ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

ফটোগ্রাফি করে মাসে লাখ টাকা আয় এমদাদের

এম মাঈন উদ্দিন | প্রকাশিত: ১২:৪১ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠেন মুহাম্মদ এমদাদ হোসাইন। ছোটবেলা থেকে তার শখ ফটোগ্রাফি করা। সুযোগ পেলে মোবাইলে ধারণ করতেন প্রকৃতির ছবি। সেই ছবি দিয়ে অংশগ্রহণ করতেন বিভিন্ন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে ধরেছেন সংসারের হাল।

বাবা ফজলুর হকের ছোটখাটো ব্যবসার আয় দিয়ে চলতো তাদের ৫ ভাই বোনের সংসার। এ অবস্থায় কোনোভাবে সম্ভব হচ্ছিল না একটা ক্যামেরা কেনা, তবে দমে যাননি এমদাদ।২০১৬ সালে এটি বেসরকারি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি ক্যামেরা কেনেন এমদাদ হোসাইন। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। শুরু হয় সফলতার গল্প।

অংশগ্রহণ করতে থাকেন দেশ বিদেশের বিভিন্ন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায়। তার সাফল্যের ঝুড়িতে যুক্ত হতে থাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানের পুরস্কার। যত দিন অতিবাহিত হচ্ছিল তার সাফল্যের ঝুড়িও তত ভারি হচ্ছিল।

jagonews24'

আরও পড়ুন: ২০০ বছরের পুরোনো গফুর শাহ গায়েবি মসজিদ 

ছোট থেকে এমদাদ স্বপ্ন বুনতেন নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে একটি বাড়ি করবেন। সেই স্বপ্নকে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করেন জায়গা কিনে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাড়ি করার মাধ্যমে। যার সম্পূর্ণ অর্থ ফটোগ্রাফি থেকে উপার্জন করেছেন তিনি। ফটোগ্রাফি থেকে তার মাসিক গড় আয় লাখ টাকা।

এমদাদ হোসাইন মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের উত্তর ওয়াহেদপুরে গ্রামের ফজলুর হকের ৫ সন্তানের মধ্যে ৪র্থ। বর্তমানে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে রাষ্ট্রজ্ঞিান বিভাগে অনার্সে অধ্যায়নরত। তার সাফল্যের গন্ডি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও বিস্তৃত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ থেকে ১৫০টিরও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বিশ্বের প্রায় ১০০টিরও বেশি পত্র পত্রিকায় এবং ম্যাগাজিনে তার ছবি প্রকাশিত হয়েছে।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলো হলো-২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধু সেরা ফটোগ্রাফিতে প্রথম। ২০২১ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর ফটোগ্রাফি গ্র্যান্ড প্রজেস বিজয়ী। ২০২২ সালে কোয়ান্টম ফাউন্ডেশনের বিশ্ব মেডিটেশন দিবস ফটোগ্রাফি বিজয়ী। একই বছরে মেড ইন বাংলাদেশ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড রানার আপ। ২০২৩ সালে স্টুডেন্ট ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন অ্যান্ড প্লাস্টিক পলিউশন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

jagonews24

এছাড়া তার আর্ন্তজাতিক উল্লেখযোগ্য পুরস্কার গুলো হলো-২০১৯ সালে ইতালি হরেটিজে ফর প্ল্যানেট আর্থ ছবরি গ্র্যান্ডফানাল পুরস্কার বিজয়ী। ২০২০ সালে র্জামানি আওয়ার ডেইলি লাইভস র্আট প্রাইজ ফর ফটোগ্রাফি ক্যাটাগররি জন্য প্রথম স্থান অর্জন। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বি স্টিল মিডিয়িার ১-বছর বার্ষিকী ছবি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান বিজয়ী। ২০২২ সালে কেনিয়া ইউএনপি অনলি ওয়ান আর্থ ফটোগ্রাফি কনটস্টে প্রথম স্থান। ২০২৩ সালে অস্টিয়া ওর্য়াট ইম বল্ডি ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানসহ বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ থেকে ১৫০টিরও বেশি আর্ন্তজাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

মুহাম্মদ এমদাদ হোসাইন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে ফটোগ্রাফি থেকে আয়ের বিষয়টি জানতে পারি। প্রথমে মোবাইল ফোন নিয়ে ফটোগ্রাফি করতাম। এরপর ২০১৬ সালে একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দেশীয় বিভিন্ন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতাম। এরপর ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ শুরু করি। বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ থেকে ১৫০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছি। এরই মধ্যে বিশ্বের প্রায় ১০০টিরও বেশি পত্র পত্রিকায় এবং ম্যাগাজিনে আমার ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

jagonews24

আরও পড়ুন: প্রাচীন বাংলাসহ ১৩০ দেশের মুদ্রা সংগ্রহে তার 

এমদাদ আরও বলেন, ২০২৩ সালের উইকিপিডিয়ার আয়োজনে আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ফটোগ্রাফির আয় দিয়ে পরিবারের জন্য স্থায়ীভাবে জায়গা কিনে একটি বাড়ি করেছি। যাতে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে, যা সব আমার ফটোগ্রাফি করে আয়ের টাকা। বর্তমানে আমি ইতালি, ইউকে ও ইউএস এ আন্তর্জাতিক চারটি নিউজ এবং ফটো এজেন্সির সঙ্গে নিয়মিত কাজ করছি এবং আন্তজার্তিক প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়ে ভালো মানের প্রাইজমানি পাওয়া এবং ছবি বিক্রি করেও ভালো একটা টাকা মাস শেষ গ্রহণ করতে পারছি। মাসে প্রায় গড়ে আমার এক লাখ টাকা হয়।

বেকার তরুণ-যুবকদের উদ্দেশ্য করে মুহাম্মদ এমদাদ হোসেন বলেন, একজন আলোকচিত্রী হিসেবে আমি বলতে পারি, আলোকচিত্রী হয়ে তাদের জীবন নতুনভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রথম পথ হলো একাডেমিক শিক্ষা। কারণ এটি সঠিক অধিকার এবং প্রযুক্তি শেখার মাধ্যম। তারপরে আলোকচিত্রীরা তাদের শখের ক্ষেত্রে নিজেদের ক্রিয়েটিভ দক্ষতা বাড়াতে পারে। যা ফটোগ্রাফির মতো একটি প্রশ্নের সৃষ্টি করতে সাহায্য করতে পারে। এই সমন্বয়ে তারা অনেক পেশাদার সম্ভার করতে পারে এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য আরো উজ্জ্বল পথ তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে।

কেএসকে/জিকেএস