অন্যরকম একটি সকাল
ভোর সাড়ে ৬টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর পেরিয়ে প্রাতভ্রমণকারীরা হেঁটে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর প্রবেশ করছেন। টিএসসির ক্যান্টিনের অদূরে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছেন এক ফুলবিক্রেতা। পাশেই গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন ফুল সকালে বিক্রির জন্য রাখা আছে।
ফুল বিক্রেতাদের কেউ কেউ আবার দ্রুত ফুলের গুচ্ছ হাতে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল এদিক সেদিক।
সাত সকালেই শাহবাগ, জাদুঘর, চারুকলা, ছবির হাট, টিএসসি, ঢাকা লাইব্রেরি চত্বরসহ গোটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে হরেক রকম ফুল বিক্রেতার উপস্থিতি ও বাসন্তিসহ রঙিন পোশাকে অসংখ্য নারী-পুরুষ ও শিশুদের উপস্থিতি সহজেই জানান দিচ্ছিল আজ অন্য রকম একটা দিন।
আজ ১লা ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্ত ঋতুর প্রথম দিন। চারুকলার বকুলতলায় বসন্ত উৎসব তখনও শুরু হয়নি। কেউ আসছিল প্রাইভেট কারে, কেউ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, কেউবা আবার মোটর সাইকেল বা রিকশাতে।
প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মিতা হকসহ অন্যরা মঞ্চের আশপাশে ঘুরে-ফিরে অনুষ্ঠান শুরুর আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখছিলেন।
হঠাৎ শোনা গেল কেউ বলে উঠলেন, আরে আরে করছো কী? দেখা গেল- একজন ফুল বিক্রেতা মধ্যবয়সী এক নারীর মাথায় প্রায় জোর করে গোলাকৃতির ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘আমাকে না, আমার মেয়ে ও নাতনিকে ফুলের মালা পরিয়ে দাও। আমার কি আর সেই বয়স আছে।’
ফুল বিক্রেতাও নাছোড়বান্দা, কম যান না। তিনি বলেন, ‘আপা, সমস্যা নাই, আজ পয়লা ফাল্গুনে আপনেও পোলাপাইন অইয়া যান। ফুল পড়লে সুন্দর লাগবো।’
অতঃপর দরদাম করে তিনটি ফুলের মালা ২০০ টাকায় কিনলেন ওই নারী।
মঙ্গলবার ভোর থেকে চারুকলার গেটের সামনে মাথায় পড়ার ফুলের মালার রীতিমতো হাট বসে যায়। একডজনেরও বেশি ফুল বিক্রেতাকে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ফুল বিক্রি করতে দেখা যায়। ছোট বড় কাউকে দেখলেই ছুটে গিয়ে বিক্রির প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন তারা।
বিউটি বেগম নামের এক ফুল বিক্রেতা জানান, ক্যাম্পাসে সারা বছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও বিভিন্ন বিশেষ দিনে বেচাকেনা খুব ভালো হয়। বিশেষ করে আজ পয়লা ফাল্গুন ও কাল বিশ্ব ভালবাসা দিবসে বেচাকেনা ও আয় রোজগারও খুব ভালো হয়।
টিটু মিয়া নামের একজন ফুল বিক্রেতা জানান, অন্য সময় ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হলেও একেকটি মালা আজ তারা ১শ টাকা করে বিক্রি করতে চান।
কেউ কেউ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করায় ক্ষুব্ধ টিটু মিয়া তাদের বলছিলেন, আইজও কি কমদামে ফুল বিক্রি করার দিন।
রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা আফজাল হোসেন দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চারুকলায় বসন্ত উৎসবে প্রতি বছরই আসেন বলে জানান। উৎসব উপলক্ষে গোটা পরিবার নতুন জামা কাপড় কিনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, জীবনটা তো ছোট। তাই সময় ও সুযোগ হলেও যে কোন উৎসবে সপরিবারে ছুটে আসেন। এতে মনে এক ধরনের প্রশান্তি আসে যা পরবর্তী দিনগুলোতে জীবিকার তাগিদে ছুটে চলতে সহায়তা করে।
এমইউ/এনএফ/এমএস