গাছ পরিষ্কার করে সংসার চালান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কুদ্দুস
কৈশোরের দুরন্তপনাময় বয়সে হঠাৎ করে আসে ‘কালাজ্বর’ নামে অজ্ঞাত ব্যাধি। এতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে। তবুও নিজেকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। আয়ত্ত করে ভিন্নধর্মী প্রতিভা। দৃষ্টিশক্তিহীন কিশোর উঠতে থাকে নারিকেল ও সুপারি গাছে। গাছের মাথায় উঠে ফল পেরে নিচে নামিয়ে আনে। প্রথমদিকে এলাকাবাসী হাসাহাসি করলেও পরে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়।
বলছিলাম ঝালকাঠির কিফাইত নগর এলাকার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি আ. কুদ্দুস মোল্লার (৫২) কথা। দৃষ্টিহীন হয়েও ৩২ বছর ধরে নারিকেল ও সুপারি গাছ বেয়ে মা হারা তিন মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। একটি ভাঙাচোড়া খুপড়ি ঘরে কোনো রকমের দিন কাটছে তাদের। তবুও অন্যের সাহায্যের অপেক্ষা করেন না। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি, দক্ষতা ও দৃঢ় মনোবলের কারণে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও হাল ছাড়েননি কখনো। পৃথিবীর সুন্দর রূপ দেখতে না পারলেও নিজের তিন মেয়েকে সুন্দর পৃথিবী দেখানোর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, ১১ বছর বয়সে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টি হারান দরিদ্র পরিবারের এ সন্তান। এ অবস্থায় দিনমজুরি শুরু করলেও বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। ২০ বছর বয়স থেকে শুরু করেন নারিকেল ও সুপারি গাছে ওঠার কাজ। কখনো অন্যের গাছের নারিকেল পারা, আবার নারিকেল গাছ পরিষ্কার করাই হয়ে ওঠে তার পেশা। মাঝেমধ্যে সুপারি পেরে দিয়েও কিছু আয় হয় কুদ্দুস মোল্লার। সুস্থ একজন মানুষের চেয়ে তিনি দ্রুতগতিতে গাছে উঠতে ও নামতে পারেন। একটি নারিকেল গাছে উঠে তিনি ৫০-১০০ টাকা উপার্জন করেন। কেউ আবার গাছপ্রতি দুই-তিনটি নারিকেল দেন। এগুলো বিক্রি করেই চলে তার সংসার।
আ. কুদ্দুস মোল্লা জানান, ২২-২৩ বছর বয়সে বিয়ে করেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনো রকমে দিন কেটে যেত। দশ বছর আগে স্ত্রী মারা যান। এরপর তিন মেয়ে নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েন। তারপরও হার মানেননি। মায়ের মমতা দিয়ে লালন-পালন করেন তিন মেয়েকে। বছর তিনেক আগে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। অর্থের অভাবে কোনো মেয়েকেই লেখাপড়া করাতে পারেননি। এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট।
আ. কুদ্দুস মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানুষের কাছে হাত পেতে লজ্জায় পড়তে চাই না। আমার শক্তি আছে, মনোবল আছে। ভিক্ষা পছন্দ করি না। আমার ছোট মেয়ে আমাকে গাছের কাছে নিয়ে ধরিয়ে দেয়। এরপর আমি উঠে যাই। যে যায় দেয়, তাতেই আমি খুশি। বর্তমানে খুব অসহায় অবস্থায় আছি। বৃষ্টির মধ্যে কেউ গাছে ওঠাতে চায় না। যদি পড়ে যাই। আমার ইচ্ছা, দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়া আর নিজের জন্য একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করা।’
কুদ্দুস মোল্লার প্রতিবেশী মো. রাজু খান বলেন, ‘আমাদের আশেপাশে যতগুলো বাড়ি আছে, সবারই নারিকেল ও সুপারি গাছ থেকে ফল পেরে দেন কুদ্দুস ভাই। তিনি অন্ধ হয়েও যথেষ্ট পরিশ্রমী। কখনো তাকে ভিক্ষা বা অন্যের কাছে হাত পাততে দেখিনি। আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি।’
ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আ. কুদ্দুস মোল্লার সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেওয়া ও প্রতিবন্ধী কার্ড করতে সহযোগিতা করেছি। তিনি খুব ভালো মানুষ। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেছেন।’
মো. আতিকুর রহমান/এসইউ/এএ/এমকেএইচ