দৃষ্টিশক্তি হারিয়েও আজ সফল উদ্যোক্তা তিনি
বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর তখন বিরল এক রোগ ধরা পড়ে গীতার। রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা, এটি একটি বিরল জেনেটিক ব্যাধি। ধীরে ধীরে দৃষ্টি হারাতে থাকেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান। এর পরের গল্প আরও ভয়ানক। চোখে দেখতে না পারার কারণে পড়ালেখায়ও বাধা আসে তার।
তবে গীতা থেমে থাকেননি। সবসময় চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন। তাই ব্রেইল পদ্ধতিতেই স্নাতক শেষ করেছেন। এখন গীতার বয়স ৩৯। স্বামী, সংসার নিয়ে খুব সুখেই আছেন। তবে এরই মধ্যে নিজের একটি পরিচয়ও তৈরি করেছেন। হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা।
কেরালার ত্রিশুরের বাসিন্দা গীতা সালেশ। শারীরিক অক্ষমতা তার লক্ষ্য অর্জনে বাধা হতে পারেনি। গীতা অনলাইনে একটি ব্যবসা চালান। যেখানে ঘরে তৈরি খাদ্যপণ্য যেমন- ঘি, আচার এবং হলুদ দিয়ে তৈরি একটি সুপারফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রি করেন।
২০২০ সালে তার স্বামী সালেশ কুমারের সঙ্গে পরামর্শ করে ‘গীতা’স হোম টু হোম’ চালু করেন। তবে ব্যবসা চালানোর মতো কোনো জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা ছিল না গীতার। তারপরও নিজেদের ওপর ভরসা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করেছিলেন। এর আগে অবশ্য গীতা একটি রেস্তোরাঁ চালাতেন। তবে মহামারির কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।
গীতা বলেন, ‘আমাদের একটি ছোট অর্গানিক রেস্তোরাঁ ছিল, যা ছিল আমাদের প্রথম ব্যবসায়িক উদ্যোগ। আমরা সবজিসহ নানা উপাদান ব্যবহার করে খাবার ও পানীয় তৈরি করতাম। দুর্ভাগ্যবশত, মহামারির কারণে রেস্তোরাঁটি বন্ধ করে দিতে হয়।’
তবে রেস্তোরাঁয় অনেক ধরনের রেসিপি করার কারণে রান্নার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছিলেন গীতা, যা তাকে অনলাইনে খাবার নিয়ে কিছু করার সাহস জুগিয়েছিল।
রেস্তোরাঁ বন্ধের পর কিছুদিন বিরতি নিয়েছিলেন। সেই সময়টাতে পরিবার ও সন্তানদের সঙ্গে কাটিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে চাকরির চেষ্টাও করেছিলেন। তবে সব জায়গা থেকেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছিল গীতাকে। যে জন্য বেশ হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলেন গীতা।
গীতার স্বামী সলেশ, একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং ডিস্ট্রিবিউটর। তিনি গীতাকে তার নিজের ব্যবসা শুরু করতে উৎসাহিত করেন। স্বামীর অনুপ্রেরণায় গীতা শুরু করেন ব্যবসা। প্রথমে তার বিক্রিত পণ্য ছিল ঘরে তৈরি খাবার। এরপর বিক্রি যখন ভালো হতে শুরু করে ধীরে ধীরে পণ্য বাড়াতে থাকেন।
ঘরে তৈরি ঘি , আচারও বিক্রি করতে শুরু করেন। অল্প দিনেই ভালো সাড়া পেয়েছেন গীতা। এখন ফেসবুক পেজ ছাড়াও তার নিজের একটি ওয়েবসাইটও আছে। যেখানে দেশের বাইরে থেকেও পণ্য অর্ডার করতে পারবেন ক্রেতারা। তিনি 'Curcu meal' নামে একটি বিশেষ পণ্য তৈরি করেছেন।
কারকু সাধারণত প্রসবের পরে নারীদের দেওয়া হয়। এটি হলুদ, খেজুর, বাদাম, নারকেলের দুধ ও গুড়ের মিশ্রণে তৈরি। এটি একটি সুপারফুড পরিপূরক। কারকু খাবারটি কাঁচা বা গরম দুধে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সকলের জন্যই ভালো। যেহেতু এটি হলুদ দিয়ে তৈরি তাই এটি স্বাস্থ্যকর এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
কাশ্মীর থেকেও এই সুপার ফুডের অর্ডার পাচ্ছেন গীতা। এখন মাসে গীতার আয় ৫০ হাজার রুপি। লকডাউনই গীতাকে এই ব্যবসার ধারণা নিয়ে আসতে সাহায্য করেছিল। ঘরবন্দি সময়টাতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেই আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন তিনি।
গীতা তার সব কাজেই স্বামী, সন্তানকে পাশে পেয়েছেন। তাদের উৎসাহ গীতাকে অনুপ্রাণিত করেছে। গীতার স্বামী সলেশ বলেন, ‘গীতা সবসময়ই স্বাবলম্বী হতে চেয়েছে এবং নিজে উপার্জন করতে চেয়েছে। অনেকেই তাকে বিশ্বাস করতে পারেনি।
দৃষ্টিশক্তি নেই এমন একজন নারী তাদের জন্য কতটুকু করতে পারবেন, এই ভাবনা থেকেই গীতাকে সব জায়গা থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তিনি সবসময় তাকে বিশ্বাস করতেন। তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সঙ্গে গীতা সহজেই সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
সূত্র: দ্য বেটার ইন্ডিয়া
কেএসকে/জিকেএস