সফল হতে হলে লেগে থাকতে হবে
সেলিম মাহমুদ
শামীম আহমেদ। একজন তরুণ উদ্যোক্তা। ডিজিটাল মার্কেটিং, কনটেন্ট ডেভলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছেন। নিজের চেষ্টায় দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসা। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নিজের প্রতিষ্ঠিত আইএমবিডি এজেন্সি লিমিটেডে। নানা চড়াই উৎরাই পেরোতে হয়েছে তাকে। আলাপচারিতায় সে কথাই শুনিয়েছেন।
প্রশ্ন: কোন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেছেন?
উত্তর: কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক শেষ করে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে এক্সিকিউটিভ-এমবিএ তে অধ্যয়নরত ।
প্রশ্ন: কোথাও চাকরি করছেন? ছোটবেলার স্বপ্ন কি ছিল?
উত্তর: তেমনভাবে কোথাও চাকরি করা হয়নি তবে গ্র্যাজুয়েশন চলাকালীন স্কিল রিলেটেড ট্রেনিং প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানে অল্প সময় পার্ট টাইম ডিজিটাল মার্কেটিং এর ট্রেনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলাম । মূলত আমি আমার ক্যারিয়ার শুরু করি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে । যদিও আমার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার বেশিদিনের নয়।
প্রশ্ন: কি উদ্দেশ্যে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা?
উত্তর: এ ধরনের একটি ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠা করা বা এই বিষয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যাপারে আমার ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে বলে আমি মনে করি সেটি হল আমার ডিজিটাল মার্কেটিং রিলেটেড স্কিল । ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে টুকটাক ডিজিটাল মার্কেটিং রিলেটেড কাজ করার সুবাদে এই বিজনেসের সম্ভাবনা কিছুটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম তবে অনেক বেশি প্ল্যান করে যে ব্যাপারগুলো করা হয়েছে ব্যাপারটা এমনও নয় ।
শুরু থেকেই সব বিজনেসের মতো আমাদের উদ্দেশ্যও একই ছিল বিজনেসটাকে অনেক বড় করা এবং অনেক বেশি রেভিনিউ জেনারেট করা । তবে শুরুতে আমরা এই বিজনেসের সম্ভাবনা যেমনটা চিন্তা করেছিলাম মার্কেট সাইজ তার থেকেও অনেক অনেক গুন বড় হয়ে গেছে যা আমাদের কাজের অনুপ্রেরণাকে আরো অনেক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত করে দিচ্ছে ।
প্রশ্ন: শুরুটা কেমন মূলধন এবং কতজন পেশাদার নিয়ে শুরু হয়েছে আপনার উদ্যোগ।
উত্তর: ব্যবসা শুরু করার জন্য আমার কোনো মূলধন ছিল না। আমি আমার নিজের রিসোর্স দিয়েই কাজ শুরু করে দেই । আমি মূলত যে প্রতিষ্ঠানের ট্রেইনার ছিলাম সেখানে আমার পছন্দের দুইজন স্টুডেন্ট ছিল রনি আর মেহেদি ওদের দুইজনকে নিয়ে ২০১৬ সালে শুরু করি আইএমবিডি এজেন্সি । মার্কেটপ্লেস এর বাইরে একটি ইউএস এর ক্লায়েন্টের এসইও প্রজেক্ট দিয়ে শুরু হয় আইএমবিডি এজেন্সির যাত্রা ।এরপর ধীরে ধীরে প্রজেক্ট বাড়তে থাকে এবং টিম মেম্বারও বাড়াতে থাকি ।
শুরু থেকে আইএমবিডি এজেন্সির সাথে অনেকেই যুক্ত ছিল যারা আইএমবিডি এজেন্সির গ্রোথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমার মেসের ড্রয়িং স্পেস আলাদাভাবে ভাড়া নিয়ে সেখানে ডেস্ক সেটআপ করে প্রোপাইটরশিপ কোম্পানি হিসাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকি । এরপর মিরপুরে ১২০০ স্কয়ার ফিটের একটি অফিস ভাড়া নেয়া হয় যেখানে আমাদের মোট টিম মেম্বার ছিল ২২ জন আর বর্তমানে বনানী ডিওএইচএসে ৫৫ জনের সেটআপ নিয়ে ৩২০০ স্কয়ার ফিটের অফিস আমাদের । ২০২৩ সালে আমরা আর আরজেএসসিতে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হই এবং আমাদের সাথে যুক্ত হয় বিটিএস লিমিটেড ।
প্রশ্ন: কি কি বাধার সম্মুখীন হয়েছেন এবং সেগুলো কিভাবে পার করলেন?
