বড়লোকগো টাকা বেশি থাকলেও আরামে ঘুমাই আমরাই
রাজধানীর অভিজাত এলাকায় সুসজ্জিত দামি ফ্ল্যাট, আরামদায়ক বিছানা-চাদর ও নরম তুলতুলে বালিশে শুয়েও ভালো ঘুম হয় না এমন লোকের সংখ্যা হাতে গুণে শেষ করা যাবে না। ব্যস্ত এ নগরীতে ঘুম অনেকের কাছে আরাধ্য বিষয়। অনেকেই দিনে তো দূরের কথা রাতেও ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। ঘুমের জন্য চিকিৎসকের কাছে দৌড়ান। ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুম হয় না অনেকের।
আবার এ নগরীতে অনেকেই আছেন যারা যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন। জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরে বেড়ানোর সময় খোলা আকাশের নিচে কয়েকজন হতদরিদ্রকে বেঘোরে ঘুমাতে দেখেন।
বৃহস্পতিবার, বেলা ১টা। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পলাশী বাজারগামী ব্যস্ত রাস্তায় দ্রুত ছুটে চলছে প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত বেবিট্যাক্সি, মোটরসাইকেল ও রিকশা। নিরাপদে পথ চলতে ইচ্ছা ও অনিচ্ছাকৃতভাবে ইঞ্জিনচালিত যানবাহনগুলোর হর্ন ও রিকশার ক্রিং ক্রিং শব্দে ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের কানে আঙুল গুজে অভিভাবকদের সঙ্গে পথ চলতে দেখা যায়।
এমন হৈচৈ পরিবেশেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন জগন্নাথ হলের সীমানা প্রাচীরের বিপরীত দিকের ফুটপাতের রাস্তায় এক ব্যক্তিকে বেঘোরে ঘুমাতে দেখা যায়। ময়লা তেল চিটচিটে শার্ট-প্যান্ট পরিহিত ওই ব্যক্তির মাথার নিচে নেই বালিশ, আছে বস্তা, চাদর নেই, আছে ছেঁড়া পোস্টার।সূর্যের আলো থেকে বাঁচতে নাকে-মুখে মাফলার পেঁচিয়ে রেখেছেন। পথচারীদের কেউ আবার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখেন আসলেই বেঁচে আছে কিনা, শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়তে দেখে বেঁচে আছেন নিশ্চিত হয়ে সামনে এগিয়ে যান।
অদূরেই দেখা যায় এক রিকশাচালক যাত্রীর বসার সিটটি পাদানিতে রেখে বালিশ বানিয়ে বুকের ওপর হাত রেখে ঘুমাচ্ছেন। রিকশা চুরির ভয়ে প্যাডেল পর্যন্ত লম্বা করে দুই পা দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতে দেখা যায় তাকে। একটু এগিয়ে যেতেই ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির সামনে একটি বটগাছের তলায় আরেক রিকশাচালককে হুড তুলে সিটটি লম্বা করে শুয়ে ঘুমাতে দেখা যায়।
আর কিছু দূর এগিয়ে এসএম হলের গেটের বিপরীত দিকে এক রিকশাচালককে সিটের ওপর পা তুলে লম্বা হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। আরামবাগের ওই রিকশাচালকের নাম মঞ্জু। কাকডাকা ভোরে গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন।এখন ভীষণ ক্লান্ত। তাই একটু ঘুমিয়ে বিশ্রাম নেবেন।
এতো হৈচৈয়ের মধ্যে কি ঘুম আসে এমন প্রশ্ন করলে মঞ্জু বলেন, পরিশ্রম করলে শরীর এমনিতেই এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে যে, ঘুম আপনি আপনি চলে আসে। তখন রাস্তা আর বাসা কি, যেখানে একটু গা এলিয়ে দেন সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে সমস্যা হয় না।
মঞ্জু হাসতে হাসতে বলেন, ‘বড়লোকগো মতো আমাগো ট্যাকা নাই। তয় বড়লোকরা কিন্তু আমাগো মতো আরামে ঘুমাইতে পারে না।’
এমইউ/ওআর/পিআর