শাড়ি বেচে লাখপতি ১০২ বছর বয়সী নারী
কোনো কাজে সফল হতে প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায়। বয়স কোনো বাধাই হতে পারে না কারো সাফল্যের। পরিশ্রমের জেরেই একজন মানুষ সফলতার শীর্ষে পৌঁছে যান। সেকথা আবারও প্রমাণ করলেন ১০২ বছরের এক বৃদ্ধা।
এই বয়সে এসে নিজের অদম্য ইচ্ছে ও মনের জোরকে সঙ্গী করে তিনি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। হয়েছেন লাখপতি। তিনি কেরালা ত্রিশূরের বাসিন্দা পদ্মাবতী নায়ার। এই বয়সেও তিনি প্রতিদিন তিন ঘন্টা করে কাজ করেন। নিজেই করেন শাড়ির ডিজাইন ও অলংকরন এর কাজ। তার দক্ষ হাতে তৈরি হয় একের পর এক শাড়ি।
তার কাজে তার মেয়ে এবং পুত্রবধূরা সাহায্য করেন। তারা শাড়ি নিয়ে আসেন। আর সেই শাড়ির উপরে নকশা আঁকা থেকে রং করা, ডিজাইন করা সবকিছুই করেন পদ্মাবতী। দারুন সব ডিজাইন রং তুলিতে এঁকে চলেছেন শাড়িতে।
পদ্মাবতীর জন্ম ১৯২০ সালে। সেই হিসাবে তার বয়স এখন ১০২ বছর। এই বয়সেও দিব্যি কাজ করে চলেছেন। তার জীবনের মূলমন্ত্র এটাই হলো, কাজে ব্যস্ত থাকুন, এবং অন্যের জীবনে কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না।
পদ্মাবতী তার দিন শুরু করেন সকাল সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে। সকালের চা এবং প্রাতঃরাশ সেরে নেন সাড়ে ৭টার মধ্যেই। এসময়টাতে তিনি খবরের কাগজ পড়তে পছন্দ করেন। এরপর সকাল সাড়ে ১০টা বাজলেই কাজের ডেস্কে চলে যান। সেখানে কাজ করেন দুপুর ১টা পর্যন্ত। পুরো সময়টা তিনি মগ্ন থাকেন তার পেইন্ট এবং ব্রাশের জগতে।
শাড়ি ডিজাইন করা সময়সাপেক্ষ কাজ। তারপরও তিনি খুবই যত্ন নিয়ে কাজগুলো করেন। সবচেয়ে বেশি সময় লাগে সিল্কের শাড়ি পেইন্ট করতে। সুতি, খাদি এবং সিল্কের কাপড়ের উপর তিনি পেইন্ট করেন। লতাপাতা ফুল থেকে শুরু করে মানুষের প্রতিচ্ছবিও আঁকেন মনের মাধুরী মিশিয়ে।
তার কাজ থেকে যা উপার্জন হয় সেই অর্থ নিজের জন্য খরচ করেন না। সব অর্থ তিনি তার নাতির জন্য ব্যয় করেন। বয়সে তিনি এত বেশি হলেও মানসিকতা একেবারে আধুনিক। সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি তিনি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। তার তৈরি একটি শাড়ির দাম প্রায় ১১ হাজার টাকা। আর হাতের কাজের ওড়নার দাম প্রায় ৩ হাজার টাকা।
পদ্মাবতীর রয়েছে পাঁচ সন্তান। তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত। আরও রয়েছে সাত নাতি-নাতনি। তাদেরও ছেলেমেয়ে আছে। সবাইকে নিয়ে পদ্মাবতীর দিন কাটে খুব আনন্দেই। এছাড়া তিনি নিজের কাজে ডুবে থাকেন বেশিরভাগ সময়। হাতের কাজের প্রতি তার ঝোঁক ছিল খুব ছোটবেলা থেকেই।
পদ্মাবতীর মা বাড়িতে তাদের জন্য জামাকাপড় সেলাই করতেন। সেগুলোর উপর হাতের সেলাই এবং পেইন্ট করে দিতেন। সেখান থেকেই তিনি শিখেছেন পেইন্ট করা। এরপর নিজের জন্য মাঝে মাঝে কাপড়ে পেইন্ট করতেন। তবে তা থেকে যে আয় করবেন সে ভাবনা আসেনি কখনো।
নাতিদের উৎসাহে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। অল্প দিনেই তার কাজ মানুষের মনে জায়গা করে নেয়। পদ্মাবতীর একেকটি শাড়ি শেষ করতে সময় লাগে প্রায় এক মাস। শাড়িতে আঁকাআঁকির কাজটা তিনি নিজে হাতেই করেন। পরিবারের সবাই তাকে সাহায্য করেন সব কাজে।
সূত্র: বেটার ইন্ডিয়া
কেএসকে/জিকেএস