যেসব ভয়াবহ মহামারি কেড়েছে কোটি কোটি মানুষের প্রাণ
করোনা মহামারি আতঙ্কে ভীত পুরো বিশ্ব। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশে লাখ লাখ মানুষ করোনার থাবায় মৃত্যুবরণ করছেন! এদেশেও করোনা সংক্রমণ বাড়ছেই। থেমে নেই মৃত্যুর সংখ্যাও। ২০২০-২০২১ সাল বিশ্ববাসীর কাছে চরম দুর্বিসহের বছর।
তবে জানেন কি, অতীতেও এমনই ভয়াবহ কয়েকটি বছর পার করে এসেছে বিশ্ববাসী। কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্ব জুড়ে এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৬ কোটি ১১ লাখ মানুষ, মৃত্যুবরণ করেছে ৩৩ লাখ ৫০ হাজার। করোনা ছাড়াও অতীতে ভয়াবহ কয়েকটি মহামারির সম্মুখীন হয়েছে বিশ্ব। জেনে নিন সেগুলো সম্পর্কে-
ব্ল্যাক ডেথ: ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি ছিল বিউবোনিক প্লেগ। ১৩৪৬ সালে প্রথম প্লেগের প্রার্দুভাব ছড়াতে শুরু করে। ব্ল্যাক ডেথ নামে পরিচিত এই মহামারি কয়েক বছরে ইউরোপের আড়াই কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। বিশ্ব জুড়ে প্লেগে মারা যায় ২০ কোটি মানুষ।
এক পর্যবেক্ষকের দেওয়া তথ্য অনুসারে, জীবিত মানুষের চেয়ে তখন মৃতদেহের সংখ্যা ছিল দ্বিগুণ। এ কারণেই মৃতদের কবর বা সৎকারের জন্য তেমন সুস্থ মানুষও ছিল না। ‘ব্ল্যাক ডেথ’ ঠেকাতে এরপর ব্যবস্থা করা হয় কোয়ারেন্টাইনের।
স্প্যানিশ ফ্লু: করোনাভাইরাসের মতোই ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু থেকে বাঁচতে মানুষ মাস্ক পরা শুরু করে। ফ্লুজাতীয় এ ভাইরাসও কেড়েছিল প্রায় ৫ কোটি মানুষের প্রাণ। মাত্র ৩ বচরের ব্যবধানে কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল ছোঁয়াচে এই ভাইরাসের কবলে।
স্প্যানিশ ফ্লুর ব্যাপ্তিকাল ছিল ১৯১৮ জানুয়ারি থেকে ১৯২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। যদিও এর নাম দেওয়া হয় স্প্যানিশ ফ্লু; তবে এর সঙ্গে স্প্যানের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ধারণা করা হয়, ফ্রান্সের ব্রিটিশ সেনা ঘাঁটি থেকে অথবা যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন সেনাদের শরীরে প্রথম ধরা পরে ভাইরাসটি। এরপর চীনা শ্রমিকদের মাধ্যমে ইউরোপে স্প্যানিশ ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে।
এইডস: এই রোগে এখণো অনেক দেশের মানুষই মৃত্যুবরণ করে থাকেন। আজও এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। ১৯৮০ সালের দিকে এইচআইভি এইডস মহামারি আকারে প্রথম ছড়িয়েছিল। এতে প্রাণহানি ঘটেছিল তিন কোটি ২০ লাখ মানুষের।
প্লেগ রোগ: ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারিগুলোর মধ্যে তিনটিই ভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটেছিল। ইয়েরসিনিয়া পেস্টিস নামক মারাত্মক ব্যাকটেরিয়ার কারণে প্লেগ রোগের সংক্রমণ ঘটে। এতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষের প্রাণ যায়। প্লেগ রোগটি ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ ছিল খাদ্যশষ্য।
বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষই না-কি মারা যায় প্লেগে আক্রান্ত হয়ে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার মানুষ মারা যেত! প্রায় ৫০ বছর ধরে বিশ্বে টিকে ছিল এই মহামারি রোগটি। তখন এই রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থাও ছিল না।
স্মলপক্স: গুটিবসন্ত রোগটি দাবানলের ছড়িয়ে পড়ে ১২৫ শতাব্দির দিকে। ইউরোপ, এশিয়া ও আরব এলাকায় সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষের জীবন কেড়েছিল এই গুটিবসন্ত।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে অ্যাডওয়ার্ড জেনার নামক ব্রিটিশ ডাক্তারের আবিষ্কৃত ওষুধে গুটিবসন্তের প্রাদুর্ভাব দমন করা সম্ভব হয়। ১৯৮০ সালের দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য কর্তৃক জানানো হয়, স্মলপক্সের ভাইরাসটি বিশ্ব থেকে একেবারেই মুছে গেছে।
কলেরা: এক সময় কলেরা মহামারি আকার ধারণ করে। ১৯ শতকের শুরুতে প্রথমে ইংল্যান্ডব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে কলেরা। বাতাসের মাপধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল এই রোগের জীবাণু। পানি দূষণের কারণেই মূলত কলেরা রোগটি তখন মহামারি আকার ধারণা করেছিল।
বিগত ২০০ বছরে মোট সাতবার কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে ভারতসহ গোটা বিশ্ব। ১৮১৭ থেকে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ অবধি কলেরা-অতিমারিতে ভারতে প্রাণ হারিয়েছেন দেড় কোটির বেশি মানুষ।
১৮৬৫ থেকে ১৯১৭ অবধি এই পরিসংখ্যান ছিল দুই কোটি ৩০ লাখ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে থাকে। এই রোগে এখনও অনেক মানুষই মারা যায়।
জেএমএস/এমকেএইচ