শখ থেকে দেলোয়ারের বাণিজ্যিক নার্সারি
নোয়াখালীর মো. দেলোয়ার হোসেন রাজধানীর বুকে ১৭ বছর ধরে করছেন নার্সারির ব্যবসা। বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তার এ পেশায় আগমন। বর্তমানে রাজধানীর ইস্কাটন রোড এবং আশিয়ান সিটিতে সুসজ্জিত ভাবে পরিচালনা করছেন নিজের নার্সারি।
যুবক বয়সে ছিলেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের ডিন ড. আনোয়ার হোসেনের গাড়ি চালক। ড. আনোয়ার হোসেনের গাছের প্রতি ভালোবাসা দেখে নিজেও হয়ে যান বৃক্ষপ্রেমিক। তিনি বলেন, ‘আমার স্যার এবং তার স্ত্রী গাছ ভালোবাসতেন। প্রায় সময় তারা গাছ কিনে আনতেন। সেগুলোর যত্ন আমাকেই নিতে হতো। এভাবেই ভালো লাগা শুরু।’
শুরুর দিকে ছোট পরিসরে হলেও এখন দেলোয়ারের দুটি নার্সারি। একটি ইস্কাটনে, অপরটি আশিয়ান সিটিতে। তার নার্সারির নাম ‘বাহার নার্সারি’। বিভিন্ন ধরনের ইনডোর ও আউটডোর গাছ ও ফুল-ফল গাছ দিয়ে সাজানো এ নার্সারি নজর কাড়ছে আশপাশের সবার।
আরও পড়ুন: ৫টি প্লাস্টিকের বোতলের বিনিময়ে মেলে একটি কম্বল
ইস্কাটন সড়কে সূর্যের রশ্মি কম পৌঁছানোয় ফুল-ফলের বদলে ইনডোর-আউটডোর গাছের প্রতি তিনি বেশি দৃষ্টি দিয়েছেন। দেলোয়ার বলেন, ‘এখানে ইনডোর বা ঘরসজ্জার জন্য ক্যাকটাস, অর্কিড, সাকুল্যান্ট, বনসাই, পাইকাস, মনস্টেরা, মানিপ্ল্যান্ট, ফার্ন, এরিকা পাম, অগ্নিশ্বর, অ্যাগলোনিমা ইত্যাদির চাহিদা বেশি। আকার ও প্রজাতি ভেদে এসব গাছের একেকটির দাম একেক রকম।’
রাজধানীর মানুষ ইনডোর গাছের পাশাপাশি আউটডোর গাছও কিনতে আসেন। তিনি বলেন, ‘বাসাবাড়ির বারান্দা আর ছাদে গাছ লাগানোর পাশাপাশি ঢাকা শহরের অফিস, রেস্তোরাঁয় সৌন্দর্য বর্ধনের অন্যতম অনুষঙ্গ নানা জাতের গাছগাছালি। এমনকি কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক বা সরকারিসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে শোভা বাড়াতে আয়োজকেরা দৃষ্টিনন্দন গাছ ভাড়া নিতে আসেন।’
ইস্কাটন রোডে দেলোয়ারের নার্সারির আশেপাশে অনেকগুলো নার্সারি গড়ে উঠেছে। তবে দেলোয়ার হোসেনের নার্সারি সবার আস্থার প্রতীক। পুরোনো অনেক গ্রাহক এখনো তার নার্সারিতেই চারা কেনার জন্য ভিড় জমান। তিনি বলেন, ‘কিছু অফিসে আমি গাছ ভাড়া দিই। সেখান থেকে প্রতি মাসে ভাড়ার টাকা আসে। এছাড়া গাছ বিক্রি করে সব মিলিয়ে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়।’
আরও পড়ুন: ৫ টাকায় শীতবস্ত্র পেল সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা
ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় নার্সারি আছে প্রায় ৩০০টি। আগারগাঁও, তিনশ ফুট, একশ ফুট, দিয়াবাড়ী, দোয়েল চত্বর, বেইলি রোড, কাকরাইল ও বেড়িবাঁধ এলাকায় অধিকাংশ নার্সারি গড়ে উঠেছে। তাদের রয়েছে হোম ডেলিভারি সুবিধা। এ ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন , ‘আমাদের একটি ফেসবুক পেজ ছিল। অনলাইনে অর্ডার এলে হোম ডেলিভারি দিতাম। করোনায় নার্সারি বন্ধ থাকায় পেজের রিচ কমে যায়। নতুন করে চালুর উদ্যোগ নিচ্ছি। খুব দ্রুতই শুরু করতে পারবো।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্ক জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বয়স তো কম হয়নি। ৫৩ বছর চলছে। স্ত্রী সরকারি চাকরি করে। সন্তানরাও বড় হয়েছে। চার সন্তান আর স্বামী-স্ত্রী মিলে ভালোই আছি। নতুন করে আর কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই। যতদিন বেঁচে আছি, এভাবেই নার্সারি থেকে রোজগার করে চলবো।’
এসইউ/জিকেএস