দুই পা ছাড়াই এভারেস্ট জয় তার
ইচ্ছাশক্তি যে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে সাফল্য এনে দিতে পারে তার আরেকবার প্রমাণ দিলেন হরি। ব্রিটিশ গোর্খা সেনা হরি বুধমাগর। কৃত্রিম পা দিয়ে ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার উচ্চতার পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন তিনি। ৪৩ বছর বয়সী হরি বুধমাগর গত ১৯ মে বিকেলে এভারেস্টের শৃঙ্গে ওঠেন।
২০১০ সালে আফগানিস্তান-ব্রিটিশ গোর্খার হয়ে যুদ্ধে দুই পা হারান হরি। তবে দমে যাননি তিনি। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিলেও অবসর নেননি স্বপ্নপূরণে। হরি বর্তমানে ইংল্যান্ডের ক্যান্টারবেরিতে বসবাস করেন। তবে তার জন্ম নেপালে। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন।
হরি বলেন, ছোটবেলায় তিনি দেখেছেন শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের কত কথা শুনতে হয় মানুষের কাছ থেকে। ফলে তারা মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েন। অনেকে এমন মানুষদের মনে করতেন পূর্বজন্মের পাপের ফল এবং তারা পৃথিবীর বোঝা। ১৯ বছর পর্যন্ত হরি তার জন্মস্থানে কাটিয়েছেন। এরপর যোগ দেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে।
আরও পড়ুন: লেখাপড়ার ফাঁকে জুসবার দিয়ে সাবলম্বী ফাহাদ
যুদ্ধে পা হারানোর পর তার সেই কথাগুলো মনে পড়তো খুব। সেসময় অতিরিক্ত মদ্যপান করতেন। এমনকি আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেছেন কয়েকবার। তবে সেখান থেকে ফিরে নিজের স্বপ্নপূরণের পথে হাঁটতে থাকেন। নেপালের বাসিন্দা হওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই পরিচিত ছিলেন এভারেস্টের সঙ্গে। তখনই ইচ্ছা ছিল কোনো একদিন তিনিও এভারেস্ট জয় করবেন।
২০১৮ সালে পরিকল্পনা শুরু করেন এভারেস্টে ওঠার। কিন্তু বাধ সাধলো নেপালের আইনকানুন। ২০১৭ সালে নেপাল সরকার একটি আইন প্রণয়ন করে। তাতে বলা হয়, অন্ধ , দুই পা না থাকা ব্যক্তি এবং একা কেউ এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে পারবেন না। পরে এ নিয়ে নেপালের সুপ্রিমকোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করা হলে আইনটি বাতিল করা হয়।
এরপর এ বছরের শুরু থেকেই এভারেস্ট জয়ের প্রস্তুতি শুরু করেন। ১৭ এপ্রিল এভারেস্টে আরোহণ শুরু করেন। অবশেষে জয় করেন এভারেস্ট, জয় করেন স্বপ্ন। এভারেস্টের নানা প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় তা ভালোভাবে রপ্ত করেছিলেন।
নেপালের পর্যটন বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, যুদ্ধে ২ পা হারানো ৪৩ বছর বয়সী হরি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। দুটি কৃত্রিম পা দিয়ে এভারেস্ট জয় করা তিনি প্রথম ব্যক্তি।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, এনডিটিভি
কেএসকে/জিকেএস