ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

দেড় সহস্রাধিক বন্ধুর মিলনমেলা

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল | প্রকাশিত: ১০:৪৪ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০২২

বন্ধু, কেমন আছো? আমি সারাবাংলা-৮৭, ঝিনাইদহ।
ভালো আছি বন্ধু, আমি সারাবাংলা-৮৭, কক্সবাজার।
তোমরা কতজন এসেছো?
আমরা ৬২ জন, আর তোমরা?
আমরা ২০ জনের বেশি এসেছি।
ওকে বন্ধু, সারাদিন আজ খুব মজা হবে।

এ কথোপকথন পঞ্চাশোর্ধ্ব দুই প্রবীণের। তারা কেউ পূর্ব পরিচিতি নয়। তবে যে উপলক্ষকে সামনে রেখে তারা আজ সকালে রাজধানীর হাজারীবাগের ম্যাটাডোর অরচার্ড রিসোর্ট প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছিলেন, সে অনুষ্ঠানটিই তাদের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ হওয়ার সুযোগ করে দেয়। তাদের কথাবার্তা ‘তুমি’ দিয়ে শুরু হলেও ‘তুইতে’ নামতে কয়েক মিনিটও লাগেনি। কারণ তাদের সবার একটাই পরিচয় ‘সারাবাংলা-৮৭’।

jagonews24

৩৫ বছর আগে ১৯৮৭ সালে দেশের বিভিন্ন বোর্ড থেকে এসএসসি পাস করেছিলেন তারা। প্রায় তিন যুগ আগের সেই কিশোররা এখন বলতে গেলে প্রবীণ। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে তাদের কেউ ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, চিকিৎসক, গায়ক-গায়িকা, সেনা অফিসার বা সাংবাদিকতা পেশায় রয়েছেন।

jagonews24

প্রায় তিন যুগ আগে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে ওঠা ‘সারাবাংলা-৮৭’ নামে সংগঠনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীতে ছুটে আসেন এই মানুষগুলো। কাকডাকা ভোর থেকে রাত অবধি চুটিয়ে গল্প, স্মৃতিচারণ, ছবি তোলা, মঞ্চের সামনে গানের তালে নেচেগেয়ে আনন্দে সময় কাটান। মধ্যবয়সী এ মানুষগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন তরুণ-তরুণী।

jagonews24

সারাবাংলা-৮৭ এর আহ্বায়ক ওমর ফারুক জানান, ১৯৮৭ সালে সারাদেশ থেকে যারা এসএসসি পাস করেছিলেন তাদের নিয়ে একটি মহামিলনমেলার আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল গত তিনমাসের বেশি সময় ধরে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার ৮৭ গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। সারাবাংলা-৮৭’র অ্যাডমিন প্যানেলের বেশ কয়েকজনের দিনরাত্রি পরিশ্রমের ফলে এমন একটি আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে।

jagonews24

অনুষ্ঠানস্থলে দেখা যায়, রেজিস্ট্রেশন করে সকালের নাস্তা খেয়ে মঞ্চের সামনে অবস্থান নেন সবাই। সকাল ১০টায় উদ্বোধন শেষে শুরু হয় সারাবাংলা-৮৭ এর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সংস্কৃতি অনুষ্ঠান। নেচেগেয়ে মঞ্চ মাতান শিল্পী ও উপস্থিতজনেরা।

কেউ কেউ ঘুরে ঘুরে সারাদেশের বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হন। কেউ রিসোর্টের বিভিন্ন স্পটে বন্ধুদের নিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউবা গরমে ক্লান্ত হয়ে নেমে পড়েন সুইমিং পুলের পানিতে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলে ঢাকাইয়া খাসির কাচ্চি ও মুরগির রোষ্ট খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন। খাওয়ার পর্ব শেষে আবার শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

jagonews24

এ সময় মঞ্চে একজনকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তিনি কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্ল্যাহ রফিক। তাকে মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বলা হচ্ছিল- ‘তিনি সংসদ সদস্য হলেও এসেছেন সারাবাংলা-৮৭ পরিচয়ে।’ এ সময় সংসদ সদস্য কান ধরে লজ্জিত হয়ে বলেন, ‘তিনি সংসদ সদস্য পরিচয়ে নন ৮৭’র বন্ধু হিসেবে এসেছেন।’

সংসদ সদস্য জানান, শিগগির ‘কক্সবাজার-৮৭’ গ্রুপের আয়োজনে কক্সবাজারে বন্ধুদের মিলনমেলা বসবে। এতে তিনি সবাইকে আমন্ত্রণ জানান।

jagonews24

দুপুরের পর সংগীতশিল্পী মনির খান মঞ্চে উঠে বলেন, এত বিপুল সংখ্যক ৮৭’র বন্ধুদের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে অভিভূত। বলেন, বন্ধুরা একেকজন যেন অক্সিজেন সিলিন্ডার। একটা বয়সের পর সন্তানরা ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারে না। তাই এসব বন্ধুদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

মনির খান জানান, তিনি তার জেলা থেকে ৬২ জন বন্ধুকে নিয়ে এ অনুষ্ঠানে এসেছেন।

এরপর আনন্দ-উৎসবে সকাল গড়িয়ে দুপুর এরপর বিকেল হয়। একপর্যায়ে দিনাজপুর ও নোয়াখালীর বন্ধুরা আগামী দুই একমাসের মধ্যে তাদের উদ্যোগে মিলনমেলা আয়োজনের কথা জানিয়ে সবাইকে দাওয়াত দেন।

jagonews24

সন্ধ্যা নামার কিছুক্ষণ আগে থেকে শুরু হয় র‌্যাফেল ড্র। ৬৪ জন বন্ধু পান র‌্যাফেল ড্র’র পুরস্কার। ইউএস-বাংলার সৌজন্যে ঢাকা-থাইল্যান্ড-ঢাকা বিমানের টিকিটের প্রথম পুরস্কার তুলে দেওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানে ভাঙ্গনের সুর বেজে উঠে। বিদায়বেলায় বন্ধুদের অনেকের চোখ ছলছল করে ওঠে। আপাতত বন্ধুকে বিদায় জানানোর সময় নিবিড় আলিঙ্গন করে বলে উঠে ‘আবার কবে দেখা হবে বন্ধু।’

এমইউ/জেডএইচ/