দেশের প্রথম গির্জা : কাগজে আছে বাস্তবে নেই
![দেশের প্রথম গির্জা : কাগজে আছে বাস্তবে নেই](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2016October/charc-pic20161229172954.jpg)
বাংলাদেশের প্রথম গির্জার অবস্থান সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে। কাগজপত্র বা উইকিপিডিয়াও তা-ই প্রমাণ করে। তবে বাস্তবে এর কোনো স্থাপনা ওই স্থানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেখানে এখন রোপণ করা হচ্ছে গাছপালা।
সূত্র অনুযায়ী, সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে এই গির্জার অবস্থান ছিল, যা ‘যিশুর গির্জা’ নামেও পরিচিত। ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে ইগ্নেসিয়াস লয়োলা নামক একজন স্প্যানিস ব্যক্তির নেতৃত্বে জেসুইট বা যিশু সম্প্রদায় গঠিত হওয়ার পর খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য খ্রিস্টানরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েন। সে আমলে এ মহাদেশে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের তথ্য পাওয়া যায় পিয়ারে ডু জারিক নামক একজন ফ্রান্সবাসী ঐতিহাসিকের ইতিহাস থেকে।
ফরাসি ওই ঐতিহাসিকের তথ্য মতে, ফনসেকা নামক একজন খ্রিস্টান পাদ্রী নদীপথে ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ঈশ্বরীপুরে পৌঁছান। সেখানে তিনি অন্য একজন খ্রিস্টান পাদ্রী ফাদার সোসার সাক্ষাৎ পান। এরপর ফাদার সোসা ও ফনসেকা ২১ নভেম্বর প্রতাপাদিত্যের দরবার কক্ষ বারদুয়ারীতে উপস্থিত হয়ে বেরিঙ্গান নামের এক প্রকার সুস্বাদু কমলালেবু উপহার দেন এবং বারদুয়ারী ভবনের উত্তর-পূর্ব কোণে যেখানে খ্রিস্টান পল্লি অবস্থিত সেখানে একটি গির্জা নির্মাণের প্রস্তাব করেন। প্রতাপাদিত্য আনন্দের সঙ্গে এ প্রস্তাবে সম্মতি দেন।
প্রতাপাদিত্যের অনুমতির পরই গির্জা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ওইসময়ে প্রতাপাদিত্যের বাহিনীতে অনেক পর্তুগীজ সৈন্য ছিলেন। গির্জা নির্মাণের জন্য তারা সাধ্যমত অার্থিক সাহায্য করেন। এছাড়া প্রতাপাদিত্য নিজের রাজধানীতে খ্রিস্টানদের উপাসনালয় নির্মাণের জন্য সাহায্য করেন। ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে গির্জার নির্মাণ কাজ শেষ হয়। নির্মাণ সময় বিচারে সেই সময় যশোরের ঈশ্বরীপুর গ্রামের গির্জা বাংলাদেশের নির্মিত প্রথম খ্রিস্টান গির্জা।
সরেজমিনে জানা যায়, বর্তমানে সেখানে গির্জার কোন চিহ্ন নেই। যেখানে গির্জা ছিল সেখানে এখন কৃষি জমি ও বসতভিটা। ঈশ্বরীপুর গ্রামের খ্রিস্টান মিশনের ইনচার্জ ইতালিয়ান নাগরিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানেই দেশের প্রথম গির্জার অবস্থান ছিল। তবে এখন সে স্থানে গির্জার কোন চিহ্ন নেই।’ কারণ হিসেবে তিনি জানান, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও কালের পরিক্রমায় গির্জাটি বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা বলেন, ‘শুনেছি এখানে দেশের প্রথম গির্জা ছিল। তবে আমরা কখনো দেখিনি। সেখানে দুটি পরিবার বসবাস করে এবং বাকি অংশ কৃষি জমি।’
বসবাসরত পরিবার দুটি জাগো নিউজকে জানায়, সেখানে গির্জা ছিল। তাই দিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্থানটি দেখার জন্য মানুষ ভিড় জমায়।
এসইউ/জেআইএম