ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

বৃদ্ধাশ্রম থেকে বলছি...

প্রকাশিত: ০৮:৩৮ এএম, ১৮ জুলাই ২০১৫

খোকা, ভালো আছিস নিশ্চয়! তোকে এভাবে লিখব, অমন সাহস করিনি কখনো। কিন্তু কেন জানি আজ মুখ ফেরাতে পারছি না। প্রতিক্ষণ মনে পড়ছে তোকে।

জানি, বিরক্ত হবি। তবুও একটু সাবধানের জন্যই সাহস করে লিখতে চাইছি।

খোকা জানিস, কাল রাতে তোকে নিয়ে বাজে একটি খোয়াব দেখেছি। অমন সর্বনাশা খোয়াব দেখার পর কেমন আছিস, খুব জানতে ইচ্ছে করছে।

তুই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যাওয়ার পর, নিত্যরাতে তোর ছবিটি বুকে নিয়ে ঘুমাই। আমার বুকের ধন তো এটিই, তাই না? মা হয়ে কেউ ছেলের ছবি অন্য কোথাও রাখতে পারে, বল?

রোজ রোজ আঁচল দিয়ে মুছে রাখি ওটি। ও ছাড়া আমার কি আছে আর? কাল রাতেও যত্ন করে মুছে নিয়ে বুকে করে ঘুমিয়েছিলাম।

মধ্যরাতের খোয়াব নাকি ভালো হয় না। আমার কপালেও ঠিক তাই হলো।
দেখি, একটি পিঁপড়া ছবির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। যে-ই তোর গালের ওপর বসেছে, অমনি চিৎকার করে উঠেছি।

নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি নি। বয়স হয়ে গেছে তো, তাই। আমার কি দোষ, বল? আমি চিৎকার না দিলে হারামজাদা পিঁপড়া দিব্যি কামড় বসিয়ে দিত। তাতে আমার বুক যে খান খান হয়ে যেত।

মনে পড়ছে, আঁতুর ঘরের সেই রাতের কথা। সবে তিন দিন তোর বয়স। তোর দাদি আমার কাছে।  তোকে পাওয়ার আনন্দে আগের দু’রাত এক বিন্দু ঘুমও আসেনি। একটু তন্দ্রা তন্দ্রা ভাব। এর-ই মধ্যে পিঁপড়ে কখন যে তোর গালে কামড় বসিয়েছে, বুঝতে পারিনি। লাল তুলতুলে গাল যেন রক্তবর্ণ হয়ে গেল।

আমার কান্না আর থামায় কে? অন্য ঘর থেকে তোর বাবা দৌঁড়ে এসে প্রথমে অবাক হলো। এরপর মা-ছেলের আদুরে ভঙ্গি দেখে মুচকি হাঁসি দিয়ে বেরিয়ে গেল।

অমন আহ্লাদ দেখে, ওই রাতে তোর দাদি আমাকে বকনি দিয়ে বলছিল, ‘দেখিস এই ছাওল তোরে একদিন অনেক কষ্ট দিব।’

আমি বিশ্বাস করিনি। অভিমান করে পাল্টা জবাবে বলোছিলাম,‘আপনার মুখে ছাই পড়ুক।’ তাই পড়েছে।

তোর দাদি বেঁচে থাকলে আজ বলতাম,‘দেখুন-আমার খোকা আমাকে কত যত্ন করে বৃদ্ধাশ্রমে রেখেছে।’

কেন জানি গলাটা ধরে আসছে রে? তবে হ্যাঁ, ও কিছু না। দিব্যি বলছি, আবেগে নয়, বুকের ব্যাথার কারণে অমন হতে পারে।

খোয়াব দেখার পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাট থেকে পড়ে গিয়াছিলাম। সেই থেকে বুকের ব্যাথা বেড়েছে। কপালে সামন্য আঘাত পেয়েছি। ডজন খানিক সেলাই দেয়ার পর রক্ত বন্ধ হয়েছে। কোমরের কাছে ডান পায়ের জয়েন্ট একটু সরে গেছে। ডাক্তার বলেছে, ও আর ভালো হবে না। লাঠিতে ভর করে হাঁটা যেত। কিন্তু তাও বুঝি আর হবে না। সকাল থেকেই পিঠে টান পাচ্ছি। তোর বাবাও চলে যাওয়ার সময় অমন টানের কথা বলেছিল। ও কারণেই আর ভরসা পাচ্ছি না।

অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হওয়ার পর স্ট্রেইচারেই শুয়ে আছি। প্রসাব-পায়খানাও তাতেই করতে হচ্ছে।

কিন্তু অচেতন অবস্থায় কে যেন পরিষ্কার করে দিয়ে গেছে, বুঝতে পারিনি। সম্ভবত ডাক্তার ছেলেটি-ই হবে। ওর নামও খোকা।

বৃদ্ধাশ্রমে আসার পর থেকেই ও আমাকে ‘মা’ বলে ডাকে। ওর মা নাকি দেখতে ঠিক আমার মতোই ছিল। রোজ রোজ ওর বাড়িতে নেয়ার বায়না ধরে। আমি সায় দিইনি।

ওর বাড়িতে গেলে তোর মান যেতে পারে, তাই কোনোদিন পাত্তা দিইনি। একদিন ওর স্ত্রীও এসেছিল আমাকে নিতে। ওর নাম খেয়া। যাইনি বলে কি অভিমানের কথা গো বাপু?

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলছিল, ‘আমি যদি তোমার ছেলের বউ হতাম, তাইলে এভাবে ফিরিয়ে দিতে পারতে না। বল, পারতে? আমার যে কপাল পোড়া, তাই তুমি গেলে না’ ওইদিন ওর প্রশ্নের কোনো জবাব সরছিল না।

তবে ওদের কথা দিয়েছি, মৃত্যুর পর আমার কবর ডাক্তার খোকার মায়ের কবরের পাশেই দিতে।

ওরাও বলেছে, আমার লাশ তোর কাছে নেবে না। লাশ দেখে বিরক্তির ছলে তোর কষ্ট হতে পারে, তা যে আমার সইবে না।

ঈদের দিন আশীর্বাদ করছি, তোর সন্তানকে নিয়ে যেন এমন সর্বনাশা খোয়াব না দেখিস।

এসএস/এসকেডি/এমএস