ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

স্মৃতির শহর ‘ঢাকা কেন্দ্র’

রায়হান আহমেদ | প্রকাশিত: ০৩:১৬ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জ রোডের দিকে অগ্রসর হলে হাতের বাঁ পাশে মোহিনী দাস লেনে দেখা মিলবে একটি চৌকোনা ভবন।ঢাকার অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য ও ঐতিহ্যের সংগ্রহশালা এই ঢাকা কেন্দ্র। ঢাকার ৪০০ বছরের ইতিহাস যেখানে হাজারখানেক বইয়ে লিপিবদ্ধ। এছাড়াও আছে ঢাকাইয়াদের ঐতিহ্যের নানা জিনিসপত্র। যা আদি ঢাকার সোনালি অতীতকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি এটি ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।

সরেজমিনে ঢাকা কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, দোতলা এই ভবনের নিচ তলায় মাওলা বক্স চক্ষু হাসপাতাল। যেখানে ১০ টাকায় চোখের চিকিৎসা পাওয়া যায়। ১৯৮৯ সালে ১০ শয্যার চক্ষু হাসপাতাল চালু হয়। আছে শিশুদের ছবি আঁকার স্কুল। দোতলায় রাখা সর্দার পরিবারের ব্যবহৃত নানা রকম মাটিরহাঁড়ি-পাতিলসহ ব্যবহার্য জিনিসপত্র। উপরের একটি অংশজুড়ে গ্রন্থাগার ও সুপরিসর পাঠকক্ষ। অপর অংশে আছে সংগ্রহশালা, অডিটরিয়াম, সুদৃশ্য বাগান এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য।

jagonews24

এছাড়াও রয়েছে মাওলা বখশ সরদার পারিবারিক গ্যালারি, পঞ্চায়েত গ্যালারি, ঢাকাবিষয়ক বই বিক্রয়কেন্দ্র, কমরেডওসমান গনি মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, সাহিত্যিক ও লেখক মুনতাসীর মামুন ঢাকা কর্নার, ঢাকা কেন্দ্র প্রকাশনা কর্ণার, বিলকিছ বানু স্মৃতিমিলনায়তন, বিজয় চত্বর, ফজলুল করিম তারা সংস্কৃতি চত্বর, সুদৃশ্য বাগান, মিলি শিশু চত্বর, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন স্মৃতিচত্বর ইত্যাদি।

ঢাকা কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে এটির লাইব্রেরি। যেখানে রয়েছে প্রায় ছয় হাজার বই। লাইব্রেরিতে আবদুল করিমের ‘ঢাকাইমসলিন’, আবু যোহা নূর আহমদের ঊনিশ শতকের ‘ঢাকার সমাজজীবন’, কেদারনাথ মজুমদারের ‘ঢাকার বিবরণ ও ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের ইতিহাস’, নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তির ঢাকা’, নির্মল গুপ্তের ‘ঢাকার কথা’, যতীন্দ্রমোহন রায়ের ‘ঢাকার ইতিহাস’, রফিকুল ইসলামের ‘ঢাকার কথা’, সত্যেন সেনের ‘শহরের ইতিকথা’, হরিদাস বসুর ‘ঢাকার কথা’ বইয়ের মতো অসংখ্য বিখ্যাত বই আছে এখানে।

jagonews24

ঢাকার অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে চর্চা বা গবেষণার জন্য ঢাকা কেন্দ্র একটি আদর্শ স্থান। এছাড়া ঢাকা বিষয়ক তথ্যসংবলিত পত্রিকা, সাময়িকীর সংশ্লিষ্ট অংশ সংগ্রহ করে একত্রে সন্নিবেশ করা আছে। এখানে এমন ৫০টির মতো পেপার ক্লিপিং ভলিউম আছে।

ঢাকা কেন্দ্রে ঘুরতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফনান আহমেদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে এতো সুন্দর মনোরম পরিবেশ ও ঐতিহ্যময় একটি জায়গা আগে জানা ছিল না। পুরান ঢাকার কোলাহল আর ব্যস্ত অলিগলির মধ্যে এই বাড়িটি যেন একটু স্বস্তি দেয়। প্রায়ই এখানের বাগানে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেওয়া হয়। লাইব্রেরিতে খুঁজে খুঁজে বই পড়া হয়।

jagonews24

ঢাক কেন্দ্রের লাইব্রেরির তত্ত্বাবধারক আনিস আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা কেন্দ্রে শুধু ঢাকা বা দেশের মানুষই নয়, বাংলাদেশ ও ঢাকার ইতিহাস জানতে সুদূর ফ্রান্স, ভারত, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া থেকেও দর্শনার্থী এসেছেন। এখানে যে বই আছে সেগুলোর প্রায় অনেকগুলো বাইরের লাইব্রেরিতে পাওয়া যায় না। তাই বিভিন্ন গবেষণার কাজ করতে এখানে সবাই বই পড়েন নোট করেন।

জানা যায়, ঢাকার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির চর্চাকে সুদূরপ্রসারী করার লক্ষ্যে মাওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে ঢাকা কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রের এইসব কার্যক্রম পরিচালিত হয় মাওলা বখ্শসর্দার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে। ট্রাস্টি হিসেবে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন মাওলা বখ্শ সরদারের ছেলে ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখ্শ।

কেএসকে/জিকেএস

আরও পড়ুন