পরীক্ষা পাসের মিষ্টি
যখন পিএসসি, জেএসসি চালু হয়নি; তখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুটো পাবলিক পরীক্ষা ছিলো শিক্ষা জীবনের পুলসিরাত পার হওয়ার মতো। যে শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় বসবে তার জন্য থাকতো আলাদা তোড়জোড়। দুধ-ডিম-হরলিক্সের বিশেষ সরবরাহ হতো পরীক্ষার্থীর জন্য।
পরীক্ষার কয়েকমাস আগে থেকেই বেড়াতে যাওয়া বন্ধ। এমনকি বাসায় আত্মীয়-স্বজন আসার ওপরও নজরদারি জারি হত। পরীক্ষায় বসার আগে সবার দোয়ার সাথে নতুন কাপড়, ক্যালকুলেটর, ব্যাগ, স্কেলসহ নানা উপহার পাওয়ার রেওয়াজও ছিলো।
তবে সবেচেয়ে মধুর ছিলো ফল প্রকাশের দিনটি। কেবল পরিবার নয়- পুরো মহল্লাই এদিন অপেক্ষা করতো কার কী ফল হয়েছে জানার জন্য। কোন ডিভিশন, কয়টা লেটার, স্টার মার্ক হলো কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। আর বোর্ড স্ট্যান্ড করলে তো পরের দিনের সংবাদপত্রে হাসিমুখের ছবি ছাপানো নিশ্চিত।
জিপিএ ফাইভ আর পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষার সংযুক্তি এই উৎসবে মনে হয় খানিকটা ভাটা ফেলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এখন সব ঘোষণাই ফেসবুককেন্দ্রিক। ভালো ফলের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিষ্টি বিতরণও এখন দেখা যায়।
বাবার চাকরিসূত্রে সরকারি কোয়ার্টারে আমাদের বেড়ে ওঠা। প্রতিবছর ‘ম্যাট্রিক’ আর ‘আইএ’ পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন হয়ে উঠতো আনন্দের দিন- উৎসবের দিন। প্রায় সাত-আট জন করে পরীক্ষার্থী থাকতো প্রতিবছর। ফল প্রকাশের পর আমরা ছোটরা সবাইকে তা জানান দিয়ে বেড়াতাম। সন্ধ্যার পরে সব বাসায় বিতরণ করা হতো পরীক্ষা পাসের মিষ্টি। সেই মিষ্টিতে থাকতো ভালো ফলের গর্বের মিশেলও। আবার খারাপ ফল হয়ে উঠতো দুঃখের কারণ।
সবাই পাস করে মিষ্টি বিতরণ করতো। একজন ছিলেন কেবল ব্যতিক্রম। তিনি আমাদের সবার প্রিয় এস আর রাহুত। যাকে আমরা ‘রাহুত কাকু’ বলতাম। একাত্তরের লড়াকু মুক্তিযোদ্ধা রাহুত কাকু স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছোটবেলায় আমরা দলবেঁধে কাকুর কাছে স্কাউটের গল্পও শুনতাম। আমি নিজেও স্কাউটের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। তাই কাকুর কাছ থেকে আরো সহযোগিতা পেতাম।
তবে সবচেয়ে মজার বিষয় ছিলো- তিনি পরীক্ষার্থীদের বাসায় ডেকে মিষ্টি খাওয়াতেন। সঙ্গে থাকতো নিমকি। কাকু বলতেন, ‘পরীক্ষার্থীরা এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করে ভালো ফল করেছে। সুতরাং ওদেরকেই মিষ্টি খাওয়াতে হবে। ওরা কেন মিষ্টি খাওয়াবে?’ পরীক্ষার্থীদের জন্য রাহুত কাকুর সেই মিষ্টির আয়োজন হয়ে উঠতো অনুপ্রেরণাও।
এসইউ/এমএস