ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

আমাদের বৃষ্টিভেজা শহর

প্রকাশিত: ০৭:২৮ এএম, ১৩ জুন ২০১৭

কথাগুলো গল্প নয়, সত্যি। এ শহরে আমরা কখনও বাদুড়ঝোলা, কখনও কাকভেজা হয়ে পথ চলি। বর্ষা এলেই বৃষ্টিতে ভিজে অফিসে যেতে হবে। কথাটা যখনই মাথায় আসে; তখনই পুরনো ছাতার কথা মনে পড়ে। কোথায় যেন রেখেছিলাম। ধ্যাৎ, আমার সব জিনিস চুরি হয়ে যাচ্ছে। মেজাজটাই খারাপ। এদিকে ঠান্ডাও লাগছে। কীভাবে যে যাব অফিসে? অফিসে তো যেতেই হবে- ক্ষমা নেই। কী আর করা, অনেক খুঁজেও যখন ছাতাটা পেলাম না; মনটা স্থির করে রওনা দিলাম।

পবিত্র রমজান মাসের ১৬তম দিন, রোজা আছি। বেলা ২টায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। বাসা থেকে বের হয়েই দেখি একটা রিকশা। চিৎকার করলাম, ‘ওই মামা যাবা?’ রিকশাওয়ালা পলিথিন ভাঁজ করছিল। ওই মুহূর্তেই রিকশায় উঠে বলি, ‘মামা, চলো আগে একটা ছাতা কিনব। এরপর অফিসে যাব।’ ছাতার দোকানে গিয়ে আমার পছন্দমতো সুন্দর একটা ছাতাও কিনলাম।

rain

ছাতাটা কেনা মূলত এই কারণে যে, শারীরিকভাবে যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ি। যা হোক, এখন ছাতা শুধু আমার হাতেই নয়, হাজারও মানুষের হাতে। কারণ বৃষ্টি ঝরছে মুষলধারে। চারদিকে বাহারি ছাতা। রঙ-বেরঙের ছাতা। ছাতার নিচে দুজনের ঘনিষ্ঠতা। এসব দেখে হাসছিলাম। তবে আজকের দিনে ছাতার ব্যবসা করলে মনে হয় ভালো হতো। ভাবতে ভাবতে হেঁটে হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে এলাম। এসে দেখি, বাস নেই, আছে শুধু মানুষ আর মানুষের হাতে হরেকরকম ছাতা।

সবাই অপেক্ষা করছে বাসের জন্য। আমি ওখানে না দাঁড়িয়ে বিকল্প রাস্তার উদ্দেশে রওনা দিলাম, যাব বাড্ডা। বিকল্প পথে কারওয়ানবাজার এলাম। সেখান থেকে মাইক্রোবাসে মেরুল নামব। মেরুল থেকে তুরাগ বা অন্য কোনো বাসে অফিস পর্যন্ত যাব। কিন্তু না, দেখি পেট্রোবাংলার সামনের রাস্তা পানির নিচে। ক’দিন আগে সেখানে ফ্লাইওভার চালু হয়েছে। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে গাড়ি আর মানুষের ছুটে চলা। সবাই যে যার গন্তব্যে পৌঁছায়।

rain

ব্যস্ত, আমিও ব্যস্ত। কীভাবে মাইক্রোস্ট্যান্ডে যাওয়া যায়? কিন্তু পারলাম না। সময় তখন ২টা ৩০ মিনিট, ৩টায় ঢুকতে হবে অফিসে, কীভাবে যে যাই? সিএনজিতে যাব, অতো টাকাও নেই। তাই মনটা খারাপ করে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, এই হলো আমাদের বৃষ্টিভেজা শহর। একটু বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় পুরো ঢাকা, বিপদগ্রস্ত হয় হাজারও মানুষ। এই আমাদের নগরজীবন। ভেবে আর কী হবে? দাঁড়িয়ে আছি হাজারও লোকের ভিড়ে। এদিক-সেদিক তাকাই, খুঁজে বেড়াই কোনো মাধ্যম। কীভাবে যাব এই পানি পার হয়ে?

হঠাৎ অন্ধকার ভেদ করে একটু আলোর মতো একটা সিএনজি এসে থামল। চালক বলল, ‘এই মেরুল, মেরুল...’। দৌড়ে ঠেলাঠেলি করে সিএনজিতে উঠলাম। ড্রাইভারকে বললাম, ‘মামা, এত পানির ভেতর দিয়ে কেমনে যাবা?’ সে বলল, ‘দেখি মামা, কেমনে যাই।’ আমি কথা না বাড়িয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কিছু ছবি তুলাম।

তেজগাঁও রেলক্রসিং পার হতেই অন্যরকম অনুভূতি এসে ধরা দিল মনে। আমি গ্লাসের ওপর চোখ রেখে দেখছি বৃষ্টিভেজা শহর। লাজুক শহর। শরীর ভিজে যাওয়া নারীর মতো কোমল আর নমনীয় এক শহর। প্রেমে পড়ার মতো শহর। এফডিসির কাছে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পে যেতেই উদাসীনতায় ছেয়ে গেল মন। মনে হলো- অফিসে না গিয়ে টুক করে নেমে পড়ি এখানে।

media

ঝিলের জলে বৃষ্টির টুপটাপ খেলা। সবুজ প্রকৃতি কেমন লাজ-নম্র। শা শা করে ছুটে যাচ্ছে হালকা পরিবহনগুলো। গাছের পাতার ফোটাগুলো কী মাতাল ছন্দ তুলে গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে। আধভেজা মানুষগুলো আশ্রয় নেয় হাতিরঝিলের বিভিন্ন সেতুর নিচে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অনবরত ফেলে দেয়া জিনিস কুড়ায় এক টোকাই। মনে হয় কত বিচিত্র এ জীবন, কত বিচিত্র এ শহর।

দেখলাম যে যার মতো ছুটছে জীবিকার তাগিদে। আমি ছুটতে ছুটতেও পিছিয়ে গেলাম। অফিসে আর সঠিক সময়ে পৌঁছতে পারলাম না। এ শহরে কখনো কখনো দেরি হলে খুব মন্দ লাগে না। জীবন তো একটাই। এক জীবনে আর কতো দেরি হবে? রোজ ঠিকই সময়মতো পৌঁছাব। তবে আজকের দিনটা থাকুক না একটু অনুভূতির ছোঁয়ার মতো, ব্যর্থতার গানের মতো।

লেখক : সাংবাদিক

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন