একুশের চেতনায় একুশে ইয়াং ফোরাম
সমাজের উন্নয়নে কাজ করার শখ ছিলো তার বহুদিনের। তিনি স্বপ্ন দেখতেন মানুষকে আলোকিত করার। ভাবতেন কীভাবে পাশে থাকা যায় সাধারণ মানুষের। অনেক চিন্তা-ভাবনা করলেন। একসময় ঠিক করলেন একটি সংগঠন করবেন তরুণদের নিয়ে। তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিবেন সুন্দর সমাজ গড়ার স্বপ্ন। পাশে দাঁড়াবেন মানুষের।
সামাজিক সংগঠন করবেন, এত বড় কাজ, এত দায়িত্ব; সব মিলিয়ে সাহসে যেন কুলোয় না। দ্বারস্থ হলেন বন্ধুদের। বললেন তার পরিকল্পনার কথা। পাশাপাশি চাইলেন পরামর্শ। বন্ধুরাও সমমনা। তারা একযোগে রাজি হয়ে গেলেন। অতঃপর অনেকটা পথ হেঁটে, চড়াই উৎরাই পেরিয়ে গড়ে তোলা হয় একটি সংগঠন। যার নাম রাখা হয় ‘একুশে ইয়াং ফোরাম’। নাম দেখেই বোঝা যায়, সংগঠনের তরুণরা তাদের ঐহিত্য ও সংস্কৃতিকে লালন করে। ধারণ করে জাতীয় চেতনা ও ঐক্য। বলছিলাম একুশে ইয়াং ফোরাম এবং এর প্রতিষ্ঠাতা মো. আবু সালেহের কথা।
চাঁদপুরের কচুয়ার পালাখালের উত্তর নয়াকান্দি গ্রামে প্রতিষ্ঠিত একুশে ইয়াং ফোরাম বর্তমানে চার বছরে পা দিয়েছে। যা প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের প্রথম দিকে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে আবু সালেহ দায়িত্ব পালন করছেন। কথা হয় এ উদ্যোগী, সমাজসচেতন মানুষটির সঙ্গে। মুখে চিরাচরিত হাসি দিয়ে বললেন, ‘আমি তখন সবে অনার্স শেষ করেছি। সবসময়ই সমাজের জন্য কিছু করতে চাইতাম। কিন্তু কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। শেষে সংগঠনটির কথা মাথায় এলো। পড়াশোনার পাশাপাশি গড়ে তুললাম সামাজিক সংগঠনটি।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাসেল রানা বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের গ্রামের তরুণরা যাতে সমাজ উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আমরা শিক্ষা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কাজ করছি। শিক্ষা অর্জনের জন্য এলাকার মানুষকে সচেতন করে থাকি। শিশুকে যথাসময়ে স্কুলে ভর্তি করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বলে আসি। মেধাবী ও গরিব শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতাও করে থাকি। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা নৈতিক শিক্ষায় বলীয়ান হোক। শিক্ষার্থীরা আলোকিত হলেই দেশ আলোকিত হবে। মাদক, ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করে থাকি।’
কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন কিনা- প্রশ্ন করতেই সংগঠনের সহ-সভাপতি মো. রফিক খান ও রবি উল্লাহ প্রধান কী যেন একটু ভাবেন। তারপর বলেন, ‘আসলে সব কাজেই প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। অনেকে ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে চান না। আমাদের প্রথম প্রথম সমস্যা হতো। অনেকে অনেক কথা বলতেন। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে গেছি। এখন আগের চেয়ে অবস্থা অনেক বদলেছে। মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। এলাকাবাসী আপ্রাণ সহযোগিতা করে। ভালো কাজের প্রশংসা করে। বিশেষ করে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা মো. মিজান সরকার আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেন। এলাকাবাসীর উৎসাহ আমাদের পথচলার প্রেরণা।’
২০১৪ সাল থেকে একুশে ইয়াং ফোরাম বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছে। এর মধ্যে কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, ঈদুল আজহায় রাস্তা মেরামত, ইসলামি সম্মেলন, সহযোগিতা, ডে-নাইট মিনি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ইফতার মাহফিল উল্লেখযোগ্য।
সংগঠনের ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা মো. মিজান সরকার বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যেতে চাই। সুন্দর সমাজ গঠন হবে, মানুষ শিক্ষা সচেতন হবে এবং সামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে- এমন সমাজ আমাদের কাম্য। আমাদের হাতে অনেকগুলো কাজ আছে। আমরা আগামীতে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাবৃত্তি দেব। কুইজ কুইজ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সচেতনতামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা চাই- সমাজের ভালো মানুষ, বিত্তশালীরা আর্থিকভাবে, শারীরিকভাবে এ কাজের সঙ্গী হোন।’
এসইউ/আইআই