আজকের এই দিনে
ম্যাক্সিম গোর্কির জন্ম
ম্যাক্সিম গোর্কি ছিলেন একজন রুশ, সোভিয়েত লেখক, সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদী সাহিত্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী। তিনি নিজেই তার সাহিত্যিক ছদ্মনাম হিসেবে ‘গোর্কি’ অর্থাৎ ‘তেতো’ নামকে বেছে নেন। তার অনেক বিখ্যাত রচনার মধ্যে ‘মা’ একটি কালজয়ী উপন্যাস।
ম্যাক্সিম গোর্কির পুরো নাম আলেক্সেই ম্যাক্সিমোভিচ পেশকভ। তার জন্ম ১৮৬৮ সালের ২৮ মার্চ রুশ সাম্রাজ্যের নিঞ্জি নভগরদ এলাকায়। গোর্কির বাবা মাক্সিম পেশকভ ও মায়ের নাম ভারিয়া। ৯ বছর বয়সে পিতৃমাতৃহীন হন। ১৮৮০ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান এবং দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পায়ে হেঁটে সমগ্র রাশিয়া ভ্রমণ করেন।
১৮৮২ সালে সাহিত্য রচনা শুরু করেন। তিনি জেহুদিয়েল কামিদা ছদ্মনামে লিখেছিলেন। ম্যাক্সিম গোর্কীর সর্বপ্রথম রচনা গল্প ‘মাকার চুদ্রা’। সেটি প্রকাশিত হয় তিবিলিসির সংবাদপত্র কাভকাজে। যেখানে বেশিরভাগ সময় ককেশীয় রেলওয়ে কর্মশালার জন্য তিনি বেশ কয়েক সপ্তাহ কাজ করেছিলেন। সাংবাদিক হিসেবে প্রাদেশিক সংবাদপত্রে কাজ করছিলেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন গোর্কি। কিন্তু স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। প্রথম কারণ, তার নানা কোনো খরচ দিতে রাজি হননি। দ্বিতীয় কারণ, নানার বাড়িতে পড়াশোনার কোনো পরিবেশই ছিল না বা পড়াশোনার প্রয়োজনীয়তার কথা কেউ ভাবত না। আর তৃতীয় কারণ হচ্ছে, মামারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ নিয়ে এমন নারকীয় পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিলেন যে কিশোর গোর্কির পক্ষে বাড়িতে তিষ্টানো ছিল খুব কঠিন। ফলে তিনি বখাটেদের সঙ্গে মিশে ঘুরে বেড়ানোর পথটাকেই বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলের বাঁধন ছিন্ন হলেও কোনো এক অজ্ঞেয় কারণে বইয়ের প্রতি তার আসক্তি তৈরি হয় এবং তিনি নিজে নিজেই লেখাপড়া করতে থাকেন। সম্পূর্ণই স্বশিক্ষিত এক মানুষ বলা যায় গোর্কিকে।
প্রথাগত রচনার বাইরে গোর্কি তার লেখায় প্রাধান্য দেন সমাজের নিচুশ্রেণীর খেঁটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের জীবনের গল্পকে। ১৮৯৮ সালে তার লেখা প্রবন্ধ ও গল্প নিয়ে একটি সংকলন রেখাচিত্র ও কাহিনি প্রকাশিত হয়। ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয় তার সার্থক উপন্যাস ফোমা গর্দিয়েভ। ১৯০০ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত গোর্কির লেখা আরও আশাবাদী হয়ে ওঠে। ১৯০১ সালে বিপ্লবী ছাত্রদের হত্যার করার জন্য প্রতিবাদ জানিয়ে গোর্কি রচনা করলেন ঝোড়ো পাখির গান নামের কবিতা। ১৯০৭ সালে তিনি রচনা করেন তার বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ‘মা’। তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য পাঁচবারের মনোনীত হয়েছিলেন।
স্ট্যালিনবাদীদের উপর দমন-পীড়া বৃদ্ধির পেতে থাকে এবং ১৯৩৪ সালের ডিসেম্বরে সের্গেই কিরভকে হত্যার পরে মস্কোর কাছে গোর্কিকে তার বাসায় অঘোষিতভাবে গৃহবন্দী করা হয়েছিল। ১৯৩৪ সালের মে মাসে গোর্কির ছেলে ম্যাক্সিম পেশকভের আকস্মিক মৃত্যুর পরে ম্যাক্সিম গোর্কি ১৯৩৬ সালের ১৮ জুন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
কেএসকে/জিকেএস