বেঁচে থাকতে যারা ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্প
এক সময় মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল ছিলো সংসারের নিত্যদিনের সঙ্গী। স্বাস্থ্যসম্মত, পরিবেশবান্ধব ও সহজলভ্য হওয়ায় প্রায় প্রতিটি পরিবারই মাটির তৈজসপত্র ব্যবহার করতো। তবে কালের বিবর্তনে ধাতুর তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাটির তৈজসপত্র এখন বিলুপ্তপ্রায়।
শিল্প বিপ্লবের কারণে মৃৎশিল্প হারাতে বসলেও দেশের কিছু স্থানে এখনও বংশপরম্পরায় বেঁচে থাকার তাগিদে কেউ কেউ ধরে রেখেছেন মৃৎশিল্পের এই পেশা। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় অস্তিত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে আছে এমনই কিছু কুম্ভকার সম্প্রদায় পরিবার।
জেলা শহর থেকে প্রায় ৬০-৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে পিংনা ইউনিয়ন। আর এই ইউনিয়নে ২০টি পরিবার নিয়ে নয়াপাড়া ও ১০০টি পরিবার নিয়ে গড়ে উঠেছে বাড়ই পটল পালপাড়া গ্রাম।
ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা এই সম্প্রদায়ের মূল পেশা মাটি দিয়ে তৈরি তৈজসপত্র বানানো। তবে বর্তমানে অনেকেই ছাড়ছেন এই পেশা। আর যারা এখনও টিকে আছেন দারিদ্রতা তাদের নিত্য সঙ্গী।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাড়ার অনেক বাড়ির উঠোনে ও রাস্তার পাশে শুকানো হচ্ছে সারি সারি মাটির তৈজসপত্র।
কথা হয় আদুরী রাণীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্রের চাহিদা নেই। আগে একটা খেলনা বিক্রি করতাম ২০-৩০ টাকায়। এখন সেটা ১০ টাকাতেও নিতে চায় না।’
ষাটোর্ধ্ব কিরনবালা বলেন, ‘১৫০ বছরের পুরোনো আমাদের এই কুমোরপাড়া। জীবিকার তাগিদে বাপ-দাদার এই পেশাকে আমরা এখনও আঁকড়ে ধরে আছি। আগে একটি ফুলের টব বিক্রি করতাম ৩০-৩৫ টাকা।’
‘অথচ এখন মাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় পরও এই টব বিক্রি করতে হয় মাত্র ১০ টাকায়। আমাদের চলে কীভাবে, কেউ কোন খোঁজ খবরও রাখে না’, আক্ষেপ করে বলেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মুর্শেদা জামান জাগো নিউজকে জানান, ‘করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা সবাই সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তবে এই সম্প্রদায়ের লোকজন কখনও আমাদের কাছে আসেনি।’
‘তারা আমাদের ঐতিহ্যকে বহুকাল ধরে রেখেছেন। তাই আগামীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সহযোগিতার আওতায় আনার চেষ্টা করবো। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
জেএমএস/জিকেএস