ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

যেভাবে একদিন বাসাই হয়ে গেল স্কুল!

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:২৪ পিএম, ০৪ জুলাই ২০২০

আফরোজা নাইচ রিমা

করোনার কারণে দেশে দেশে স্কুল বন্ধ হয়ে বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে ইউনিসেফ। একইসাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা ও সামাজিক দূরত্ব অব্যাহত রাখতে চালু হচ্ছে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা। এতে একদিকে শিশুর বিকাশ যেমন চলতে থাকবে, তেমনি ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতিতেও কোন ছেদ পড়বে না।

সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) মাধ্যমে শিশুদের পড়াশোনা সচল রাখতে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার ধারাবাহিকতা বিষয়ক পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নে ইউনিসেফ ইতোমধ্যে সহযোগিতা শুরু করেছে। এর আওতায় ধারন করা ক্লাস সংসদ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশুরা ঘরে বসে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছে।

শুরু হলো আমাদের নতুন পথচলা। ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ হলো স্কুল। আমরাও গাইতে লাগলাম-
‘আজ আমাদের ছুটি
ও ভাই,
আজ আমাদের ছুটি।’
কিন্তু এ ছুটি যে দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা শাওরী, শাওদা, সামিদ আর তাদের চাকরিজীবী মা-বাবা কেউ কি জানতো! জেনেও কি কিছু করা যেত এ অদৃশ্য শক্তির সাথে? নব উদ্যমে, নব আলোকে শুরু করলো ওদের এগিয়ে চলা। ঘরই হয়ে গেল ওদের স্কুল।

শাওরী, শাওদা আর সামিদ নিয়মিত সকাল ৯টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছুটা হালকা ব্যায়াম করে, নাস্তা করে ছবি আঁকতে বসে। একই সাথে ছবি আঁকার পাশাপাশি গল্প লিখতে শুরু করে দিলো, আরবি পড়া শিখে গেলো আর গোপাল ভাঁড়ের মতো গল্পের বই তো আছেই।

তিন ভাই-বোন হালকা খেলাধুলা করে দুপুরবেলা খেয়ে তাদের শিশু ও প্রথম শ্রেণির ক্লাস দেখতো সংসদ টেলিভিশনে। তারা যখন দেখতো, ঠিক মনে হতো তিন ভাই-বোন মনোযোগ দিয়ে ক্লাসে বসে মিসদের কথা শুনছে। ওদের মায়ের কাছে মনে হতো- ‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র।’

ক্লাসের মাঝে ওরা যথানিয়মে টিফিন করতো। টেলিভিশনে ক্লাস শেষ হলে একটু খেলাধুলা করে ঘুমিয়ে পড়তো। এভাবে রোজ ওদের দিনের অধিকাংশ সময় কাটতো খুবই সাবলীল ও স্বাচ্ছন্দ্যে। মনে হতো, ওরা যেন আরও মনের সুখে গাইতে শিখলো-
‘আয় তবে সহচরী
হাতে হাতে ধরি ধরি।’

তিন ভাই-বোনকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ওদের মা অফিসে যেত বিকেল চারটায়। যেহেতু সে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছে। ওর মা-ও মনের সুখে গাইতো-
‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়
এই আকাশে’।
আর এ বিকেলের আকাশ তো একান্ত ওদের মায়ের। একদিন ওদের মায়ের আকাশের সাথে যে সব মায়ের আকাশেই আসবে নিজস্ব গতি আর ছন্দ। তখন হয়তো বিশ্ব আবার ‘ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে’ করে সচল করবে তার দুর্বার, দুরন্ত গতিতে পথচলা।

শুরু হলো আরেক নতুন ডিজিটাল বিশ্ব ছোঁয়ার গল্প। ওদের উদয়ন স্কুলের অন্যান্য ক্লাসের ন্যায় প্রথম শ্রেণিতে চালু হলো অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এ যেন ‘one-stop service’. ঘরেই ওদের স্কুল আরও শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দিলো বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। ওদের মায়ের মুখেও চিরঋণ আর কৃতজ্ঞতার সুর তাঁর প্রতি-
‘হে সখা মম হৃদয়ে রহো
সংসারের সব কাজে ধ্যানে জ্ঞানে হৃদয়ে রহো
নাথ, তুমি এসো ধীরে সুখ দুঃখ হাসি নয়ন নীড়ে
লহ আমার জীবন ঘিরে
সংসারের সব কাজে ধ্যানে জ্ঞানে হৃদয়ে রহো।’

আর এভাবে বাসাই হয়ে গেল পড়াশোনা, আর্ট ও গানের স্কুল, প্রার্থনা কেন্দ্র, ব্যায়ামাগার, খেলার মাঠ- যেখানে একজন মায়ের অবিরাম ছুটে চলা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো।

লেখক: সিনিয়র তথ্য অফিসার, পিআইডি।

এসইউ/এএ/এমকেএইচ

আরও পড়ুন