প্রতিবন্ধকতার পরও লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন রোয়েনা
সাজেদুর আবেদীন শান্ত
রোয়েনা রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। তারা দুই ভাই-বোন। বাবা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। মা গৃহিণী। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে ক্লাস নাইনে থাকা অবস্থায় রোয়েনার বিয়ে হয়ে যায়। এসএসসি-এইচএসসিতে ফার্স্ট ডিভিশন পান। স্বামী ও দুই ছেলে নিয়েই তার ছোট পরিবার।
পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পরও তিনি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেননি ছোট দুটি সন্তানের কারণে। তিনি বাড়ির পাশের ডিগ্ৰি কলেজে ভর্তি হন। ভর্তির পরপরই স্বামীর চাকরিসূত্রে ঢাকায় চলে আসেন।
রোয়েনা বলেন, ‘২০০৪ সালে এইচএসসি পাস করার পর কমিউনিটি হেলথে আমার চাকরি হয়। তখন ছোট বাচ্চা দুটির কারণে চাকরি করা সম্ভব হয়নি। তখন ভাবি, নিজে থেকেই কিছু একটা করা প্রয়োজন। ছোটবেলা থেকেই আমি নিজের পোশাক নিজে তৈরি করছি। হাতের কাজের প্রতি আলাদা একটা নেশা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘নিজের ইচ্ছামতো কী কাজ করা যায়, তার জন্য খুব কাছের বন্ধুদের থেকে পরামর্শ চাইলাম। আমার বন্ধুরা বললো, তুমি বুটিকস নিয়ে কাজ করতে পারো। কারণ তুমি অনেক সুন্দর পোশাক তৈরি করতে পারো। তারা আরও বলে, টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ি নিয়ে কাজ করার জন্য।’
বন্ধুদের পরামর্শে তিনি বাসার পাশেই যুব উন্নয়ন নামে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে ‘ডিজাইন এবং কাটিং’র ওপর তিন মাসের কোর্স করেন। আগে থেকেই পোশাক তৈরির কাজ জানায় তার জন্য সুবিধা হয়। রোয়েনার ইচ্ছা ছিল, সব সময় যা করবেন; তা নিজের চেষ্টায় করবেন। রোয়েনা গহনা বিক্রি করে বুটিকসের জন্য যাবতীয় কেনাকাটা করেন।
তারপর প্রশিক্ষণ শেষ করে ২০১৬ সালে বুটিকস নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। কাটিং এবং ডিজাইনের কাজগুলো নিজে করতেন। বাকি কাজ করার জন্য তিনজন নারী কারিগর নিয়োগ দেন। বেশ ভালো চলছিল তার বুটিকস শপ। ভালো একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। কিন্তু করোনাকালীন অনেক বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন তিনি। চার মাস তার বুটিকস শপ বন্ধ থাকে। তার দোকান ভাড়া ঠিকই চালিয়ে যেতে হয়েছে।
রোয়েনা বলেন, ‘আমি গত বছর ১০ আগস্ট ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদশ এবং উইতে জয়েন করি। সেখানে বেসিক স্কিলের ওপর নিয়মিত পড়াশোনা করছি। রাজিব আহমেদের গাইডলাইনগুলো ফলো করছি। তারপর ফেসবুকের মাধ্যমে ‘প্রাঙ্গন’ নামে পেজ খুলে বুটিকসের তৈরি পণ্য বিক্রি করেছি। এ পর্যন্ত আমার পণ্য প্রায় লাখ টাকার উপরে বিক্রি হয়।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশের ই-কমার্সে আমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই। আমার জেলা টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ি নিয়ে কাজ করবো। করোনার ধাক্কা কেটে গেলে নতুন করে বুটিকস শপটা শুরু করবো। আমি চাই, আমার কাজের মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হোক।’
লেখক: ফিচার লেখক ও শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু কলেজ, ঢাকা।
এসইউ/এমএস