ইতিহাসের সবচেয়ে বিলাসী রাজা তিনি
ইতিহাসের সবচেয়ে বিলাসিতা উপভোগকারী রাজা তিনি। বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে পছন্দ করতেন তিনি। নারীপ্রেম ও যৌন লালসায় মত্ত এই রাজা ছিলেন অনেকটা বিকারগ্রস্ত। ইতিহাসে যেমন অনেক ভালো রাজা-বাদশাহের উল্লেখ আছে; ঠিক তেমনই নিষ্ঠুর ও যৌন লালসায় কাতর ছিলেন এমন অনেক রাজারও উল্লেখ আছে।
তেমনই এক নিষ্ঠুর ও নারীলোভী ছিলেন পাতিয়ালার মহারাজা ভূপিন্দর সিং। ১৮৯১ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯০০ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে পাতিয়ালার মহারাজা হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি। ছোট থেকেই ক্ষমতা হাতে পেয়ে বিগড়ে যান তিনি। বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে গিয়ে তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন প্রজাদের কী অবস্থা!
রাজার শাসনকাল
সাবালক হওয়ার পরে তাকে দেওয়া হয় ব্রিটিশ শাসনের অধীনে পাতিয়ালা স্টেটের পূর্ণ শাসনভার। পাতিয়ালার মহারাজা নামেই পরিচিতি পান। প্রজাদের প্রতি কখনই তিনি দয়ালু ছিলেন না। তার অর্থ সম্পদ তিনি বিলাসিতার পেছনেই খরচ করতেন। তবে গরিব-দুঃখীদের মাঝে তার অর্থ দান করার উল্লেখ কোথায় পাওয়া যায়নি।
তিনি একজন প্রথম-শ্রেণির ভারতীয় ক্রিকেটার ছিলেন। কর্মজীবনে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও ইতালিতে জেনারেল স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সম্মানসূচক লেফটেন্যান্ট কর্নেলের দায়িত্ব পালন করেন। ভারতীয় প্রিন্সেস চেম্বারে ১৯২৬-১৯৩৮ সময়কালে ১০ বছর চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন।
ইম্পেরিয়াল ওয়্যার কাউন্সিল এ তিনি ছিলেন ভারতীয় প্রতিনিধি। শিখদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন গোল টেবিল ব্যাংকঠকে। রনজি ট্রফির জন্যও বহু কিছু করেছেন। তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট দলেও খেলেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেন স্টেট ব্যাংক অব পাতিয়ালা। তার আমলে পাতিয়ালায় চলত মোনোরেলও।
রাজার বিলাসিতা
ভারতে তিনিই প্রথম এয়ারলাইন্স কিনেছিলেন। মালিক হয়েছিলেন ব্রিটিশ ওই উড়ান সংস্থার। হীরা ও মণি-মাণিক্যের প্রতি তার বিশেষ দুর্বলতা। জানলে অবাক হবেন, বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও সপ্তম হীরাটি ছিল তার সংগ্রেহে।
নিজ এয়ালাইন্সে ১৯২৬ সালে এক ট্রাঙ্ক ভর্তি মণি মাণিক্য তিনি পঠিয়েছিলেন ফরাসি অলঙ্কার নির্মাতা কার্তিয়েরকে। সেসব দিয়ে তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত পাতিয়ালা নেকলেস। তখনই এর দাম ছিল ২৫ মিলিয়ন ডলার।
