ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

করোনা সঙ্কটে পুলিশের কমিটমেন্ট নিয়ে পথচলা

রাজীব কুমার দাশ | প্রকাশিত: ১২:২০ পিএম, ০৭ এপ্রিল ২০২০

‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’- বাঁচার আর্তি কবিগুরুও করেছেন। নশ্বর পৃথিবী! বাঁচা বড়জোর ৭০-৮০ বছর! দেখতে দেখতে কখন যে দুরন্ত শৈশব পেরিয়ে ভর বার্ধক্য জেঁকে বসে, আমরা টেরও পাই না। যারা ধনে-জনে সৌভাগ্যবান! তারা-ই অন্যদের তুলনায় একটু সহানুভূতি, সম্মানে থাকেন। অন্যরা? কোনভাবে মৃত্যুঞ্জয় সেজে মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে চোখের কোণে লেগে থাকা সাদা ময়লা মাড়িয়ে গড়িয়ে পড়া কান্নাখেকো জলে গান ধরেন- ‘দয়াল দিন তো গেলো, সন্ধ্যা হলো, পার করো আমারে।’

সবাইকে মরতে হবে! কেউ আগে কেউ বা পরে। কিন্তু আমি-তুমি-সে কেউ কি মরতে চাই? না, মোটেও না! কারো এখনো জীবনের সংজ্ঞা জানা হয়নি! পৃথিবীর রূপ দেখা, অর্থ-বিত্ত, প্রাচুর্য, যশ, ভোগ এখনো অনেক বাকি! সিজোফ্রেনিয়া রোগী, প্রতারিত প্রেম-বিরহে কাতর, জীবন থেকে পালানো প্রেমিক, রোগ-যন্ত্রণা কাতর মৃত্যুপথযাত্রীও এখন মৃত্যু কামনা করেন না। সবার একটা রোগের ভয় বা আতঙ্ক জেঁকে বসেছে ‘করোনাভাইরাস’। কেউ বলেন, পাপাচার বিশ্ব, প্রকৃতির প্রতিশোধ, পৃথিবীর ব্যালেন্স, প্রতি শতবর্ষ পরে প্লেটের পরিবর্তনের ফলে এ অবস্থা! এ কারণে আগেও একাধিক সমৃদ্ধ সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে। আবার কেউ বলেন, ‘করোনাভাইরাস আমার হবে না, অমুক-তমুকের হবে।’ আরো কত কী!

এমন মৃত্যু! কেউ পাশে থাকে না! চিকিৎসা নেই! এমনকি সৎকারে আত্মজা বা আপনজন পাশে থাকে না। এ ধারণা, চিন্তা এখন সবাইকে জেঁকে বসেছে! আসলে কি তাই? এ পৃথিবীতে মড়ক রোগ কি প্রথম? একটু পেছনে ফেরা যাক-
১. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ২০১১-২০১৭ এ সাত বছরে বিশ্বব্যাপী ১৩০৭টি মহামারীর মতো ঘটনা ঘটেছে।
২. থুকিডাইডিসের রচনা থেকে আমরা জানি, পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধ যখন সংঘটিত হয়েছিল, গ্রিক নগররাষ্ট্র এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে; তখন টাইফাস মহামারীতে এথেন্সের জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ লোক মারা যায়। যার কারণে স্পার্টার জয়লাভ সম্ভব হয়েছিল।
৩. দুনিয়ার বাতিঘর নামে পরিচিত রোম ১৬৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৮০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জনমানবশূন্য হয়ে যায় গুটি বসন্তের কারণে। সে সময় রোমকে বলা হতো ‘ভূতের নগরী’।
৪. খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ সালে গ্রিসের ফুসফুস নামে খ্যাত এথেন্সে বসন্ত রোগে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়।
৫. ২৫০ খ্রিষ্টাব্দে সাইপ্রিয়ানের প্লেগ মহামারী রোমান সাম্রাজ্যকে বিপর্যস্ত করে দেয়। পরবর্তী দুই শতাব্দিতে বিউবনিক প্লেগে প্রায় ১০ কোটি মানুষ মারা যায়। এ রোগ মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূ-মধ্যসাগরীয় এলাকায় ছড়ায়। যা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মহামারী। মানুষের মরা পচা দুর্গন্ধ থেকে বাতাস দূষিত হয়। এমনকি পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ সব মারা যায়।
৬. ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দে শুধু ভারত ও পূর্ব এশিয়ায় কলেরা রোগে মারা যায় লাখ লাখ মানুষ।
৭. ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে আধুনিক যুগেও প্লেগ ছড়ায়। এতে চীন, ভারত ও হংকং মিলে ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি লোক প্রাণ হারায়।
৮. ১৯২০ সালে বসন্ত রোগে মারা যায় পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষ।
৯. ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিস্কৃত হয়।
১০. ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে সৌদি আরবে ‘সার্স ভাইরাস’ সংক্রমণ ঘটে। আক্রান্তদের ৩৫ শতাংশ মারা যায়। যা উটের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে।
১১. ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে চীনের উহান শহরে নভেল করোনাভাইরাস ঘিরে ক্রমেই ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। এখন বিশ্বময় প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় হালনাগাদ তথ্য পাচ্ছি। খ্রিষ্টপূর্ব-পরে পৃথিবীতে অনেক অজ্ঞাত ভাইরাস বা মড়ক রোগে সমৃদ্ধ নগর সভ্যতা হারিয়ে গেছে। তা এখনো অজানা।

সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে মড়ক রোগের সংক্রমণ হয়েছে, ভাঙা-গড়া রীতি-নীতিতে পৃথিবীর সভ্যতা প্রকটিত হয়েছে। বিভিন্ন ভয়াবহ মড়ক রোগের প্রতিষেধক বা টিকা আবিস্কৃত হয়েছে। এ করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে অচিরে হয়তো বা পাবো। কিন্তু আজ বিশ্বময় আমাদের ও প্রজন্মান্তর অনেক অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বিশ্বময় এতোদিন আমাদের একমাত্র চরম উদ্দেশ্য ছিল, অমানবীয়-দানবীয় চিন্তায় নিমগ্ন! শুধু অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, দানবীয় চিন্তায় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ, মহাদেশ কেন্দ্রিক অশুভ প্রতিযোগিতা। দানবীয় নিউক্লিয়ার, জৈব, রাসায়নিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা! কার ভান্ডারে কতো পারমাণবিক, বিষাক্ত জৈব, রাসায়নিক মজুত, মহাকাশে যুদ্ধ চিন্তায় নতুন নতুন প্রজেক্ট! অন্য গ্রহরাজ হয়ে দৈত্যারি করা, সমৃদ্ধি চিন্তা, সেকেন্ড হোম, জৈব প্রজেক্ট! আরও কত কী?

আমাদের আসলে পৃথিবীজুড়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো আমরা মানুষ নামের অমানুষগুলোর চিন্তার রাজ্যে ত্যাগী হতে পারিনি! হয়েছি দিনে দিনে প্রচণ্ড রকমের হিংসুটে ভোগী। ভোগ চিন্তায় চরম স্বার্থপর দুর্নমিত হয়ে ‘ইকো সিস্টেম’ বদলে ফেলে প্রকৃতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খাদ্য, আবাস, জল, স্থল, বন-বাদাড়, অন্তরীক্ষ এমনকি একান্ত মুহূর্তগুলো পর্যন্ত বিশ্রীভাবে বাণিজ্যিক ভবনায় প্রোডাক্ট করছি। আমরা কথিত মহাপণ্ডিত হয়ে গুলিয়ে ফেলছি প্রকৃতি মানবীয় শৃঙ্খল! পৃথিবীজুড়ে নেই কোনো জবাবদিহিতা! জোর যার মুলুক তার! এখন সত্যি বলতে কি! আমি ‘মানুষ’ বলতে নিজের প্রতি ঘৃণা আসে।

