ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

ধর্ষণ প্রতিরোধে আপনার করণীয়

রাজীব কুমার দাশ | প্রকাশিত: ১২:৪৬ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

বিষাক্ত শব্দের ভয়ার্ত একটি নাম ‘ধর্ষণ’। ধর্ষণ নিয়ে আমার গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ ‘বোবা কান্নাই কি আমৃত্যু সম্বল’ পড়ে পাঠকবন্ধুগণ অনেকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। কেউ ইনবক্সে তাঁদের আত্মীয়, অনাত্মীয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন বন্ধুরাও তাঁদের নিজের সাথে লেগে থাকা বিষাক্ত অক্টোপাস ‘ধর্ষণ’ শব্দের মুক্তি চেয়ে পরামর্শ চেয়েছেন। তাঁরা যারপরনাই আমাকে আপনজন হিসেবে আইনি পরামর্শ চেয়ে থাকেন। আমি যা জানি; তাঁদের বলি, যা জানি না- ‘বিজ্ঞদের পরামর্শ নিতে বলি।’

আমরা জানি, মনুষ্যত্বের চরম অপমানে কোনো জাতিকে ধ্বংস, জাতীয়তাবাদকে সমূলে উৎপাটন, বর্ণশংকর জাতি তৈরি, যুদ্ধের চরম হিংসা যৌন হাতিয়ার ধর্ষণ। ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দক্ষিণ কোরিয়ান নারীদের জাপানি সেনাদের ধর্ষণের অনেক বছর পরে এসেও ২০১৫ সালে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে। সে সময়ে যৌন নির্যাতনের শিকার নারীদের সহায়তায় ৮৮ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান।

ধর্ষণ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। হত্যার চেয়েও জঘন্যতম। ভিকটিম প্রতি সেকেন্ড-মিনিটের কাঁটাতে বোবা কান্নায়; কান্নাখেকো কষ্টে চিৎকার করে বাঁচার চেষ্টা করেন। একসময় পরিবার, সমাজ আপনজন দূরে সরে যান। আইনের ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়ে অপরাধী আমোদিত, বিনোদিত হয়ে বুক চিতিয়ে হাতে সিগারেট, কস্তুরী পান মুখে সুখের ভাওয়াইয়া গান ধরেন। একটা সময়ে ভিকটিম ছুঁতমার্গ হয়ে হারিয়ে যান।

সবারই এখন বোধের গোদ রোগ। সবার চিন্তা কসাইখানার জাবরকাটা পশুর মতো। ‘অমুক-তমুকের হয়েছে, আমাদের হবে না।’ সে চিন্তায় মাদকের মতো সুযোগ নিয়ে আস্তে-আস্তে ‘ধর্ষক হোমো স্যাপিয়েন্স’ প্রজাতি হয়ে বেড়েই চলেছে। এমন কোনো স্থান নেই; যেখানে নারীরা এ প্রজাতির হাত থেকে বাঁচতে পেরেছে! বোধ দূরে থাক- মনের দৈন্যদশা নিয়ে এ প্রজাতির সবাই ধর্ষণ সংবাদ পর্যন্ত আমোদিত বদনে দেখেন, পড়েন, কামাহত অনুভবে শিহরিত হন। এমনকি নিজেই ভিকটিমের সাথে কল্পনার জগতে হারিয়ে যান।

পাড়া, গ্রাম, শহর, উপ-শহরের বাঁকে, বাড়ির সামনে চা, পান দোকান ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে। এসব দোকানের পেছনে জুয়াবাজি হিসেবে লুডু, কেরাম চলে। পর্দা দিয়ে বসে বিড়ি, সিগারেট দোকানে রাখা যৌন উত্তেজক টার্গেট ট্যাবলেট, সিরাপ, জিনসেং সিরাপসহ ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির যৌন উত্তেজক সিরাপ কখনো চা মিশিয়ে, কখনো জুসের সাথে কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সমানে পান করেন। অনেক বৃদ্ধ লুকিয়ে কিংবা কারোর মাধ্যমে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, সিরাপ সংগ্রহ করেন। ইয়াবা উত্তেজক মাদক তো হাতের নাগালে।