এই নেকলেসে বড় হীরাসহ মোট ২৯৩০টি ছোট-বড় হীরা এবং মীলবান রত্ন বসানো ছিল। মহারাজা সবসময় গলায় পরতেন এই হারটি। অগাধ সম্পত্তির মধ্যে ভূপিন্দর সিং-এর গাড়িশালে ছিল ২০টি রোলস রয়েস কার। তার ছিল মার্সিডিজ মেব্যাক।
গাড়িটি তাকে উপহার দিয়েছিলেন হিটলার! মহারাজার সঙ্গে হিটলারের বন্ধুত্ব ছিল বেশ গাঢ়। ১৯২২ সালে মহারা ইংল্যান্ডের প্রিন্স অব ওয়েলসে রাজকীয় সফর করকালে সঙ্গে উপহারস্বরুপ নিয়েছিলেন রুপা ও স্বর্ণ মেশানো ১৪০০ ডিনার সেট। কয়েক বছর আগে আকাশছোঁয়া দামে তা নিলাম হয়েছে।
৫ স্ত্রী ও ৩৫০ উপপত্নীর বিশাল হারেম
এই রাজা ছিলেন তীব্র নারীসঙ্গে আসক্ত। প্রজাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ প্রদর্শন করতেন তিনি। ডমিনিক ল্যাপিয়ার এবং ল্যারি কলিন্স ‘ফ্রিডম এট মিডনাইট’ নামক একটি বইয়ে মহারাজা ভূপিন্দর সিং প্রসঙ্গে বলেন, নারী প্রজাদের ক্ষেত্রে তার নির্দেশ ছিল বেশ ভয়াবহ।
মহারাজার নির্দেশে নারী প্রজারা বছরে একবার নগ্ন হয়ে হাজিরা দিতেন। তাদের মধ্যে যাকে মহারাজা পছন্দ করতেন; তাকে হীরার বক্ষবন্ধনী পরানো হত। পরবর্তীতে রাজার মনোরঞ্জন করতে বাধ্য করা হত ওই নারীকে।
যদিও রাজার ছিল ৫ জন আবার কোথাও উল্লেখ করা হয় ১০ জন স্ত্রী। সন্তান ছিল মোট ৮৮ জন। বিশাল এক হারেমও ছিল নিষ্ঠুর এই রাজার। সেখানে ছিলেন ৩৫০ জন যৌনদাসী। দেওয়ান জারমানি দাসের ‘দ্য মহারাজা’ বইয়ে জানা যায়, রাতে বিশাল সুইমিংপুলে তিনি গোসল করতেন।
তখন তার পাশে থাকতেন যৌনদাসীরা। রাজা যেভাবে খুশি যৌনতায় মেতে উঠতেন যৌনদাসীদের সঙ্গে। ব্যক্তিগত জীবনে পাঁচবার পাণিগ্রহণ করেছেন ভূপিন্দর সিং। এ ছাড়াও অগণিত উপ-পত্নী ছিল তার। তার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অধ্যায় ছিলো তান্ত্রিক যৌনতার। সেটা উপভোগের জন্য মহারাজাকে সাহায্য করতেন এক তান্ত্রিক। নাম তার প্রকাশনন্দ ঝা।
জারমানি দাসের বইয়ের বিবরণ থেকে জানা যায়, দেবীমূর্তির সামনে ১৫০-৪০০ জন কুমারি উপস্থিত থাকত। গভীর রাত পর্যন্ত পূজা করতেন বাঘছাল পরিহিত প্রকাশ তান্ত্রিক। পূজার পর ওই মেয়েদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেওয়া হত। মহারাজা ও তার ঘনিষ্টজনরা ওই কুমারির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত রাতে। অনেক সময় কুমারি মেয়েরা পাশবিক নির্যাতনের ফলে মারাও যেত।
এভাবে বিলাসিতা ও নিষ্ঠুরতায় জীবন উপভোগ করেছেন ভূপিন্দর সিং। ১৯৩৮ সালের ২৩ মার্চ তিনি প্রয়াত হন মাত্র ৪৭ বছর বয়সে। পরবর্তীতে পাতিয়ালার সিংহাসনে বসেন তার বড় ছেলে যাদবেন্দ্র সিং। তার আমলেই স্বাধীন ভারতবর্ষের অংশ হয় পাতিয়ালা স্টেট।
সূত্র: স্কুপহুপ
জেএমএস/জিকেএস