তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা
বাবা, কেমন আছো? কতদিন হয়ে গেলো তোমার কোনো খবর পাই না। আমার প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে তোমার কণ্ঠে ‘হ্যালো’ শুনবো বলে! বিশ্বাস করো, আমি কখনো একটি মুহূর্তের জন্যও তোমাকে ভুলে থাকিনি। বাবা, তুমি ছিলে আমার ভালোবাসার সবকিছু! আমার সংগ্রাম, পথচলা, সফলতা- সবকিছুর মূলে ছিলে তুমি।
তোমার স্বপ্নগুলো পূরণে অপ্রাপ্ত বয়সেই তো পরিবারের সবাইকে ছেড়ে ছুটেছি শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে! দেশ ছেড়ে বিদেশে। আমার চোখে তোমার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু কে জানে এমন হবে? আমাদের কথা একটু ভাবলে না। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বেদনায় বুকটা ছিঁড়ে যায় বাবা। আমি এখনো বিশ্বাস করি না যে, তুমি আমাদের মাঝে নেই।
মাকে বলেছি তোমার শার্টগুলো যেন আলনায় ঠিক আগের মতোই ভাঁজ করে রাখে। কখনো ফিরে যদি তোমার একটু গন্ধ পাই। আমারও তো স্বপ্ন ছিলো তোমাকে আর মাকে নিয়ে হজ করতে যাবো। স্বপ্ন ছিলো তোমাকে নিয়ে ইউরোপের দেশে ঘুরবো। তুমি আমাকে বলতে- তোমার খুব শখ আরেকবার লন্ডন যাওয়ার। সেই কত আগে একবার গিয়েছিলে- সে গল্প প্রায়ই আমাকে শোনাতে।
আজ আমার দিন-রাত শুধু কান্নার এক বিশাল সমুদ্র বয়ে বেড়াচ্ছে। স্বপ্ন দেখার বয়স না পেরোতেই আমার জীবন স্বপ্নভঙ্গের হাহাকারে একাকার হয়ে আছে। সত্যি বলতে, তোমাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকাটা শুধুই সান্ত্বনার। তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে তোমার স্মৃতিগুলো আমাকে একটি দিনের জন্যও স্বাভাবিক হতে দেয়নি। আমি কখনো স্বাভাবিক হতে পারবো না।
একটি একটি করে রমজান প্রায় শেষ হতে চলল। গত বছর ইফতারের আগে প্রতিদিন তোমার জন্য দোয়া করেছি। কতবার মনে পড়েছে- রমজানে তোমার সাথে কবে ইফতার করেছি। তুমি থাকলে ফোন করে কী কী জিজ্ঞাসা করতাম? কতদিন তোমাকে ফোন দিয়ে সাহরিতে জাগিয়ে দিয়েছি।
বিশ রমজানের পর থেকে তুমি সবার ঈদের কেনাকাটার জন্য টাকা ভাগ করে দিতে। আমি সবসময় সবার চেয়ে বেশি পেতাম। বড় ছেলে বলেই হয়তো তোমার বেশি ভালোবাসা। তুমি প্রতি ঈদে কেনাকাটার টাকা দেওয়ার পরও কিছু টাকা আমাকে লুকিয়ে দিতে, যেন মা দেখতে না পান। কেন আমাকে এতো ভালোবাসতে? অথচ আমাকে ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার একটু সুযোগও দিলে না।
গতবছর ঈদে তোমাকে প্রথমে ফোন করেছিলাম, এপারে আমার বিবর্ণ কান্না! তোমাদের কতদিন না দেখতে পারার, তোমাদের ছাড়া একা একা প্রথম ঈদ পালন করার। সারাদিন কেঁদেছি, তারপরও আশায় বুক বেঁধেছিলাম পরবর্তী ঈদটা তোমাদের সাথে করবো বলে। কিন্তু সে সুযোগ আমার আর সারা জীবনেও আসবে না।
বাবা, দোকানে নিয়ে গেলে ছোটবেলায় আমার সব আব্দার তুমি পূরণ করতে। আমার যা ইচ্ছে হতো কিনে দিতে। রাতে বাড়ি ফিরে আমি যখন ঘুমিয়ে পড়তাম; আমার পছন্দের জিনিসগুলো কিনে এনে আমার বিছানার পাশে রাখতে। আমি ছোটবেলায় তোমাকে ছাড়া ঘুমাতাম না। অনেক রাত তুমি দেরি করে ফিরেছো বলে আম্মুর সাথে আমিও অপেক্ষা করেছি।
আমি এখনো তোমার পথ চেয়ে থাকি। রাতে ঘুমাতে পারি না। আবারো তোমার আঙুল ধরে হাঁটতে চাই। তোমার মোটরবাইকের সামনে বসে স্কুলে যেতে চাই। একবার ফিরে আসো বাবা! সবাইকে বলে দাও- আমারও মাথার ওপর বিশাল আকাশ আছে। আমারও বাবা আছে।
লেখক : প্রবাসী শিক্ষার্থী।
এসইউ/পিআর