করোনা আক্রান্ত হলে কী করবেন?
হঠাৎ করেই আপনার জ্বর হয়েছে? কিংবা সর্দি ও হালকা খুশখুশে কাশি হচ্ছে? অথবা আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট ছিল, সেটা এখন বৃদ্ধি পেয়েছে? কিছু কিছু লক্ষণ করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাথে মিলে গেলে কীভাবে বুঝবেন যে, আপনি আসলেই করোনাভাইরাস সংক্রমিত। নাকি আপনার সিজনাল ফ্লু অথবা সাধারণ ঠান্ডা-কাশি হয়েছে? করোনা সংক্রমণ প্রমাণিত হলে তখনই বা আপনি কী করবেন? হাসপাতাল থেকে দূরবর্তী কোনো স্থানে বা বাসায় থাকলে এ সময় আপনার আসলে করণীয়ই বা কী? দুশ্চিন্তিত হবেন, না-কি যথাযথ জ্ঞান প্রয়োগ করে সঠিক ব্যবস্থা নেবেন?
জ্বর, সর্দি, কাশি হলে প্রথমেই আতঙ্কিত না হয়ে সাবধানতা অবলম্বন করুন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছাড়াও ইনফ্লুয়েঞ্জা, টনসিলাইটিস, ফ্যারিঞ্জাইটিস ইত্যাদি কারণেও জ্বর-সর্দি-কাশি দেখা দিতে পারে। অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, হৃৎপিণ্ড বিকলের মতো কারণে শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে। এমনকি করোনাভাইরাস সংক্রমণ মানেই মৃত্যু অবধারিত-বিষয়টি কিন্তু এমনও নয়। শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস মৃদু সংক্রমণ করে, যা সহজেই ভালো হয়ে যায়। প্রায় ১০-১৫% ক্ষেত্রে এটি মাঝারি থেকে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এ রকম ক্ষেত্রে অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
আপনার জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করুন। আপনার করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপস্থিতি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ১৭টি সেন্টারে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।
জ্বর, গলাব্যথা, শরীর ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ ভাব, হাঁচি, সর্দি, কাশির মত উপসর্গ দেখা দিলে প্রাথমিকভাবে বাসায় আইসোলেশনে থেকে বিশ্রাম নিন। কমলালেবু, মাল্টা, পেয়ারা, কামরাঙা ইত্যাদি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার এবং ডাল, বাদাম, ডিম, দুধ ইত্যাদি জিংক সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খান। দিনে অন্তত ৩ বার থার্মোমিটারের সাহায্যে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করে তা লিপিবদ্ধ করুন। জ্বরের জন্য প্রাথমিকভাবে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবনের পাশাপাশি ঠান্ডা পানি দিয়ে স্পঞ্জ করে শরীর মুছে ফেলুন, ক্ষেত্রবিশেষে জলপট্টিও দিতে পারেন।
সর্দি ও খুশখুশে কাশির জন্য এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন এবং লেবু-আদা দিয়ে তুলসি চা পান করতে পারেন। পাশাপাশি কুসুম গরম পানির সাথে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে গড়গড়াও করতে পারেন। এ সময় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কি-না এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। খেয়াল রাখবেন, আপনি দু’তিনটি শব্দ বলেই হাঁপিয়ে যাচ্ছেন কি-না। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত বা কষ্ট করে শ্বাস নিতে হচ্ছে কি-না। শ্বাসকষ্টের জন্য দৈনন্দিন কাজ-কর্মে অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে কি-না এবং পূর্ববর্তী দিনের চেয়ে বর্তমান দিনে শ্বাসকষ্টের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে কি-না।
প্রথম ২-৩ দিনের মধ্যে অবস্থার উন্নতি না হলে নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতাল, যেমন- উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি টেলিফোন বা মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সুযোগ থাকলে ভিডিও কলের মাধ্যমেও বিস্তারিত অবস্থা জানাতে পারেন। বৃদ্ধ হলে অথবা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বৃক্ক বা যকৃত বিকল জনিত সমস্যা, হৃদরোগ, হাঁপানি, গর্ভাবস্থা বা দীর্ঘদিন যাবৎ স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করলে অবশ্যই তা চিকিৎসককে জানাতে ভুলবেন না। নিজেও অবশ্যই আরও বেশি সতর্ক থাকুন।
তীব্র শ্বাসকষ্ট বা হঠাৎ করে শ্বাস নিতে কষ্ট হলে, বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভব করলে, ঠোঁট বা মুখমণ্ডল নীলবর্ণ ধারণ করলে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলে বা ডায়রিয়া শুরু হলে দেরী না করে ন্যাশনাল কল সেন্টার-৩৩৩, আইইডিসিআর-১০৬৫৫, বিশেষজ্ঞ হেলথ লাইন- ০৯৬১১৬৭৭৭৭৭ বা স্বাস্থ্য বাতায়ন-১৬২৬৩ নম্বরে যোগাযোগ করুন। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত সরকার অনুমোদিত করোনা আইসোলেশন সেন্টার বা নিকটস্থ সরকার নির্ধারিত করোনা চিকিৎসা কেন্দ্রসমূহে যোগাযোগ করে জরুরি চিকিৎসা নিন।
আতঙ্ক নয়, যথাযথ সচেতনতাই পারে করোনাভাইরাসকে রুখে দিতে। মৃদু লক্ষণ থাকলে বাড়িতে থেকেই বিশ্রাম ও চিকিৎসা নিতে পারেন। লক্ষণ মাঝারি বা তীব্র হলে সরকার অনুমোদিত যথাযথ চিকিৎসা কেন্দ্রের শরণাপন্ন হোন। নিরাপদ ও সুস্থ থাকুন। আতঙ্ক নয়, চাই সচেতনতা।
এসইউ/এমকেএইচ