ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

জীবনের লক্ষ্য স্থির করবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:৪৫ এএম, ০৭ অক্টোবর ২০২০

শেখ আনোয়ার

মানুষের জীবন খুবই ছোট ও সংক্ষিপ্ত। মহাকালের অন্তহীন সময়ের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ এ মানবজীবন। জীবনের পরিসরের তুলনায় মানুষের জন্য নির্ধারিত কর্ম অনেক বেশি। মানুষের জীবনে সময়ের এতো অভাব যে, সময় যেন হাতের মুঠো থেকে কেবলই পিছলে বেরিয়ে যায়। ক্ষুদ্র এ জীবনের একমুহূর্ত সময় হেলা-ফেলায় নষ্ট করলে অনেকখানি পিছিয়ে পড়তে হয়। ফলে শত সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের মাঝেও জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। তাই এরই মাঝে করতে হবে অনেক কাজ। সময়কে নিজের বশে আনা হয়তো সহজ কাজ নয়। কিন্তু কিছু নিয়ম-কানুন মানলে সময়কে হয়তোবা সোনার হরিণ মনে হবে না।

জীবনের লক্ষ্য স্থির করুন: ব্যক্তিগত জীবনে অথবা কর্মক্ষেত্রে আপনাকে আপনার লক্ষ্য স্থির করতে হবে। আপনি যে কাজটি করতে চান, তা নির্দিষ্ট করুন। যদি অফিসে কোনো একটি নির্দিষ্ট পদের প্রতি আপনার লক্ষ্য থাকে, তাহলে অফিসের কাজ একেবারে ঠিকমতো করবেন। একেবারে ঠিক সময়ে অফিসে বা যেকোনো স্থানে এসে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। বিশ্বের প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী-দার্শনিক তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে ক্ষুদ্র জীবনেই কত শত মহৎ সৃষ্টি রেখে গেছেন।

সময়ের গতিপথ নির্ধারিত করুন: আপনি কিছুতেই সময় বাঁচাতে পারবেন না, যদি না বুঝতে পারেন সময় কোথায় নষ্ট হচ্ছে। এমনিতে যদি বুঝতে না পারেন তাহলে একটা খাতায় প্রতি আধ ঘণ্টা পরপর লিখুন কী করছেন কখন। দিনের শেষে দেখবেন, আপনি অনেক কাজ যা পাঁচ মিনিটে করা যায়, তা করতে সময় নিয়েছেন দশ মিনিট। এবার আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন, সময় কিভাবে আপনার চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। রবার্ট ব্রাউনিং যথার্থই বলেছেন, ‘একটা দিন চলে যাওয়া মানে জীবন থেকে একটা দিন ঝরে যাওয়া।’ আর ঝরে যাওয়া দিনটিকে কোনো কিছুর বিনিময়েই পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব নয়। ফলে এক মুহূর্ত সময় অপচয় করা মানে জীবনের একটা অংশের অপচয় করা। আর এ অপচয়ের পরিণাম ভয়াবহ।

সময়কে বেঁধে দিন: প্রতিদিন সকালে সারাদিনের রুটিন তৈরি করুন। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো প্রাত্যহিক রুটিন তৈরি করে নেওয়া। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিটি কাজের রুটিন করে নিলে সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারা যায়। সম্ভব হলে সাপ্তাহিক বা মাসিক রুটিন তৈরি করে ফেলতে পারেন। তাহলে আপনার নিজস্ব সময়ের আন্দাজ থাকবে। সাপ্তাহিক বা মাসিক রুটিন কিছু কিছু অদল-বদল ঘটালেও সময়ের মাপে যদি কাজের কাঠামো ঠিক থাকে, তাহলে হয়তো সময়টাকে কিছুটা করতলগত করতে পারবেন।

কাজ নির্দিষ্ট করুন: পড়ার সময় পড়া এবং খেলার সময় খেলা। সময়ের কাজ সময়ে না করার ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কেও শিশুকে অবহিত করতে হবে। দিনের শুরুতেই সেদিন কী কী কাজ করবেন ঠিক করে নিন। একটি কাজ সম্পূর্ণ শেষ করে আরেকটি কাজ শুরু করে দিন। এভাবে দেখবেন সময় বাঁচাতে পারছেন। না হলে একবার এ কাজে হাত, আরেকবার ওই কাজে হাত দিয়ে সব কিছু গুলিয়ে ফেলবেন। এতে সময় বেশি নষ্ট হয়। কাজ কম হয়। প্রত্যেক মানুষেরই উচিত প্রতিদিনের সময়কে নির্ধারিত কাজগুলো দ্বারা ভাগ করে নিয়ে প্রতিটি কাজই যথাযথ সময়ে সম্পন্ন করার অভ্যাস করা।

