শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ‘ভালোবাসা দিবস’
‘ভালোবাসা’ শব্দটিতে অনেক কিছুই লুকিয়ে। এটি কোন দিবস, মাস, বছর কিংবা কালে আবদ্ধ নয়। সবসময়ই থাকে প্রিয়জনের জন্য এক রাশ ভালোবাসা। এটি সার্বজনীন। প্রেমিকের জন্য প্রেমিকার ভালোবাসা, সন্তানের জন্য বাবা মায়ের, ভাইয়ের জন্য বোনের এই ভালোবাসার কোন মাপকাঠি নেই। থাকে রাস্তার ধারে শুয়ে থাকা অভুক্ত মানুষদের জন্যও আমাদের ভালোবাসা। স্রষ্টার সৃষ্টিকুলের প্রতিও ভালোবাসা দেখাতে পেরেছে বলেই মনুষ্য জাতি সৃষ্টির সেরা।
ভালোবাসা দিবস নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ। কারও কাছে যদি একটি দিনকে কেন্দ্র করে আমি আমার মাকে বলতে পারি ‘মা তোমাকে আমি ভালোবাসি’আর মা যদি তাতে খুশি হন, প্রেমিকাকে একটা সারপ্রাইজ দিয়ে খুশি করতে পারি, তাহলে মন্দ কি! কেউ বলছেন, এটা হচ্ছে পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর একটা হাতিয়ার। এর মাধ্যমে তারা কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এটা বাঙালি সংস্কৃতির অংশ নয়।
এই ভালোবাসা নিয়ে কারও মতবিরোধ না থাকলেও বছরের একটা দিনকে ‘ভালোবাসা দিবস’হিসেবে পালন নিয়ে রয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। এর পক্ষে বিপক্ষে থাকে হাজারও যুক্তি। আর এই ভালোবাসা দিবস নিয়ে তরুণরা কি ভাবছেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। মত দিয়েছেন গার্লফ্রেন্ড (জিএফ) কেন্দ্রিক ভালোবাসার বিপক্ষে। কয়েকজনের বক্তব্য তুলে ধরা হলো,
ভালোবাসা দিবসে সবসময় বাবা মাকে সকালে সবার আগে ফোন দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের ফলপ্রার্থী ছাত্র তারেক হাসান শিমুল। ভালোবাসা দিবস নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ভালোবাসা শুধু গার্লফ্রেন্ডকেন্দ্রিক না, সার্বজনীন। মা-বাবা, ভাই-বোন, প্রিয় মানুষটি থেকে শুরু করে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা অভুক্ত শিশুর জন্যও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, ভালোবাসা দিবসে বিশ্বাসী নই, তবে একটি দিনকে কেন্দ্র করে যদি বাবা-মাকে বলতে পারি ‘মা’ আমি তোমাকে ভালোবাসি’এবং প্রিয় মানুষটিকে একটা সারপ্রাইজ দিয়ে খুশি করতে পারি কিংবা রাস্তার ধারে পড়ে থাকা শিশুকে পেট ভরে খাওয়াতে পারি, তাহলে মন্দ কি?
আর ভালোবাসা দিবসে বিশ্বাসী না হলেও আজকের দিনটিকে ভিন্নভাবে দেখছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী সুমি উর্মি। তিনি বলেন, ভালোবাসা মানে আনন্দ, পরিপূর্ণতা, ভালোলাগা। এটি বলে বোঝানো যাবে না। ভালোবাসা দিবসের ভালোবাসায় বিশ্বাসী নই, কারণ ভালোবাসা সবসময় সমান। প্রত্যেকদিনই ভালোবাসা সমান, তবে আজকের দিনটি একটু ভিন্ন।
ভালোবাসা দিবসকে খারাপ বলতে নারাজ তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মো. এনামুল হক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ভালোবাসা দিবস খারাপ না, তবে বর্তমান সময়ে যেভাবে উদযাপন করা হচ্ছে সেটির পক্ষে না। একটা দিনকে কেন্দ্র করে যদি আমি প্রিয়জনকে বলতে পারি ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ তাহলে খারাপ কিসের-সেটি বাবা, মা থেকে শুরু করে গার্লফ্রেন্ডও হতে পারে| পজেটিভভাবে যদি আমরা দিবসটিকে উদযাপন করতে পারি তাহলে খারাপ না।
শামসুন্নাহার হলের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার ভালোবাসা দিবসকে পজেটিভভাবেই নিয়েছেন। তার মতে আমাদের ভালোবাসা সবসময়ই সবার জন্য থাকে ঠিক, তবে একটা দিনকে বেছে নিয়ে আমরা যদি ভালোবাসা দিবস পালন করি তাহলে তো খারাপ না। বরং সকলের মধ্যে বন্ধন আরও গাঢ় হয়।
ভালোবাসা দিবসের পক্ষে নন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের (ওল্ড) ছাত্র জাহিদুল ইসলাম জুয়েল। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, বর্তমানে গার্লফ্রেন্ড(জিএফ)কেন্দ্রিক যে ভালোবাসা চলছে সেটির পক্ষে না। ভালোবাসাকে কখনও কোন দিবসে আবদ্ধ করা যায় না, ভালোবাসা সার্বজনীন, সবসময়।
পুঁজিবাদী শক্তির অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যম ভালোবাসা দিবস, বলছেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্র মো. ইব্রাহীম খলিল। তিনি বলেন, ভালোবাসা দিবস হচ্ছে একটি অপসংস্কৃতি। এটা হচ্ছে পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর একটা হাতিয়ার।দিনটিকে কেন্দ্র করে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা কামাই করছে। এটা বাঙালির সংস্কৃতির অংশ নয়। ভালোবাসা শুধু গার্লফ্রেন্ড এর জন্য নয়, সবার জন্য, সবসময়।
এমএইচ/ওআর/এমএস