সূর্যাস্তের পরও আলোকিত দ্বীপচর মন্নিয়া
সৌর বিদ্যুতের আলোয় এখন আলোকিত হচ্ছে যমুনার দুর্গম দ্বীপচর মন্নিয়া। অথচ যুগ যুগ ধরে আধুনিক জীবনযাত্রা থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষের কাজের গতি সূর্যাস্তেই থেমে যেত। এবার বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে এ চরের জীবনযাত্রা পাল্টে যেতে শুরু করেছে।
যমুনার তিনটি শাখা নদী বেষ্টিত জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার দুর্গম দ্বীপচর মন্নিয়া। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় আধুনিক জীবনযাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে। বালুময় রাস্তাঘাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা কোনো কিছুতেই উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি।
সরেজমিনে জানা যায়, ইসলামপুরের গুঠাইল বাজার থেকে একমাত্র বাহন নৌকায় ১৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় মন্নিয়া। নৌকা পাড়ে ভেড়ার পর খাড়া তীর বেয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার বালুময় পায়ে হাঁটা পথ, তারপর মন্নিয়া বাজার। চরজুড়ে বালু আর কাঁচা মাটির রাস্তা। আধুনিক যানবাহনের পরিবর্তে চোখে পড়ে ঘোড়ার গাড়ি আর বাইসাইকেল।
ফসলি জমির মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে বসতবাড়ি। বেশিরভাগই ছন আর দু’চালা টিনের ঘর। কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল এখানকার মানুষ। জমিতে সেচ দিতে স্যালো মেশিন থাকলেও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নেই। চরে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ ও নিম্নমাধ্যমিক দুটি স্কুল এবং এবতেদায়ি মিলিয়ে তিনটি মাদ্রাসা রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ভালো শিক্ষক আসতে চান না। যাদের নিয়োগ রয়েছে; তারাও ঠিকমতো আসেন না। ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রেও চরটি অনেক পিছিয়ে।
দিনে লেখাপাড়া করলেও সন্ধ্যার পর কেরোসিনের বাতির আলোয় তা আর হয় না। ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে কেবল মন্নিয়ারচর বাজার। হোটেল, গ্রামীণ কসমেটিক্স, কাপড়, মনোহারি আর মেকানিক দোকান ছাড়াও চরে উৎপাদিত সবজি, দুধ, ডিম, যমুনার মাছের পসরা নিয়ে বসেন। দিনের বেলা বিক্রেতা আর ক্রেতার পদচারণা থাকলেও সন্ধ্যার পর তা প্রাণ হারায়। আর্থ-সমাজিকভাবেও ভঙুর চরের বাসিন্দারা।
কিন্তু এ দৃশ্যপট এখন পাল্টে যেতে শুরু করেছে। দুর্গম এ চরে ভিনসেন জিটেক লিমিটেডের উদ্যোগে স্থাপিত হয়েছে সোলার মিনি গ্রিড বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যার মাধ্যমে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো। ফলে এখন অন্ধকার নামলেও থেমে যায় না জীবনের গতি। সৌর বিদ্যুতের আলোয় জীবন পাল্টে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মন্নিয়া চরের বাসিন্দারা।
মন্নিয়া বাজারের মেকানিক মো. নুরুল ইসলাম জানান, এতদিন আমরা জেনারেটর দিয়ে বৈদ্যুতিক কাজ করতাম। বাজারে বিদ্যুৎ আসায় আমরা এখন যেকোনো সময় কাজ করে দিতে পারি। গ্রাহকের টাকাও কম খরচ হচ্ছে। স্কুলশিক্ষার্থী জাকিউল ইসলাম এবং আশামনি জানায়, আগে রাত ৮টার বেশি পড়তে পারতাম না। এখন ১১টা পর্যন্ত লেখাপড়া করি, কোনো সমস্যা হয় না।
প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. ইসরাফুল ইসলাম বলেন, সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিবেশ বান্ধব। এ বিদ্যুতের লোডশেডিং হওয়ার সম্ভাবনা কম। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, দুর্গম মন্নিয়া চর সোলার প্ল্যান্টের মাধ্যমে আজ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। পিছিয়ে থাকা চরের মানুষের জীবনমান পরিবর্তনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
শুভ্র মেহেদী/এসইউ/আরআইপি