ধর্ম নিয়ে স্পর্শকাতর বিষয়ে আমি লিখি না! পৃথিবীতে এখন ক্রমেই ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’ চিন্তাগুলো মরে যাচ্ছে। প্রচণ্ড ঘৃণা, বিদ্বেষ নিয়ে ঘুমন্ত সাম্প্রদায়িক দৈত্যকূল
সরব হচ্ছে। দুর্বাশা জীবনবোধ আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। সৃষ্টির সেরা জীবের পরিচয় এখন ধর্মের বিভাজনে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন! মানুষ পরিচয়ে বাঁচা মানুষগুলো আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীজোড়া।

এখন আমাদের করোনাভাইরাস ক্রাইসিস মোকাবেলা জাতীয় ইস্যু! মানবীয় সরকার দেশের আপামর জনগণকে বৈশ্বিক ঘরানার আবর্তে দক্ষ টেকসই মানবসম্পদে পরিণত করেছেন। আজ বিশ্বজুড়ে আমাদের মানবসম্পদ রেমিটেন্স যোদ্ধাদল দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দৃশ্যমান ভূমিকা রেখে চলেছেন।

আপামর জনগণের রাষ্ট্রের প্রতি কমিটমেন্ট থাকে, সে কমিটমেন্ট চিন্তাও হৃদয়ে লালন করে দেশপ্রেম, সততার কাণ্ডারি হয়ে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান, আজ আমাদের প্রকৃত কমিটমেন্ট কাণ্ডারির সংখ্যা অনেক কম। ব্যক্তিগত লাভ চিন্তা এখনো মজ্জাগত! আজ করোনাভাইরাস ক্রাইসিস মোকাবেলায় সর্বাগ্রে নিজের রেশন, বেতন দিয়েও রাত-দিন দেশময় জনগণকে সচেতন করে আসছে বাংলাদেশ পুলিশ।

রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি কমিটমেন্ট অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে জনবান্ধব পুলিশ। মহান স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনকের ডাকে সাড়া দিয়ে পরিবার-পরিজনের মায়া ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছে। আজ বিশ্বময় করোনাভাইরাস সঙ্কট নিরসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৩১ দফা নির্দেশনা পেয়ে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

কমিটমেন্টে ভরপুর জীবন আমাদের, পরিবার-প্রিয়জন, কর্মক্ষেত্র, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব। জীবন চলার পথ মানেই কমিটমেন্ট! শুধু ধরনে ভিন্নতা। প্রজাতন্ত্রের পেশাজীবীদের চলার পথে সর্বাগ্রে জনকল্যাণমুখীতা, বিজ্ঞান ভিত্তিক সু-শৃঙ্খল জ্ঞান ও তত্ত্ব, পেশাগত কর্তৃত্ব, সামাজিক স্বীকৃতি ও নৈতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে সমাজবিজ্ঞানী Warner boehm মত প্রকাশ করেছেন।

আজ দেশে জনকল্যাণমুখী বা জনবান্ধব পেশাদারিত্ব কমিটমেন্ট নিয়ে মানবীয় বহুমাত্রিক কাজে জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে শতভাগ সততা ও আন্তরিক হয়ে কাজ করে চলেছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গাজীপুর জেলা পুলিশের মানবীয় কমিটমেন্ট ও সচেতনতা এখন সবার জন্য অনুকরণীয়। ঘরে, বাইরে, হাট-বাজার, গার্মেন্টস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সম্মিলিত বলয় তৈরি করে প্রতিরোধে পথচলা। জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে নিজের রেশন নিয়ে কোনো ফটোসেশন বা প্রচার ছাড়া প্রয়োজনমতো সামাজিক সম্মান-মর্যাদা সমুন্নত রেখে বিলিয়ে দিচ্ছেন ঘরে ঘরে। তার মানবীয় জনবান্ধব সচেতন আচরণ আজ করোনাভাইরাস সঙ্কটময় সময় ‘ভয়’ জয় করে প্রতিরোধ শপথে- জনকল্যাণ কমিটমেন্ট নিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

লেখক: কবি ও পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ।

এসইউ/এমকেএইচ

আরও পড়ুন