বিজয়ের দিনে লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা
ষাটোর্ধ্ব রহিম ব্যাপারি। হাতে বাঁশের সরু লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দৈনিক বাংলা সড়কে। লাঠিতে কয়েক স্তরে বাঁধা লাল-সবুজের পতাকা। তিনি বিজয়ের মাসের শুরু থেকেই অলিগলিতে জাতীয় পতাকা বিক্রি করছেন। মানুষ গাড়িতে বসে তাকিয়ে দেখেন তার পতাকা।
পথচারিরাও সামনে থেকে দেখছেন। মাঝে মধ্যে দু’একজন নেড়ে-চেড়েও দেখছেন। আবার কেউ দরদাম করে কিনছেন। তবে বড় পতাকার চেয়ে ছোট পতাকাই বেশি কিনছেন। লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি হলে মুখে হাসি ফোটে রহিম ব্যাপারির। বিজয়ের স্বাদ পান তিনিও।
বিজয়ের মাস এলেই শহরে-গ্রামে জাতীয় পতাকা বেচাকেনার ধুম পড়ে। মাসজুড়ে লাল-সবুজের পতাকা উড়তে দেখা যায় বাড়ির ছাদে, বারান্দার গ্রিলে কিংবা যানবাহনে। শিশুরা কাগজের পতাকা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে কাগজ ও কাপড়ের পতাকা উড়তে থাকে সর্বত্রই। সাজানো হয় এলাকার দোকান-পাট, রাস্তা-ঘাট।
এতেই এক বেলার খাবার জোটে অসংখ্য রহিম ব্যাপারির। তবে এবার করোনা মহামারি তাদের বেচাকেনায়ও বাগড়া দিয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় তাদের আয় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিজয় দিবস পালনের কারণে মানুষও বের হয়নি। ফলে পতাকার বিক্রিও কম।
পতাকার এ ফেরিওয়ালা জানান, গতবছরের চেয়ে এবার অনেক কম পতাকা বিক্রি হয়েছে। এবার বড় কাপড়ের পতাকা বেশি বিক্রি হয়নি। কাপড়ের ছোট পতাকা মোটামুটি বিক্রি হয়েছে। এমনকি কাগজের ছোট পতাকাও খুব বেশি বিক্রি হয়নি।
তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, অন্যান্য বছর ১৬ ডিসেম্বরের আগের এক সপ্তাহ প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকার পতাকা বিক্রি হতো। কিন্তু এবার এখনো ৪০০-৫০০ টাকার বেশি হয়নি।
রহিম ব্যাপারির মতো অবস্থা শাহআলম শেখের। করোনায় লকডাউনে স্বাধীনতা দিবসে পতাকা বিক্রি করতে না পারার আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। এ ফেরিওয়ালা মনে করেছিলেন বিজয় দিবসে বিক্রি বাড়বে।
শাহআলম বলেন, ‘করোনার জন্য বেচা-বিক্রি কম হচ্ছে। তাই আগের মতো আয়ও হচ্ছে না। কিন্তু পতাকা বিক্রি করার মাধ্যমে আমি যে তৃপ্তি পাই, তা একটুও কমে নাই।’
সবুজ প্রকৃতি, তারুণ্য, উদীয়মান সূর্য ও স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের রক্তের প্রতীক নিয়ে সোনার বাংলার লাল-সবুজের পতাকা। প্রতিবছর বিশেষ বিশেষ দিনে জাতীয় পতাকার চাহিদা বেড়ে যায়। তাই এসময় অনেকেই কিছু বেশি টাকা আয়ের আশায় কাঁধে বাঁশের লাঠি নিয়ে পাতাকা বিক্রি করেন।
লাল-সবুজের এই ফেরিওয়ালাদের সঙ্গে থাকে একটি বড় ব্যাগ। এর মধ্যে বিভিন্ন আকারের কাপড়ের ও কাগজের পতাকা থাকে। আরও থাকে হাতের ব্যান্ড এবং মাথার ব্যান্ডানা।
রহিম ব্যাপারির কাছ থেকে একটি বড় ও দু’টি ছোট কাপড়ের পতাকা কিনেছেন নিজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বিজয় দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবস এলেই মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলার বিজয় অর্জিত হয়েছে। তাই তাদের স্মরণে প্রতিবছর আমি পতাকা কেনার চেষ্টা করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করার চেষ্টা করি।’
হয়তো আগামী বিজয় দিবসে করোনা আর বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। রাজপথে দেখা যাবে বিজয়ের দীর্ঘ মিছিল। সবার হাতে হাতে থাকবে লাল-সবুজের পতাকা। আর তাতেই হাসি ফুটবে লাল-সবুজের ফেরিওয়ালাদের মুখে। হেসে উঠবে প্রিয় বাংলাদেশ।
লেখক: ফিচার লেখক ও সংবাদকর্মী।
এসইউ/এমকেএইচ