রসুলপুরে ঐতিহ্যবাহী জামাইমেলা শুরু
টাঙ্গাইলের রসুলপুরে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী জামাইমেলা শুরু হয়েছে। শত বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ‘জামাইমেলা’। মঙ্গলবার শুরু হয়েছে এ মেলা। চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করা হয় এ মেলার। এই তিনদিনে রসলপুরসহ আশেপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। তবে মেলার নাম জামাইমেলা হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানা যায়, মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার সব মেয়ের স্বামী শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে আসেন। তারাই মেলার মূল আকর্ষণ- এ কারণেই মেলাটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, দোকানিরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে আছেন, আর ক্রেতারা তা কিনছেন। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এ মেলা বেশি উপভোগ করছে। আবার অনেকেই মেলার দোকান সাজানোর কাজ করছেন।
রসুলপুরের বাসিন্দা রাশেদ রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ মেলার উৎপত্তি কবে সেটা কেউ জানে না। যুগ যুগ ধরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এলাকার মানুষের কাছে ঈদ আর পূজা-পার্বণের থেকেও এই মেলা বেশি আনন্দের। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিত।’
মেলাকে সামনে রেখে রসুলপুর ও এর আশেপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর মেয়ের জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেওয়ার জন্য শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। মেলার দিন জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন শাশুড়িরা। আর সেই টাকার সঙ্গে আরো কিছু টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে খই, চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, আকড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন খাদ্যসমগ্রী কেনেন।
শালিনার বাসিন্দা সাখাওয়াত পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘একমাস থেকে এ মেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। লোকজন ছুটি নিয়ে মেলা দেখার জন্য আসেন। আগে বয়স্ক লোকজন এ মেলা উপভোগ করতো। এখন মধ্যবয়স্ক এবং ছাত্রছাত্রীরা এই মেলা বেশি উপভোগ করে। মেলায় মিষ্টিজাতীয় জিনিস বেশি বিক্রি হয়।’
রসুলপুরের জামাতা জামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি স্বাধীনতার আগে বিয়ে করেছি। প্রতিবছরই এ মেলায় আসি। শ্বশুর-শাশুড়ি বেঁচে থাকতে তারা আগে থেকেই দাওয়াত দিতেন। এখন তারা বেঁচে নেই। শ্যালক-শ্যালকের বউ সেই রেওয়াজ ধরে রেখে এখনো দাওয়াত দেয়।’
মেলাকে সামনে রেখে ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য আয়োজন করা হয় বিনোদনের। মেলায় থাকে ছোট-বড় প্রচুর স্টল, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস এবং খাবারের দোকান। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় ব্যবসা করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন ব্যবসায়ীরা।
নবপ্রজন্ম সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি মারুফ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এ মেলা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এ মেলাকে কেন্দ্র করে দারুণ একটা প্রাণচাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। তবে এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎসবের আমেজ কিছুটা কম। তারপরও আবহাওয়া ভালো থাকলে অবশ্যই মেলা জমে উঠেবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। এ কাজ করে আমরা প্রচুর আনন্দ পাই।’
কথা হয় সিরাজগঞ্জ থেকে আসা রনজু নামে এক মিষ্টি বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এ মেলায় ৮ বছর ধরে আসছি। এখানে বিক্রি করে আমি লাভবান হই। আমি বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিক্রি করে থাকি।’
আরেক ব্যবসায়ী কৃষ্ণ ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেলায় আসতে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। কমিটির লোকজন আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমি ৬০ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে এসেছি। আশা করছি এর বেশি বিক্রি করতে পারবো।’
মেলার আহ্বায়ক আতোয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের মেলায় প্রায় শতাধিক দোকান বসেছে। এজন্য প্রায় ১৫০ জন স্বেচ্ছায় মেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। মেলার একটি লাভের অংশ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে দেওয়া হয়।’
এসইউ/এমএস