উত্তর: ব্যক্তিগতভাবে আমি বিজনেস করতে গিয়ে বলার মতো তেমন কোন প্রতিকূলতা বা বাধার সম্মুখীন হই নাই । যতটুকু হয়েছি তা আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক মনে হয়েছে কারণ যে কোন ব্যবসায়িক উদ্যোগ শুরুর দিকে অনেক কম অ্যাপ্রিসিয়েটেড হয় । সেখানে আপনার যদি খুব সলিড মাইন্ড সেট থাকে এবং আপনি যদি খুব কনফিডেন্ট হন তাহলেই এইসব বাধা আপনার এগিয়ে যাওয়ার পথে কিছুই না । আর ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিবার কখনোই ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আমাকে সেভাবে নিরুৎসাহিত করেনি ।
ফাইন্যান্সিয়াল সিকিউরিটি ব্যাপারটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেটা নিয়ে সব পরিবারই কথা বলবে এটা খুবই স্বাভাবিক । আমার বাবা-মা বা বড় ভাই কখনোই আমাকে অন্য কাজের জন্য খুব বেশি প্রেসার দেয় নাই বা তোমাকে চাকরিই করতে হবে এ ধরনের কোন প্রেসার দেয় নাই । বরং তারা আমার বিজনেসে যতটুকু সফল হতে দেখেছে তার জন্য তারা আমার মত সমানভাবে গর্বিত এবং আনন্দিত বলে আমি মনে করি ।
প্রশ্ন: এর পেছনে কার কার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন?
উত্তর: আমার যেকোনো উদ্যোগকে অনেক বেশি এপ্রিশিয়েট করে আমার মা । আমার ক্যারিয়ার জার্নিটা এমনই হত না যদি না আমি ঢাকায় আসতাম, যেটা সম্ভব হয়েছে আমার মায়ের কারণে । কম বেশি বললে আমরা পরিবারসহ হয়ত অনেকের নাম আসতে পারে তবে সবচেয়ে বেশি বললে সেটা আমার মা ।
প্রশ্ন: আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে কী ধরনের সার্ভিস দেয়া হয়ে থাকে বা কী ধরনের প্রজেক্ট আপনারা নিয়ে থাকেন?
উত্তর: আমরা মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিস প্রদান করে থাকি এবং আমাদের টিমের একটা বড় অংশই হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটার । বিজনেস গুলো আমাদের থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর পূর্ণাঙ্গ সলিউশন, এর পাশাপাশি ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এবং ভিডিও প্রোডাকশন সহ আমাদের আরও বেশ কিছু সার্ভিস রয়েছে । যেটা আমাদের ওয়েবসাইটে www.imbdagency.com ভিজিট করলেই যে কেউ দেখতে পাবে ।
প্রশ্ন: আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা শেষে চাকরি খুঁজতে ব্যস্ত থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ভিন্ন হলেন কেন?
