‘কর্মচারীদের খুশি না রাখলে বেশিদিন কবর রাখে না’
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা স্বপন মিয়া শুক্রবার বেলা আনুমানিক ১১টায় তার চার বছরের মেয়ে তানহাকে নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে তার নানীর কবর জিয়ারত করতে আসেন। অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দেয়াল ঘেঁষে বিভিন্ন লাইনে যেসব কবর রয়েছে তার আশেপাশে অনেকক্ষণ ঘুরেও নানীর কবর খুঁজে পেলেন না। ছোট্ট তানহার প্রশ্ন, বাবা তোমার নানুর কবরটা নেই কেন?
মেয়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে একটি কবরের সামনে দাঁড়িয়ে মোনাজাত করলেন তিনি। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের এই কর্মচারী স্বপন জানান, অগ্রণী স্কুলের দেয়ালের পাশেই তার নানীকে কবর দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন কবরটা খুঁজে পাচ্ছেন না।
পাশেই মধ্যবয়সী দুই ভদ্রলোক তাদের কোনো স্বজনকে কবর দেয়ার জন্য জায়গা খুঁজছিলেন। গোরখোদক বিভিন্ন কবর শাবল দিয়ে খুঁচিয়ে জায়গা বের করা যায় কি না তা দেখছিলেন। ইতোমধ্যেই গোরখোদকের কাছে একজন মোবাইল ফোন ধরিয়ে দিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
এ সময় গোরখোদক উচ্চস্বরে বলেন, ‘আরে ভাই, আমি তো চেষ্টা কম করতাছি না, দেখি কোথায় ভাল জায়গা পাওয়া যায়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই ভদ্রলোকের একজন জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, মরণের পরেও শান্তি নাই, এখানকার কর্মচারীদের খুশি না রাখলে বেশিদিন কবর রাখে না, তাদের খুশি রাখলে কবরে সাইনবোর্ড থাকে, কবরের ওপর সবুজ ঘাস ও পাশে ফুলগাছ লাগিয়ে নিয়মিত পানি দেয়া হয়। আর টাকা না দিলে কবর কয়েকমাসেই ভেঙেচুড়ে যায়। সেখানে নতুন কবর দেয়া হয়। টাকা পয়সা খরচ করলে সহজেই শনাক্ত করা যায় এমন জায়গায় দাফন করার সুযোগ মেলে।
শুক্রবার আজিমপুর কবরস্থান সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, কবরস্থান জিয়ারত করতে আসা বেশ কিছু নারী ও পুরুষ গোরখোদকসহ অন্যান্যদের হাতে টাকা দিয়ে কবরটা ঠিকঠাক রাখতে অনুরোধ জানান।
আজিমপুর কবরস্থানের মোহরার মিজানুর রহমানের কাছে টাকা নিয়ে কবর রাখা বা ভেঙে ফেলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সাধারণত একটি কবর বছরখানেক থাকে। আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের যে কোন একদিকে কবর দিতে দিতে জায়গা শেষ হলে আবার অন্যদিকে কবর খোড়া শুরু হয়। টাকা পয়সা নিয়ে কবর রাখা ও ভাঙা হয় না বলে তিনি দাবি করেন।
তবে গোরখোদকদের কেউ কেউ বলছেন, কোনো কোনো মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন স্বেচ্ছায় তাদের কিছু টাকা দিয়ে কবর ঠিকঠাক রাখার অনুরোধ জানালে তারা সেটি করেন।
এমইউ/এআরএস/এমএস