কেমন আছে ঢাকার উদ্যানগুলো
কর্মব্যস্ততার ফাঁকে একটু সুযোগ পেলেই রাজধানীবাসী ঘুরতে বের হন। বেড়ানোর জন্য বেছে নেন বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র, উদ্যান ও মনোরম স্থান। রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং উদ্যানের মধ্যে চন্দ্রিমা উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক ও বাহাদুর শাহ পার্ক অন্যতম। কিন্তু নানা অনিয়মের কারণে পার্ক ও উদ্যানগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দর্শনার্থীরা। রোমান্টিকতার নামে বেহায়াপনা ও ‘নিশিকন্যা’র দৌরাত্ম্যে পার্ক এবং উদ্যানগুলো চলে যাচ্ছে অশুভশক্তির দখলে। এসব স্থান ঘুরে বিস্তারিত জানাচ্ছেন সাদ্দাম হোসাইন-
চন্দ্রিমা উদ্যান
সংসদ ভবনের বিপরীতে ৭৪ একর জায়গা নিয়ে বর্তমান চন্দ্রিমা উদ্যানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সমাধিস্থ করায় ১৯৮১ সালে এটিকে উদ্ভিদ উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। উদ্ভিদের নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিস্তৃতির লক্ষ্যে এবং দর্শনাথীদের সুবিধার্থে ২০০৪ সালে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করে এটিকে আধুনিকায়ণ করা হয় সব শ্রেণির মানুষের জন্য। কিন্তু ক্রমেই উদ্যানটি প্রেমিকযুগল এবং যৌনকর্মীদের দখলে চলে যাচ্ছে। এখানে টাকার বিনিময়ে অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়। উদ্যানটিতে নিরাপত্তা রক্ষা ও আপত্তিকর অবস্থা রোধ করতে ২২জন আনসার সদস্য থাকলেও তাদের সামনেই ঘটছে আপত্তিকর সব ঘটনা। এখানে হকারদের আধিপত্য, প্রেমিকযুগলের আপত্তিকর দৃশ্য, যৌনকর্মীদের দৌরাত্ম্য প্রকাশ্যেই চলে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই উদ্যানের প্রতিটি স্তম্ব, প্রতিটি স্মৃতিফলক। উদ্যানটিকে আগে রেসকোর্স ময়দান, জিমনেসিয়াম কিংবা সামরিক ক্লাব নামে ডাকা হতো। বর্তমানে একে গাঁজার আড্ডাখানা হিসেবে ডাকা হয় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দর্শনার্থী। উদ্যানে গাঁজা এবং ইয়াবাসেবিদের আড্ডা জমে ওঠায় প্রতিদিন পুলিশের টহলের ব্যবস্থা করা হয়। মাঝে মাঝে পুলিশ আড্ডাস্থল ভেঙে দিলেও অন্যত্র গিয়ে বসে পড়ে নেশাদ্রব্য নিয়ে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গেসঙ্গেই উদ্যানটি হয়ে ওঠে আরো ভয়ংকর। পুরো উদ্যানটি চলে যায় উদ্বাস্তু, যৌনকর্মী ও নেশাখোরদের দখলে।
বাহাদুর শাহ পার্ক
পুরান ঢাকার ব্যস্ত মানুষের জন্য বাহাদুর শাহ পার্ক অন্যতম। সকাল-সন্ধ্যা পার্কটি মুখরিত হয় পদচারণায়। বয়স্ক থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং প্রেমিকযুগলের দখলে থাকে পার্কটি। ভেতরে সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য একটি পানির ফোয়ারা থাকলেও সর্বশেষ কবে এটি চালু হয়েছে তা কেউ জানে না। পার্কের ভেতরে নির্মিত নবাব খাজা হাফিজুল্লাহর স্মৃতিফলক ও স্মৃতিস্তম্ভ দুটি নানা বর্ণের কবলে পড়ে বিবর্ণ হয়ে আছে। দুপাশে দুটি প্রবেশ পথ থাকলেও অজানা কারণে একটি প্রবেশ পথ বন্ধ রেখে সেখানে বসেছে চায়ের দোকান। পার্কের বাউন্ডারির চারপাশে অর্ধশত হকারের দৌরাত্ম্যে পার্কটি মুক্ত বাতাসের প্রতিধ্বনি হারিয়েছে। পাশেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার কন্টেইনার রাখায় দুর্গন্ধে স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া অবাধ মাদক সেবন, পার্কের ভেতর ব্যক্তিপ্রভাবসহ নানা সমস্যা দেখা যায়।
রমনা পার্ক
সূর্য ওঠার আগেই এর সকাল শুরু হয় কেডস কিংবা ক্যাম্বিসের জুতো চাপিয়ে হাটতে আসা প্রান্তঃজনের পদচারণায়। দুপুর থেকে বিকেল কাটে নিরবতার চরম উদাসীনতায়। এসময় কখনও ঘাসের বুকে কখনও কংক্রিটের চেয়ারে প্রেমিকযুগল হারিয়ে যায় রোমান্টিক প্ররোচনায়। বিকেল থেকে সন্ধ্যা রমনা যেন হারিয়ে যায় ভয়ানক ব্যস্ততায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন ব্যস্তময় জীবনে প্রশান্তি খুঁজে ফেরা মানুষ। কেউ কেউ ক্রিকেট-ফুটবল নিয়ে সময় কাটান। সেইসঙ্গে পাখিও নীড়ে ফেরার উচ্ছ্বাসে কিচিরমিচির শব্দে মাতিয়ে তোলে জনারণ্যে মুখরিত রমনার অঙ্গন। এত নৈসর্গিক রূপের মাঝেও রমনা নানা সমস্যার জর্জরিত। এর দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে দুটি প্রবেশ পথ থাকলেও পূর্ব পাশের প্রবেশ পথটি প্রায় সময় বন্ধ থাকে। এতে দর্শনার্থীরা বিড়ম্বনার শিকার হন। পার্কটিতে উদ্বাস্তুদের আনাগোনা চলে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি। এসময় এদের অনেকে গাঁজা, হিরোইনসহ বিভিন্ন নেশাদ্রব্য সেবন ও সরবরাহ করে। আপত্তিকর ঘটনা ঘটলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ অধিকাংশ দর্শনার্থীর।
এসইউ/এমএস