প্রাচীন গ্রিসের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
আধুনিক যুগে অনেক রকম জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালু আছে। নারী-পুরুষ উভয়ই এখন নিজেদের ইচ্ছেমতো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন। এতে কোনরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই খুব সহজে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু প্রাচীনকালে এরকম সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তারপরও সেসময়ে গ্রিসের মানুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ করত। সেসব পদ্ধতির কথা শুনলে আপনি অবাক হবেন।
সিফিয়াম
প্রাচীন গ্রিসের মানুষ সিফিয়াম নামে এক ধরনের ছোট গাছের সাথে পরিচিত ছিল। ফেরুলা জেনাস গোত্রের এই গাছটি পাওয়া যেতো গ্রীক কলোনিগুলোতে। এই গাছের রস প্রথমে গবাদি পশুর উপর পরীক্ষা করে সাফল্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে মানুষের উপর প্রয়োগ করা হয়। বর্তমানের কন্ট্রাসেপ্টিক পিলের মতো সিফিয়াম ব্যবহার করা হত।
জাদুটোনা
প্রাচীন গ্রিসে জন্ম এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য নানা রকম জাদুটোনা, মন্ত্রপূত, তাবিজ-কবজে বিশ্বাস করা হত। কোন কারণে বিশ্বাস করা হত যে, বেজির অণ্ডকোষ এই দুটি কাজের জন্য উপযুক্ত। জানা যায়, সেসময় গ্রিসে বেজির অণ্ডকোষ পুড়িয়ে ছাই করে গন্ধরসের পেস্টের সঙ্গে মিশিয়ে ছোট ছোট বল বানানো হতো। তারপর সেই বল শারীরিক মিলনের আগের নারীদের যোনিতে প্রবেশ করানো হত। ধারণা করা হত, এতে গর্ভধারণ হবে না।
পুরুষদের গর্ভনিরোধ
কিছু পৌরাণিক সূত্র থেকে জানা যায়, প্রিকলিমেনন নামক এক গাছের রস পুরুষের গর্ভনিরোধে কাজ করে এমনটা বিশ্বাস করা হতো। কিন্তু আধুনিক পরীক্ষায় তা কার্যকর হয়নি। প্রখ্যাত গ্রিক চিকিৎসকের মতে, সেসময় ক্রীড়াবিদগণ তাদের শিশ্ন উত্থিত হওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য সতী গাছ বা চেশট ট্রি ব্যবহার করত। অন্য একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ধর্মযাজকরা তাদের কামবাসনা দমন করার জন্য এই গাছটি চিবোতেন। আধুনিক কালে এই গাছের রস একটি কুকুরের উপর প্রয়োগ করে উল্ল্যেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। এটি কুকুরের শুক্রাণু উৎপাদনে বাঁধা দেয়।
গর্ভপাত
সেসময় গ্রিসে নারীদের গর্ভপাত করানোর রীতি চালু ছিল। এরজন্য তারা অস্ত্রোপচার এবং রাসায়নিক দুটি পদ্ধতি জানত। প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যদি কোন মায়ের জীবনের ঝুঁকি দেখা দিতো তবে তাকে অস্ত্রোপচার থেকে দূরে রাখতে নিরুৎসাহিত করা হতো। গর্ভপাতকে সেসময় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হত না। আর অধিকাংশ সময় যৌনকর্মীরাই গর্ভপাত করাত।
শিশুহত্যা
পরিবার পরিকল্পনার জন্য শিশুহত্যা খুব পরিচিত একটি পদ্ধতি। আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে যতক্ষণ না অ্যামফিড্রোমিয়া পালন করা হচ্ছে; ততক্ষণ একটি শিশুর সুরক্ষা খুবই সামান্য ছিলো। অ্যামফিড্রোমিয়া হচ্ছে একটি অনুষ্ঠান যেখানে বাবা তার সন্তানের নামকরণ করত। সাধারণত এই অনুষ্ঠান হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশুদের কোন আইনি কারণ ছাড়াই মেরে ফেলা হত। এমনকি প্রাচীন গ্রিক আইনে কিছু কিছু পরিস্থিতিতে শিশুহত্যা করার জন্য উপদেশ দেয়া হত।
বিকলাঙ্গ শিশু
প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় যদি কোন সন্তান বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নিত, তবে তার বেঁচে থাকার কোন অধিকার ছিল না। গ্রিসে শারীরিক বা মানসিকভাবে অক্ষম সন্তান কোনভাবেই মেনে নেয়া হত না। আর সেসব শিশুদের হত্যা করা হত। এই বিষয়ে গ্রিসে একটি আইন ছিল। যদি কোন প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হয়, তবে তাকে সঙ্গেসঙ্গেই মেরে ফেলতে তার মাকে বাধ্য করা হত। এই মৃত্যু কার্যকর করা হত দুটি উপায়ে- এক. শ্বাসরোধ করে, দুই. তাকে নর্দমা বা ময়লা স্থানে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে।
সমকামিতা
প্রাচীন গ্রিসে একসময় সমকামিতার বহুল প্রচলন ছিল। তবে এই নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। ধারণা করা হয়, নিজেদের বিকৃত যৌনলালসা চরিতার্থ করা ছাড়াও জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য এর প্রচলন ছিলো। অধিকাংশ সময়ে মালিকরা নিজেদের ক্রীতদাস ব্যবহার করত।
এসইউ/পিআর