সব ওষুধ কোম্পানির এখন লাভজনক প্রোডাক্ট- যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, সিরাপ। ফার্মেসির এখন লাভজনক ব্যবসা- যৌনবর্ধক ওষুধ। ফুটপাত যৌনবর্ধক কবিরাজদের দখলে। সাপুড়ে, বেদে, বানর খেলা, গান-বাজনা- সবখানে যৌনদস্যু কীভাবে তৈরি হবে; তার চটকদার বিজ্ঞাপন।

একদিকে ফেসবুক, ইউটিউব; অন্যদিকে হাতের নাগালে মাদক, যৌন উত্তেজক ওষুধ। আবাল, বৃদ্ধ, যুবক সিংহভাগই হোমো স্যাপিয়েন্স যৌন প্রজাতি ঘরানা কামাতুর হয়ে ঘরে-বাইরে সুযোগ নিয়ে মেরে ফেলছে দুগ্ধপোষ্য শিশু, কিশােরী, যুবতী, গৃহবধূ। এমনকি মা, দাদি, নানি বয়সের বৃদ্ধারা পর্যন্ত হোমো স্যাপিয়েন্স যৌন প্রজাতির হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

এ হতভাগ্য নারী, শিশুরা আমাদের সন্তান, মা, বোন। না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে ফ্রি চা, কেক, সিগারেট খেয়ে আর কতদিন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বেড়ে চলা মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী, ধর্ষক সোপিয়েন্স প্রজাতিকে রক্ষা করবেন? শুধুু আবেগের বশে নিজেদের দোষ ধামাচাপা দিতে পুলিশ, উকিল, কোর্ট নিয়ে কত অভিযোগ করবেন? সবাই একাট্টা হোন; আপনার পরিবার থেকে শুরু করুন। বাড়ির সামনে দোকানির খবর নিন, প্রতিবেশী, সমাজ, মোটরসাইকেলে আসা আগন্তুুককে পরখ করুন। জরুরি সেবা, থানা, ফাঁড়িকে খবর দিন।

আপনার পাশের ফার্মেসি সন্দেহ হলে সরকারের নির্ধারিত এজেন্সিকে খবর দিন। ধর্ষণ মানসিকতার শুরু- মাদক, যৌনবর্ধক ওষুধ। আজ বিবাহ বিচ্ছেদের ভয়াবহতা চোখে পড়ার মতো। আধিক্যের কারণ- মাদক সেবন, একাধিক যৌনরোগ, পরকীয়া, জৈবিক চাহিদা না থাকা। মানে বিয়ের আগেই কৌমার্য হরণ। বাসর রাত হতে শুরু! বউ রাগ করে বাপের বাড়ি, থানা পুলিশ, কোর্ট, সালিশ, হামলা, মামলা।

আর দেরি নয়। আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। ধর্ষণ, মাদক, যৌনবর্ধক ওষুধ, ইউটিউব, ওয়েব সিরিজ, পর্ণ- সব একই সূত্রে গাঁথা। নিজেদের অবস্থান থেকে ‘ধর্ষক হোমো স্যাপিয়েন্স’ প্রজাতির হাত থেকে পরিবার, সমাজ, দেশকে রক্ষা করতে হবে। সবার সম্মিলিত বোধ, সচেতনতা দিয়েই বিষাক্ত শব্দের নাম ‘অক্টোপাস ধর্ষণ’কে তাড়িয়ে দিতে পারি। নচেৎ আগামীর মানবীয় প্রজন্ম কালের কৃষ্ণগহ্বরে হারিয়ে যাবে।

এসইউ/এএ/এমকেএইচ

আরও পড়ুন