উত্তর: আসলে পড়াশোনার উদ্দেশ্য হল চাকরি করা, আমাদের দেশে ব্যাপারটা অনেকটা এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আর আমার পরিবারের কেউই ব্যবসায়ী না। সবাই চাকরিজীবী এবং আমার বাবা নিজেও একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন । তো আমার জন্য ব্যবসায়িক চিন্তা মাথায় আসা ব্যাপারটা অনেক অস্বাভাবিক ছিল তবে আমার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে আমি একটা ওয়ার্কার পেয়েছিলাম এটা ১৪০০ ডলারের ছিল এবং সেই সময়ের মার্কেট কমিশনের কথা চিন্তা করে আমার মাথায় আসে যদি আজকে আমি মার্কেট প্লেসের বাইরে কাজ করতে পারতাম তাহলে এই কমিশনটা দিতে হতো । যদি বলি চিন্তা শুরুটা আসলে ওইখান থেকে এরপর ধীরে ধীরে স্কোপ গুলো আনলক হতে থেকে এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপে এগিয়ে যেতে থাকে আমাদের কোম্পানি ।
প্রশ্ন: ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কেমন সাড়া পেয়েছেন?
উত্তর: বর্তমান সময়ে মার্কেটিং এর একটা বড় জায়গা করে রয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং । ছোট বড় প্রায় সব বিজনেসের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যাপারটা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে । মার্কেটে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিসের আর এই চাহিদার যোগান দিতে অনেক ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি রয়েছে । তবে অনেক এজেন্সি থাকলেও সার্ভিসের কোয়ালিটি নিয়ে রয়েছে ব্যপক অনিশ্চয়তা আর এই সার্ভিস কোয়ালিটি নিশ্চিত করতেই সর্বদা সচেষ্ট আমাদের প্রতিষ্ঠান । যার দরুন আমাদের প্রতিষ্ঠান একটি আলাদা সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলে আমাদের কখন ক্লায়েন্টের ঘাটতি ছিল না। কোম্পানির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমরা সার্ভিস প্রদান করে আসছি।
প্রশ্ন: যারা এমন উদ্যোগ নিতে চায় তাহলে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর: নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বলব বিজনেস মানেই রিস্ক তবে সেটা হতে হবে ক্যালকুলেটিভ রিক্স । অনেক বেশি শিখতে হবে, শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং লেগে থাকতে হবে তাহলে আমি মনে করি অবশ্যই সফল হওয়া সম্ভব ।
প্রশ্ন: আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে একজন উদ্যোক্তা হওয়া কতটুকু চ্যালেঞ্জিং?
উত্তর: আমার মতে বর্তমান সময়ে উদ্যোক্তা হওয়া ব্যাপারটা অনেক বেশি ট্রেন্ডিং এবং চ্যালেঞ্জিং। আর গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারটা আসলে আপেক্ষিক তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তা হওয়া ব্যাপারটা অনেক কম গ্রহণযোগ্য হয় আমাদের সমাজে এবং পরিবারের কাছে । বিশেষ করে যে সকল সোসাইটির সাকসেসফুল মানুষজন হিসেবে যারা গণ্য তারা অধিকাংশই চাকরিজীবী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কখনো ব্যবসা করেননি বা করে কখনো সফল হন তাদের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হওয়া ব্যাপারটি খুবই চ্যালেঞ্জিং।
প্রশ্ন: আপনার রেগুলার ক্লায়েন্ট কেমন?
উত্তর: এ যাবৎ আমরা তিনশ’র অধিক ক্লায়েন্টকে সার্ভিস প্রদান করেছি যার মধ্যে অনেক বিজনেস রয়েছে যাদেরকে মাসিক চুক্তিতে সার্ভিস প্রদান করছি । আমাদের দেশি ও বিদেশী ক্লায়েন্টের রেশিও প্রায় ৬০% -৪০% । আমাদের নিজস্ব সিআরএম এবং অ্যাপের মাধ্যমে আমরা ক্লায়েন্টের সমস্ত প্রজেক্ট ম্যানেজ করে থাকি। আমরা আমাদের সার্ভিস গুলোকে এমন ভাবে ডিজাইন করেছি যার দরুন ক্লায়েন্ট অনেকটা আমাদের সার্ভিস এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
এইচআর/জিকেএস/এএসএম