স্বচ্ছলতায় জেগে ওঠার উচ্ছ্বাসে ‘সক্ষম’
ভাড়া রিকশায় তো আর চলছে না। আয়ের একটা অংশ মহাজনকে দিয়ে যা থাকে তাতে সংসার চালানোই দায়। সঞ্চয় তো সেখানে দুঃস্বপ্ন। তবুও স্বপ্ন বোনেন মিরপুর ১২ নম্বর বস্তির বাসিন্দা আব্দুল গণি (৫৮)। যাত্রী কম কিংবা অসুস্থতায় আয় কম হলেও মহাজনের জমার টাকা কম হয় না অনেক সময়।
নিজের সংসারের সব ভার বৃদ্ধ আব্দুল গণির কাঁধেই। তিন ছেলে বড় হয়ে যাওয়ার পর তারা নিজ নিজ পরিবার নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে। সংসারের চাকা সচল রাখতে আব্দুল গণির সহযোদ্ধা হয়েছেন স্ত্রী চম্পা বেগম। তিনি মানুষের বাড়িতে বুয়া হিসেবে কাজ করেন। দিনশেষে দু'জনেরই দীর্ঘশ্বাস হয়ে বুকে বিঁধে থাকে মহাজনকে জমা দেওয়া টাকা। সেই দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়, যখন সে টাকা জমা দেওয়ার পর নিজেদের জন্য অবশিষ্ট কিছুই হাতে থাকে না।
আব্দুল গণির মতো জীবনযুদ্ধে হারতে বসা আরেকজন মো. আব্দুল সালাম। নদী ভাঙ্গনে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে গত বছর ঢাকায় আসেন সালাম। স্ত্রী এবং আদরের দুই মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে মাথা গোঁজার ঠাই পেয়েছেন দুয়ারিপারা বস্তির একটি ছাপরা ঘরে। বস্তির পাশের রিকশার গ্যারেজ থেকে আধা বেলার চুক্তিতে রিকশা ভাড়ায় চালানো শুরু করেন পরিবারের মুখে দুইবেলা অন্ন জোগানোর আশায়। কিন্তু সে আশায় বাধ সাধলো ভাড়ার রিকশার অল্প টাকা, যে টাকার সিংহভাগ দিয়ে দিতে হয় রিকশার প্রকৃত মালিককে। অগত্যা বেঁচে থাকার তাগিদে তার স্ত্রী মোসা. খালেদা বেগম মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন । সালাম ও তার স্ত্রীর খুবই ইচ্ছা ছিল দুই মেয়ে ইয়াসমিন এবং শারমিনকে পড়াশুনা করাবেন। কিন্তু যেখানে দুবেলা দুমুঠো ভাত যোগার করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল সেখানে সন্তানদের পড়াশোনা করাবার ইচ্ছা যেন স্বপ্নই রয়ে গেল তাদের। ভাড়ার রিকশা দিয়ে অভাবনীয় কষ্টে দিন পার করছিলেন সালাম ও তার পরিবার। অনেক দিন থেকেই নিজের একটি রিকশা কেনার স্বপ্ন ছিল সালামের।
জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য কোনো অসৎ পথকে অবলম্বন না করে, প্রতিদিন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যারা লড়াই করে চলেছেন, সেই সকল যোদ্ধা ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে ‘সক্ষম’ নামে দেশব্যাপী একটি বিশেষ প্রকল্প পরিচালনা করছে উন্নয়ন সংস্থা অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি এই প্রকল্পে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। আব্দুল গণি ও আব্দুল সালামসহ মিরপুরের আরও ৪ জন রিকশাওয়ালার জন্য ৬টি নতুন রিকশা ‘সক্ষম’ প্রকল্পে প্রদান করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বর্তমানে নতুন রিকশা পেয়ে আব্দুল গণিকে আর আগের মতো টাকা জমা দিতে হয় না । রিকশা চালিয়ে যে টাকা পান সব টাকাই সংসারের কাজে খরচ করতে পারেন। ‘সক্ষম’ প্রকল্পের আওতায় নতুন রিকশা পেয়ে অনেক খুশি আব্দুল সালামও। মহাজনকে টাকা জমা দেওয়ার কষ্ট থেকে এখন মুক্ত। কিছু টাকা সঞ্চয় করার চেষ্টা করছেন এখন। তাদের মতোই স্বাচ্ছন্দ্যের হাসি ফুটেছে রিকশা পাওয়া বাকি রিকশাচালকদের মুখেও।
এখন কেমন আছেন আব্দুল সালাম? তিনি জানান, “আগের চেয়ে অনেক ভালো। মহাজনের জমার টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। এখন কিছু টাকা জমাতেও পারি। মেয়ে দুটিকে লেখাপড়াও করাতে পারছি।” এভাবেই গণি আর সালামের মতো জীবনযুদ্ধে হারতে বসা মানুষের জীবনে সচ্ছলতার উচ্ছ্বাস এবং জীবনকে অর্থবহ করে তোলার তাগিদ জাগিয়ে তুলতে এগিয়ে আসছে ‘সক্ষম’।
এএ/এইচএন/আরআইপি