কুকুরের জন্য পথশিশুদের শর্তহীন ভালোবাসা
তারা পথশিশু। কারো বাবা নেই তো কারো মা। ফুটপাতই তাদের ঘরবাড়ি, রাস্তার ধারে কিংবা ময়লা-আবর্জনার স্তুপে পলিথিন কিংবা প্লাস্টিকের ভাঙরি সামগ্রী দিনভর সংগ্রহ করেন তারা। সন্ধ্যায় সেগুলো বিক্রি করেন কোনো দোকানে।
রাজধানী ঢাকার পথশিশুদের নিয়মিত পেশা কিংবা বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এটিই। কিন্তু এই পথশিশুরাই দেখিয়ে যাচ্ছেন শর্তহীন এক ভালোবাসার অনন্য নজির। রবীন্দ্র সরোবরে সন্ধ্যা হলেই জড়ো হন তারা। এই শিশুরা বলছেন, মানুষের সর্বোত্তম বন্ধু হচ্ছে কুকুর। শুধু তাই নয়; এই কুকুরকে ঘিরেই যেন তাদের পরিবার।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক ডেইলি মেইলে কুকুরের প্রতি রবীন্দ্র সরোবরের সেই পথশিশুদের ভালোবাসা নিয়ে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকার রাস্তায় সারাদিন পলিথিন কিংবা নষ্ট প্লাস্টিক সামগ্রী কুড়াতে ব্যস্ত থাকেন বাবা-মার আদর ভালোবাসা বঞ্চিত একদল পথশিশু। কিন্তু এই শিশুরা সন্ধ্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন কুকুরের সেবা যত্নে। কুকুরের সহচর্যে ভুলে যান বাবা-মা না থাকার দুঃখ।
সারাদিনে এই ছেলে-মেয়েরা যা আয় করেন তার বেশিরভাগই ব্যয় করেন কুকুরকে খাওয়াতে। শুধু কি তাই; এই প্রাণীই যেন তাদের বাবা-মার স্পর্শ দিচ্ছে। ঘরে ফেরার উপায় নেই যাদের; তারা রাত কাটিয়ে দেন প্রভূভক্ত এসব কুকুরের সঙ্গে। প্রচণ্ড শীতে একে অপরকে জড়িয়ে উষ্ণ রাখার চেষ্টা করেন শিশুরা।
জলাতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে কুকুর হত্যারও অনুশীলন চলে যেখানে; সেই ঢাকায় এই প্রাণীর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছে পথশিশুরা। গত নভেম্বরে বাংলাদেশে কুকুর হত্যাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাণী সংরক্ষণকারী সংস্থা `অভয়ারণ্য` এসব কুকুরকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে আসছে। এজন্য তারা একটি কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে।
কুকুরকে সর্বত্রই ত্যাগ করাই যেখানে সংস্কৃতি; সেখানে এই কুকুরের অভিভাবক কিংবা বন্ধু হয়ে পাশে বসবাস করছে ছোট্ট ছোট্ট কিছু পথশিশু। এই প্রাণীটির সঙ্গে তারা ভাগাভাগি করছে তাদের সুখ-দুঃখ।
শুধু কি তাই; যেসব পথশিশু স্কুলে যেতে পারেন না রবীন্দ্র সরোবর হয়ে উঠেছে তাদের আবাস। যেখানে তারা খেলতে পারে, হাসতে পারে মন খুলে, নিরাপদ বোধ করে সর্বদা এবং যখন ইচ্ছে ঘুমাতে পারে।
সরোবরে থাকা ওসমানের রয়েছে বেশ কয়েকটি কুকুর। এদের নাম দিয়েছে টাইগার। ওসমান রাস্তায় প্রত্যেকদিন নষ্ট প্লাস্টিক সামগ্রী ও পলিথিন কুড়ায়। কিন্তু তখনো তার পিছু ছাড়ে টাইগাররা। এই টাইগাররা কখনো ডানপাশে তো কখনো বামপাশ ধরে হেঁটে চলে ওসমানের সঙ্গে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে রবীন্দ্র সরোবরের পাশে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ওসমান ও তার সঙ্গীদের।
এসআইএস/এসএম