বিলুপ্তপ্রায় নকিপুর জমিদার বাড়ি
দেড় শতাধিক বছর আগে জমিদার হরিচরণ রায়চৌধুরী একচল্লিশ কক্ষের তিনতলা বিশিষ্ট এল প্যার্টানের একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। যার অবস্থান সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে প্রায় ৭২ কিলোমিটার দূরে শ্যামনগর উপজেলার নকিপুরে। সেই বাড়িটি এখন পরিণত হয়েছে দুইতলায় আর কক্ষগুলোর সংখ্যাও হাতেগোনা।
ইতিহাস মতে, জমিদার রায়বাহাদুর হরিচরণ রায় চৌধুরীর মায়ের নাম নিস্তারিণী। তিনি স্বপ্নযোগে পেতেন সম্পদ, এমন প্রবাদ এখনো প্রচলিত আছে এলাকায়। এই পরিবারের বিষয়-সম্পত্তির পরিমাণ ছিল দুই লক্ষ একর। এ সমস্ত জমির কর-খাজনা আদায় করতে ভারতের হিঙ্গলগঞ্জ থানা আর কালীগঞ্জ-শ্যামনগর উপজেলার সাতশ’টি কাছারিতে থাকতেন নায়েব-গোমস্তারা। কিন্তু ১৯১৫ সালে তিনি মারা যান।
তারপর তার জমিদারীর ভার পড়ে দুই ছেলের ওপর। তারাও বজায় রাখে বংশের আভিজাত্য। তবে ইংরেজি ১৯৩৭ ও ১৯৪৯ সালে দুই ছেলে মারা যায়। এরপর ১৯৫০ সালে জমিদারী প্রথার অবসান ঘটে। তখন জমিদার বংশধর তাদের সম্পত্তি রেখে ভারতে পাড়ি জামান। সেই থেকে পড়ে আছে জমিদার বাড়িটি।
দেড় শতাধিক বছরের পুরনো জমিদার বাড়িটি আজ ধ্বংসের শেষ সীমানায়। বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকটি পরিত্যক্ত কক্ষেই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে কয়েকটি পরিবার। অন্যদিকে দৃষ্টিনন্দন এল প্যার্টানের কোন অস্তিত্বই নেই। জমিদার বাড়ির দক্ষিণ অংশের ভবন ইতোমধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখন চলছে মধ্যভাগের ভাঙন।
কারণ হিসেবে স্থানীয়রা জাগো নিউজকে জানান, রাতের আঁধারে কে বা কারা ইট, সুরকি ও মূল্যবান লোহার কড়ে, সেগুন কাঠের বরগা খুলে নিয়ে যায়।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, অবজ্ঞার কারণে বাড়িটি এখন একেবারে উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। নজরকাড়া জমিদার বাড়িটির স্মৃতি রক্ষায় কাউকেই উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি।
সচেতন মহলের ধারণা, যেটুকু অবশিষ্ট আছে; সেটুকু ধরে রাখার জন্য প্রশাসনের আন্তরিক ইচ্ছাই যথেষ্ট। তাছাড়া প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টির দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এসইউ/পিআর