসব কফি হাউজগুলোই হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।

তবে বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে এসব কফি হাউজকে নিষিদ্ধ করা হয়। তখনকার সময় মনে করা হত, কফি হাইজে মানুষ বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। ফলে দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইনের কারণে যেহেতু ঘুম কম হত তাই মনে করা হত এটি নেশাদ্রব্য তাই কফি পান করাও নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এত কিছুর পরও দমিয়ে রাখা যায়নি কফির জনপ্রিয়তা।

যে কফির আবিষ্কার করেছিল ছাগল, সেই কফির সবচেয়ে দামী ধরনটা আসে একটি প্রাণীর বিষ্ঠা থেকে। ‘সিভেট’ নামের স্তন্যপায়ী এক ধরণের বিড়াল অথবা হাতি-পৃথিবীর সবচেয়ে দামী কফি এই দুই প্রাণীর যে কোনো একটির পরিপাকতন্ত্র হয়ে মানুষের কাছে পৌঁছায়।

রাত জেগে ইবাদতের জন্য ব্যবহৃত কফি মুসলিম দেশে ছিল নিষিদ্ধ

‘কোপি লুয়াক’ এক ধরণের কফি যা সিভেট নামক একধরণের ইন্দোনেশিয়ান স্তন্যপায়ী বিড়ালের বিষ্ঠা থেকে তৈরি হয়। বিড়ালের পরিপাকতন্ত্র দিয়ে যাওয়ার সময় স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে কফি চেরিগুলো গাঁজানো হয়, পরবর্তীতে সেগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করা হয়। ঐ ধরণের কফির ৫০০ গ্রামের দাম হতে পারে ৭০০ ডলার (প্রায় ৬০ হাজার টাকা) পর্যন্ত।

বর্তমানে এই ধরনের কফিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলছে ব্ল্যাক আইভরি কফি। হাতে আলাদা করা কফি চেরি খাওয়ার পর থাইল্যান্ডের হাতিদের বিষ্ঠা থেকে তৈরি হয় এই জাতের কফি। ব্লেক ডিঙ্কিন নামের একজন কানাডিয়ান আবিষ্কার করেছিলেন এই ব্ল্যাক আইভরি কফি। যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ গ্রাম পরিমাণ ব্ল্যাক আইভরি কফির মূল্য প্রায় ৮৫ ডলারের কাছাকাছি। যত দামিই হোক না কেন কফিপ্রেমীরা একবার এই কফির স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পেলে তা হাত ছাড়া করেন না।

কেএসকে/জিকেএস

আরও পড়ুন