কিডনির ক্যান্সার থেকে বাঁচতে ধূমপান ছাড়ুন
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিডনির ক্যান্সার শনাক্ত করতে দেরি করে ফেলেন অনেকে। ততদিনে ক্যান্সার কিডনি ছেড়ে ফুসফুস, পেটে ছড়িয়ে পড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তবে নারীদের চেয়ে পুরুষের এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ধূমপানকে দায়ি করা যায়। তাই এ ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায় জেনে রাখা জরুরি।
কিডনির ক্যান্সারের লক্ষণ: প্রাথমিক অবস্থায় এ ক্যান্সারের তেমন কোন উপসর্গ ধরা পড়ে না। তবে একটু বেড়ে গেলে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হতে থাকে। যা একেবারে যন্ত্রণাহীন। তাই দু’একদিন পরপর বা সপ্তাহে কয়েক দিন এরকম হলে সাবধান হতে হবে। তবে ব্যথাহীন ব্লিডিং হলে ক্যান্সার কিডনি ছেড়ে এখনো অন্য অঙ্গে পৌঁছায়নি। তাই দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে প্রাণহানি অনেকটা এড়ানো যায়। ক্যান্সার ছড়িয়ে গেলে নানারকম সমস্যার লক্ষণ দেখা যায়। যেমন কারো ফুসফুসে ছড়ালে তখন খুব কাশি, শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। ব্রেনে ছড়ালে অসহ্য মাথা যন্ত্রণা হতে পারে। মূলত ফুসফুস ও পেটের ভেতরে কিডনির পেছনের দিকে কিছু ব্লাড ভেসেলের লিম্বে কিডনি ক্যান্সার ছড়াতে পারে। পুরুষরা অনেক সময় প্রস্রাবের সঙ্গে ব্লিডিংকে প্রস্টেট, ব্লাডার বা ইনফেকশনের সমস্যা বলে মনে করেন। তাতে চিকিৎসায় ভুল হয়। প্রস্রাবের সময় ব্লিডিং হলে এবং তখন জ্বালা করলে বুঝতে হবে তা কিডনি ক্যান্সার নয়। অন্য সমস্যাও হতে পারে।
কিডনির ক্যান্সারের কারণ: এ ক্যান্সারের মূল কারণ নির্দিষ্ট নয়। তবে যারা অতিরিক্ত ধূমপান করেন; তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একটু বেশি। তাই কিডনির ক্যান্সার এড়াতে ধূমপান ছাড়া ভালো। ধূমপান ছাড়লে ফুসফুসের ক্যান্সারের সঙ্গে কিডনির ক্যান্সারের ঝুঁকিও অনেকটা কমে। এছাড়া যাদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি; তাদেরও ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণও হতে পারে। তবে তার সংখ্যা খুবই কম।
কিডনিতে লাম্প: কিডনি ক্যান্সার চট করে ধরা পড়ে না। অন্য সমস্যার কারণে পেটে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান করতে গিয়ে এ ক্যান্সার ধরা পড়ে। দেখা যায়, কিডনির ওপর ছোট একটি অংশ ফুলে আছে। তারপর ওই লাম্পের কিছু পরীক্ষা করে ধরা পড়ে ক্যান্সার। সবসময় লাম্পগুলো ক্যান্সারযুক্ত হয় না। যদি ক্যান্সার থাকে তবে তা আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যানের সময় বিশেষ কিছু সংকেত দেখে শনাক্ত করতে পারেন।
যে পরীক্ষায় ধরা পড়ে: প্রস্রাবের সঙ্গে ব্লিডিং বা অন্য কারণে কিডনি ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকলে প্রথমেই কেইউবি সিটি স্ক্যান করাতে হয়। সাধারণত কিডনি, প্রস্রাবনালি, ব্লাডারে কোন অসুখ হলে প্রস্রাবের সময় ব্লিডিং হয়। তাই এ অংশে বিশেষ নজর দিতে কেইউবি সিটি স্ক্যান করা হয়। যখন এটা দেখেও কিডনি ক্যান্সার নিশ্চিত করতে পারেন না; তখন এমআরআই করা হয়। অনেক সময় কিডনির লাম্প খুব অদ্ভুত দেখলেও এমআরআই করে দেখতে হয়। তবে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যানেই কাজ হয়। এরপর আরও কিছু টেস্ট করে দেখা যায় অন্য কোথাও ছড়িয়েছে কি-না। মূলত বুক ও পেটের আরও কিছু পরীক্ষা করে নেওয়া হয়।
কিডনির ক্যান্সারের চিকিৎসা: সিটি স্ক্যান রিপোর্টে ক্যান্সারের ব্যাপারে নিশ্চিত হলে প্রথমেই সার্জারি করে বাদ দিতে হয়। অন্য ক্যান্সারে যেমন বায়োপসি করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার দরকার নেই। কারণ স্ক্যান রিপোর্টই যথেষ্ট। ক্যান্সার কতটুকু ছড়িয়েছে তা দেখে কতটা অপারেশন করা হবে তা ঠিক হয়। ক্যান্সার যদি শুধু কিডনিতেই অনেকটা অংশজুড়ে থাকে এবং তা ভবিষ্যতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তবে পুরো কিডনিই কেটে বাদ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে অন্য কিডনির সাহায্যে রোগী ভালো থাকতে পারে। অনেক সময় কিডনির অল্প অংশজুড়ে ক্যান্সারযুক্ত লাম্প থাকলে, তা কিডনির ওই অংশ থেকে শুধু বাদ দেওয়া হয়।
স্বস্তির কথা: দুটি কিডনির মধ্যে যে কিডনিতে ক্যান্সার হয়, শুধু সেটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপর কিডনি একদম ঠিক থাকে। এমনকি আক্রান্ত কিডনি থেকে অন্যত্র ক্যান্সার ছড়ালেও দ্বিতীয় কিডনিতে ছড়ানোর কোন আশঙ্কা থাকে না। কিডনি থেকে কোথাও না ছড়ালে রোগীর প্রাণহানির ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। বর্তমানে উন্নতমানের কেমো বা টার্গেটেড থেরাপির দ্বারা অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের চিকিৎসাও ভালো হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে অন্য অংশে ক্যান্সারের স্পট পাওয়া গেলে রেডিয়েশন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এক থেকে পাঁচ দিন রেডিওথেরাপি করে ক্যান্সার নির্মূল করা হয়। কিডনি থেকে ক্যানসার ব্রেন, ফুসফুস, হাড়ে ছড়ালে সাধারণত রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়।
এসইউ/এমএস