যাদের থেকে দূরে থাকে মশা
প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ মশাবাহিত রোগের কারণে মারা যায়। এই মশার হাত থেকে নিস্কৃতি পেতে মানুষ কত কী-ই না করে। মশারী, কয়েল, স্প্রে থেকে শুরু করে বাজারে এখন হরেক রকম মশা তাড়ানো অস্ত্রে সয়লাব। শুনলে হয়ত অবাক হবেন যে, কিছু লোককে মশারাই এড়িয়ে চলে সবসময়! না, মশার পরিবারের সঙ্গে তাদের কোন আত্মীয়তা নেই, তাদের গায়ের গন্ধের ধরণ মশাকে আকৃষ্ট করতে পারে না। তাই ক্ষুদ্র এ রক্তচোষা প্রাণীটি মনে করে, এখানকার খাবারের স্বাদ বোধহয় তেমন সুবিধার নয়। সময় নষ্ট না করে বরং অন্যত্র চেষ্টা করি।
জার্মানির ভ্যাঙ্কুবারে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে মাইক্রোবাইয়াল ইকোলজিস্ট রব নাইট ব্যাখ্যা করেন, কেন কিছু লোককে মশারা কামড়ায় না। তিনি বলেন, আমাদের ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়া কিংবা জীবাণু শরীরে এমন সব রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি করে যা মশাকে আকৃষ্ট করে। শরীরে অবস্থান করা ব্যাকটেরিয়া কিংবা জীবাণুর সংখ্যা মিলিয়ন অথবা বিলিয়ন পরিমাণ নয় বরং এর সংখ্যা ট্রিলিয়ন।
রব নাইট জানান, প্রায় ১০০ বিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া শরীরে জীবিত থাকে, তার মধ্যে কিছু সংখ্যক ঘামের গন্ধ বা ত্বকের বিভিন্ন গন্ধ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ, এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ছাড়া আমাদের ত্বকে কোন গন্ধ সৃষ্টি হবে না, তাই মশারাও কামড়াবে না।
ত্বকের প্রতি মশার এই আকর্ষণের পরিমাণ পরীক্ষা করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল ৪৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক। তারপর তাদেরকে দুইদিন অ্যালকোহল, রসুন, মশলাজাতীয় খাবার এবং গোসল থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। তারা ২৪ ঘন্টা নাইলনের তৈরি মোজা পড়ে থাকতেন যেন তাদের শরীর থেকে জীবাণুদের আলাদাভাবে শনাক্ত করা যায়। তারপর গবেষকরা মশাদের আকৃষ্ট করার টোপ হিসেবে স্বেচ্ছাসেবকদের পায়ের তলায় সৃষ্টি হওয়া ঘামের মতো তরল কাঁচের তৈরি একধরণের নিড়ানি দ্বারা তুলে নেন।
৪৮ জনের মধ্যে ৯ জন মানুষের ত্বকের গন্ধের প্রতি মশারা বেশি আকৃষ্ট হয়। সাতজন মানুষের গন্ধ থেকে মশারা দূরে থাকে অর্থাৎ তাদেরকে মশারা কামড়ায় না। গবেষকরা দেখেন যে বেশি আকৃষ্ট গন্ধের মানুষদের ত্বকে সাধারণ ত্বকের তুলনায় ২ দশমিক ৬২ গুন বেশি আকৃষ্টকরণ জীবাণু থাকে। কম আকৃষ্টকরণ ত্বকের চেয়ে তা প্রায় ৩ দশমিক ১১ গুন বেশি। গবেষকরা বলেন, কিছু মানুষের ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই ডিউডোরেন্ট। যা মশাদের বেশি পরিমাণ আকৃষ্ট করে। মজার তথ্যটি হলো বেশি পরিমাণ বিয়ার পানকারীদের ত্বকে মশারা বেশি আকৃষ্ট হয়।