স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠা করুন: আপনি যদি সবার কাছে প্রিয় হতে গিয়ে সবার অনুরোধেই হ্যাঁ বলতে থাকেন, তাহলে আপনার সময় কখনোই বাঁচবে না। আপনার একান্ত প্রয়োজনে ‘না’ বলতে শিখুন। তা সে যে-ই হোক। আপনি বিনয়ের সঙ্গে বুঝিয়ে বলতে চেষ্টা করুন। এতে আপনি বাড়তি ঝামেলা থেকে রক্ষা পাবেন।

কাজ ফেলে রাখবেন না: সময়ের কাজ সময়ে করাই হলো সময়ানুবর্তিতা। সময়ানুবর্তিতা মানব চরিত্রের অন্যতম মহৎ গুণ, যা মানুষকে সফলতার দ্বারে পৌঁছে দেয়। জগতে প্রতিটি কাজের জন্য উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করা থাকে। কথায় বলে, ‘সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়।’ অর্থাৎ যে কাজটি নির্ধারিত সময়ে করলে একবারেই সুষ্ঠুভাবে করা যেত, সেটিই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে করতে গেলে দশবারেও সম্পন্ন করা যায় না। যে কাজটা শুরু করেছেন, করে যান। থামবেন না। এতে সময় নষ্ট হয়। একটা শেষ করে আরেকটা কাজে হাত দিন, কারণ যেকোনো কাজে একবার বাঁধা পড়লে আবার সেই কাজে মন দিলে বাড়তি কিছু সময় নষ্ট হয়ে যাবেই।

কিছু সামাজিকতা এড়িয়ে চলুন: প্রতিটি বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানেই যেতে হবে, তার কোনো মানে নেই। যেগুলো খুব জরুরি নয় বা আপনি যাদের খুব ঘনিষ্ঠ নন, তাদের আমন্ত্রণ এড়িয়ে গেলে আপনার সময় বাঁচবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করাই সময়ের সদ্ব্যবহারকারী ব্যক্তির লক্ষণ। ওয়াটার-লু’র যুদ্ধে নেপোলিয়ানের কোনো এক সেনাপতি নির্ধারিত সময়ের কয়েক মিনিট পরে হাজির হয়েছিলেন বলে ওই যুদ্ধে নেপোলিয়ানকে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল।

অন্যকে সাহায্য করুন: একদিনের চেষ্টায় কোনো মানুষ সময়ানুবর্তিতার গুণটি আয়ত্ত করতে পারেন না। তাই সব থেকে ভালো উপায় হচ্ছে পরিবারের মাধ্যমে প্রতিটি শিশুর মধ্যে এ অভ্যাসটি গড়ে তোলা। ক্ষুদ্র জীবনের স্বল্প পরিসরে মানুষকে অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই মানব জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করতে হলে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আপনার সহকর্মীদের সাহায্য করুন। দেখবেন তারাও আপনার প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।

ভয় পাবেন না: কাজের অসম্ভব চাপ পড়লে ভেঙে পড়বেন না। টেনশনে ভুগবেন না। লোভ সামলাতে শিখুন। সাবধান থাকুন আর ঠান্ডা মাথায় কাজ করুন। তাড়াহুড়ো না করে স্বাভাবিক হয়ে কাজ করুন। কাজে ভয় পাবেন না। দেখবেন ঠিক সময়মতো লক্ষ্যে পৌঁছে যাবেন।

মানুষ শত চেষ্টা করলেও অতীতের দিনগুলো ফিরিয়ে আনতে পারে না। সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতন না হলে জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয় না। যারা সময়কে মূল্যবান মনে করে এবং প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে, তারাই সুখী-সমৃদ্ধ জীবন লাভ করে। জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে উপযুক্ত কাজে ব্যয় করতে পারলে ক্ষণস্থায়ী জীবনেও মহৎ সৃষ্টির স্বাক্ষর রেখে যাওয়া সম্ভব। এভাবেই মানুষ মরণশীল হওয়া সত্ত্বেও অমরত্ব লাভ করে। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সময়ের মূল্য সম্পর্কে সচেতন থেকে সময়নিষ্ঠ হওয়ার মধ্য দিয়ে জীবনকে স্বার্থক ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা। সময়ানুবর্তিতা কেবল ব্যক্তিজীবনেই সাফল্য বয়ে আনে না, একই সঙ্গে জাতীয় জীবনেও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।

লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এসইউ/এএ/এমকেএইচ

আরও পড়ুন