স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ : আশরাফুল আলম
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আশরাফুল আলমকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৭ প্রদান করা হয়। তাঁকে নিয়ে আজকের আয়োজন-
আশরাফুল আলম গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ভাবগরীব গ্রামে ১৯৪৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয় স্কুল থেকে ১৯৬১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
তিনি ১৯৭১ সালে তদানীন্তন রেডিও পাকিস্তান, ঢাকায় নৈমিত্তিক অনুষ্ঠানঘোষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে মে মাসে সামরিক বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ও জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে বেতার ভবন থেকে গোপনে দেশাত্মবোধক গানের কিছু টেপ নিয়ে কলকাতায় চলে যান। সেখানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। গানগুলো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীত প্রচারকে সমৃদ্ধ করেছিল।
তাঁর গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও প্রযোজনায় প্রচারিত হতো মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধকরণের বিশেষ অনুষ্ঠান ‘অগ্নিশিখা’, সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠান ‘রক্ত-স্বাক্ষর’ এবং তৎকালীন নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার। আবেগধর্মী কথিকা ‘দর্পণ’র পাণ্ডুলিপি রচয়িতা হিসেবেও তিনি অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। তাঁর ওপর অর্পিত ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বহিরঙ্গণ প্রচারের দায়িত্ব।
তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটিকা রচনা, গল্প থেকে বেতার-নাট্যরূপ প্রদান, আবৃত্তি পরিবেশন, অভিনয়, সংবাদপাঠ, অনুষ্ঠান-ঘোষণা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অশেষ সুখ্যাতি অর্জন করেন।
আশরাফুল আলম একাত্তরের ৭ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর সেখানে অনুষ্ঠিত জনসভায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ভাষণ বাণীবদ্ধ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নেন।
তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আয়োজিত অনুষ্ঠানের ধারাবর্ণনা করেন ঢাকা বেতারসহ সব কেন্দ্রে সম্প্রচারের জন্য।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি বাংলাদেশ বেতারের ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসের সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও জনসভায় বঙ্গবন্ধুর দেওয়া কিছুসংখ্যক ভাষণ আর্কাইভে সংরক্ষণের নির্দেশনা দেওয়ার কারণে তিনি ওই সময় নিগৃহীত হন।
আশরাফুল আলম সুদীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন নাট্যগোষ্ঠী, আবৃত্তি সংগঠন এবং টেলিভিশন চ্যানেলে উচ্চারণবিষয়ক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
আবৃত্তিকার হিসেবে তার রয়েছে সুখ্যাতি। তাই অবসরজীবনেও তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন ‘আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ’, ‘আবৃত্তিকার সংঘ’, ও ‘স্বাধীন বাংলা বেতারকর্মী পরিষদ’র সঙ্গে।
তাঁর কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’, ‘অফিসার্স ক্লাব ঢাকা’, ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’, ‘কণ্ঠশীলন’ প্রভৃতি সম্মাননায় ভূষিত হন।
এসইউ/পিআর