ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

এ যেন মৌমাছির গ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:১৮ এএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

মধু সর্দি-কাশি ছাড়াও শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রাণালী পরিস্কার করে শরীর ঝরঝরে এবং ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে মধুর জুড়ি নেই। এছাড়া আয়ুর্বেদ ওষুধ সেবনে মধু অপরিহার্য। কিন্তু ভেজালের ভিড়ে খাঁটি মধু পাওয়া কঠিন হয়ে গিয়েছে বর্তমান সময়ে।

`মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচিনাচি-দাঁড়াও না একবার ভাই/ ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময়তো নাই।` নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের কবিতায় উল্লেখিত এই মৌমাছিরা হচ্ছে প্রাকৃতিক মৌমাছি। পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক কিছুই। স্বার্থপর মানুষের অবিবেচনায় অন্যান্য অনেক পতঙ্গের মতো হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাকৃতিক মৌমাছিরাও। উড়ে চলা মৌমাছিদের ঝাঁক সহজে এখন আর খুব একটা দেখা য়ায় না। বাড়ির আঙিনায় চোখে পড়ে না গাছে ঝুলে থাকা ঢাউস কোনো মৌচাক।

MOU-MASI
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্যি এমন উক্তিকে উড়িয়ে দিয়ে রাজবাড়ী জেলা সদরের রামকান্তপুর ইউনিয়নের বাল্লাহুরিয়া গ্রামের জমসের মোল্লার বাড়িতে তিনটি আম ও দুটি নারকেল গাছে ছোট-বড় ৪৪টি মৌচাক দেখা গেছে। তবে জমসের মোল্লার বাড়ি ছাড়াও পুরো গ্রামে প্রায় ১ থেকে ১২০টির অধিক মৌমাছির চাক রয়েছে। তাছাড়া ওই এলাকায় খোলা মাঠগুলোতে ব্যাপক সরিষার আবাদ হওয়াতে এ মৌমাছির আনাগোনা বেশি হয় বলে অনেকের ধারণা।

শুধু এ বছরই না বিগত কয়েক বছর যাবৎ জমসের মোল্লার বাড়িসহ আশপাশের বাড়িতে মৌমাছি বাসা বাঁধে। গত বছর জমসের মোল্লার বাড়িতে ৭৩টি মৌচাক দেখা গিয়েছিল। এই মৌচাকগুলো দেখতে দূর দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এই মৌসুমে ভীড় জমান।

MOU-MAS

প্রাকৃতিক বন আগের মতো নেই। সেখানে ফুলও ফোটে কম। ফলে গুনগুনিয়ে মধু আহরণের সুযোগও সংকুচিত হয়েছে মৌমাছিদের। চাক বাঁধার জায়গা আর কোথায় মৌমাছিদের। মাঠের ধারের সেই বড় বড় বৃক্ষতো কবেই গ্রাস করেছে ইটভাটা। যেটুকু বন আছে তাও নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে। জমিতে প্রাণঘাতী কীটনাশকের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। ফলে শ্রমী ক্ষুদ্র প্রাণিটি জীবন ও প্রজনন রক্ষায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না।

এক সময় জেলার অনেক গৃহস্থ বাড়িতে চোখে পড়তো মৌসুমে-অমৌসুমে মৌমাছির চাক। প্রবাদ আছে মৌমাছিরা নাকি গ্রামের মানুষের ভালো-মন্দ বুঝে চাক বাঁধতো। আর মৌমাছিরা যখন উড়ে যেত তখন গৃহস্থ বধুরা ঢেঁকিতে পাড় দিতো। যাতে মৌমাছিরা ঢেঁকির শব্দ শুনে তাদের বাড়িতে চাক বাঁধে।

MOU-MASI
জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছের ডাল ও দালান ঘরের কার্নিশে মৌচাকের দেখা অহরহ মিললেও এখন মৌচাক খুঁজে ফিরতে হয় এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে। স্থানীয় মধু ব্যবসায়ীরা ধোঁয়া দিয়ে মৌমাছি তাড়িয়ে মধু সংগ্রহ করলেও ৮০ ভাগ মধুই নষ্ট হয়ে যায়। প্রাকৃতিক এই মৌমাছি রক্ষায় এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও মধু সংগ্রহে সাবধানতা অবলম্বন না করলে আর একটি প্রজাতি আমাদের সমাজ থেকে বিল্লুপ্ত হয়ে যাবে।

জমসের মোল্লা জাগো নিউজকে জানান, আমার বাড়িতে তিনটি আম ও দু`টি নারকেল গাছে মোট ৪৪টি মৌমাছির চাক বাসা বেঁধেছে। এগুলো প্রকৃতির নিয়মে আসে, আবার চলে যায়। এরা পৌষ মাসের প্রথমে আসে এবং চৈত্র মাসের শেষের দিকে চলে যায়। এই তিনটি মাসে আমার বাড়ির চারপাশে সরিষা ক্ষেত আছে সেই সরিষা ক্ষেত থেকে এরা মধু সঞ্চয় করে। প্রতিদিন শত শত লোক এ মৌচাক দেখতে আসে। আজ তিন বছর যাবৎ আমার বাড়িতে এভাবেই মৌমাছি চাক বানায়।

রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. নুরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, মৌমাছি একটি সামাজিক প্রাণি। এরা সাধারণত ঝাঁকে ঝাঁকে চাক তৈরি করে। প্রতিটি চাকের মধ্যে একটি রানী মৌমাছি এবং প্রচুর সংখ্যক পুরুষ ও শ্রমিক মৌমাছি থাকে। প্রতিটি চাকে ৫০-৬০ হাজার মৌমাছি থাকে। শ্রমিক মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে ও পুরুষ মৌমাছিরা অলস সময় কাটায় এবং রানী মৌমাছি বংশ বৃদ্ধির জন্য ডিম পারে। রানী মৌমাছির সংখ্যা যখন বেড়ে যায় একটা দল বা গ্রুপ নিয়ে একটা করে মৌচাক তৈরি করে। এই কারণে ওই গ্রামে ৪৪টি ও সারা গ্রামে আরও বেশি মৌচাক বাসা বেঁধেছে।

এখানে ফুলের সমারোহ, সরিষা ক্ষেত ও রানী মৌমাছির সংখ্যা বেশি আছে। এজন্য তারা বেশি পরিমাণ মৌচাক তৈরি করেছে। প্রকৃতিতে এরা বড় ধরনের পরাগায়নের অবদান রাখতে পারে।

এমজেড/আরআইপি