অতীতের যোগাযোগের অবিস্মরণীয় অধ্যায়
মোসাম্মৎ উম্মে হাবিবা
‘রানার ছুটেছে... কাজ নিয়েছে নতুন খবর আনার’—সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতাটি শোনার সাথে সাথেই মনে জাগে একটি শব্দ ‘চিঠি’। ছোটবেলায় এই চিঠি শব্দটি আমাদের এতই আনন্দ দিত যে, তা এখনকার নতুন প্রজন্ম অর্থাৎ জেন-জি, হয়তো বুঝতে পারবে না। কারণ আমরা নিজেদেরই সেই শব্দটির সাথে অপরিচিত করে তুলেছি।
বর্তমানে চিঠি বলতে আমরা কেবল অফিস-আদালতের আনুষ্ঠানিক চিঠিকেই বুঝি। কারণ এখন আর চিঠি লেখার প্রয়োজন তেমন পড়ে না। অফিসের বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে চিঠি লেখা আমরা প্রায় ভুলেই গেছি। রানার (ডাকহরকরা), যারা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চিঠি পৌঁছে দিতেন, তাদেরও আমরা ভুলতে বসেছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন আমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয়ে উঠেছে। তখনকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়াও যোগাযোগব্যবস্থা তেমন উন্নত ছিল না। দ্রুত খবর পৌঁছানো যেত না। একমাত্র ভরসা ছিল এই চিঠি।
এই চিঠির যে কতখানি অবদান ছিল, এখন গ্রাম থেকে শহরে তা নিছক কল্পনা মাত্র। যত ধরনের জরুরি খবর, বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গ্রামের নববধূর কাছে এই চিঠির আবেদন ছিল দুর্দান্ত। কারণ শহরে চাকরি করা স্বামীর কাছে তার ভালোবাসার কথা পৌঁছে দেওয়ার একমাত্র নিরাপদ মাধ্যম ছিল এই চিঠি। গ্রামের বাবা-মা তাদের আগ্রহে চাকরিজীবী ছেলের চিঠির অপেক্ষায় থাকতেন।
তখনকার পত্রমিতালির কথা কি ভোলা যায়! এখন আমরা সবকিছুই খুব দ্রুত জানতে পারি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবকিছু এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। প্রায় ভুলতে বসেছিলাম পারিবারিক চিঠির কথা। আজ আন্তর্জাতিক চিঠি দিবসে সুন্দর আগামী দিনের তরুণ সমাজের প্রতি রইল আমার অফুরন্ত শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।
লেখক: অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, অর্থনীতি বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
এসইউ/জিকেএস