মাহাদী সেকেন্দারের এগিয়ে চলার গল্প
রায়হান আহমেদ
শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে এগিয়ে চলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমেও সক্রিয় ছিলেন নিয়মিত। এককথায় সবদিকে তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। জবির দর্শন বিভাগ থেকে সিজিপিএ ৩.৮৫ পেয়ে মাস্টার্সে হয়েছেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেছেন। উপস্থাপক হিসেবে খ্যাতির পাশাপাশি বিতর্ক, অভিনয়, লেখালেখিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে তার সক্রিয় পদচারণা রয়েছে। এ প্রিয়মুখকে জবির অলরাউন্ডার বলা হয়ে থাকে। মেধাবী সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব মহলে তিনি জনপ্রিয়।
মাহাদী সেকেন্দার নটর ডেম কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নটর ডেম নাট্যদল ও নটর ডেম রোভার স্কাউট গ্রুপে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি নাট্যদলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক এবং নটর ডেম রোভার স্কাউট গ্রুপের ডেন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন মঞ্চে একাধিক নাটকে অভিনয় এবং নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন।
মঞ্চনাটকের পাশাপাশি টিভি নাটক এবং স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে তিনি যুক্ত রয়েছেন। টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করছেন। একাধিক একক এবং ধারাবাহিক নটকে কাজ করেছেন। সদ্য ধারাবাহিক নাটক ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা এখন ঢাকায়’ নাটকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যা দ্রুত সম্প্রচারিত হবে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লেখালেখি করেন। যুক্ত ছিলেন ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সঙ্গেও।
তার সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নটর ডেম কলেজ নাট্যদলের ৮ম জাতীয় নাট্যোৎসব ও কর্মশালায় নাট্যদলের সর্বোচ্চ সম্মাননা আজীবন সদস্যপদ দিয়ে তাকে সম্মানিত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থেকে নিজের একাডেমিক পড়াশোনায় সেরা হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীর নিজের কাজের প্রতি মনোযোগ, দায়িত্বশীল আচরণ এবং নিজের সদিচ্ছার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার একটি অংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সহশিক্ষা কার্যক্রম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে সংগঠন চর্চার মধ্যদিয়ে।’
মাহাদী সেকেন্দার নিজ বিভাগের নির্বাচিত ক্লাস প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন প্রথমবর্ষ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদকদের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ফিলোসফি ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, নটরডেমিয়ান সোসাইটি অব জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের এসআরএম ও রোভার ইন কাউন্সিলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্কুলজীবন থেকেই তিনি সহশিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন, অর্জনও কম নয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- স্কুলপর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বক্তা, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় খুলনা জেলায় দ্বিতীয়, উপস্থিত বক্তৃতায় খুলনা বিভাগে প্রথম স্থান। বাংলাদেশ স্কাউট আয়োজিত ৭ মার্চের ভাষণের উপর নির্ধারিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে জাতীয় পর্যায়ে অর্জন করেন দ্বিতীয় স্থান।
কয়েকবার একক অভিনয়ে সেরা হওয়া ছাড়াও লেখালেখি এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য একাধিক অর্জন। তিনি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শতভাগ ক্লাস উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। নটর ডেম কলেজ থেকে এর স্বীকৃতিস্বরূপ শতভাগ ক্লাস উপস্থিতি এবং আন্তরিকতার সনদপত্র অর্জনের কৃতিত্ব রয়েছে তার।
মাহাদী সেকেন্দার সরকারি খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে যশোর বোর্ড বৃত্তি এবং নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসিতে ঢাকা বোর্ড মেধাবৃওি লাভ করেন। তিনি মেধার স্বাক্ষর রেখে তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম।
খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার গাড়াখোলা গ্রামে বেড়ে ওঠা এ মেধাবী মুখ নিজের ক্যারিয়ার ও স্বপ্ন নিয়ে বলেন, ‘একাডেমিক জায়গাকে আমি এগিয়ে রাখতে চাই। ফলে আপাতত গবেষণামূলক কাজে নিজেকে মনোনিবেশ করার ইচ্ছা আছে। এ ছাড়া দেশীয় সংস্কৃতি লালন এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টি করতে কাজ করে যাব।’
এসইউ/এএসএম