আবহমান বাংলায় শীত
আবহমান বাংলার ছয় ঋতুর প্রত্যেকটিরই আলাদা আলাদা রূপ-বৈচিত্র্য রয়েছে। শীত ঋতুটিও তার আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। অগ্রহায়ণের শুরুতেই হিমেল পরশ নিয়ে আসে শীত। সেই হিমেল পরশ ক্রমান্বয়ে হাড় কাঁপুনি শীতে রূপ নেয়। এরপর পৌষ, মাঘ জুড়ে চলে শীতের দোর্দাণ্ড দাপট। তবে অন্যান্য ঋতুর চেয়ে শীতকে সমৃদ্ধ ঋতু বলা চলে। কারণ শীতে রঙিন রঙিন গরম জামা কাপড়ের পাশাপাশি হরেক স্বাদের পিঠা-পুলি ও মিষ্টি খেজুর রস পাওয়া যায়। এমন রসনা বিলাসের মনলোভা খাবার অন্য ঋতুতে নেই। অন্যদিকে তাজা তাজা পুষ্টিকর নানা জাতের শাক-সব্জি শীতের সময় হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়।
ভ্রমণ পিপাসুরা তাদের প্রত্যাশিত প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরতে শীতের সময়টাকে বেছে নেন। কারণ এই সময়ে প্রকৃতি এক মায়াময় সাজে সেজে ওঠে। শীতের সাকালে কুয়াশাচ্ছন্ন দৃশ্য দেখতেই সত্যিই মনোরম। অনেক সময় ঘন কুয়াশায় রাস্তা-ঘাট ঢেকে যায়। এ দৃশ্য দেখে মনে হয় প্রকৃতি বুঝি সাদা চাদর পরেছে। কুয়াশার কারণে নদীতে লঞ্চ ও জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
গ্রামে শীতের সকালের দৃশ্যটা একটু ভিন্ন। শীতের সকালে সবাই রোদের আদুরে উষ্ণ স্পর্শ প্রত্যাশা করে। এ এক মজার অনুভূতি। আবার কেউ কেউ শীতের ঠান্ডার ভয়ে লেপ, কম্বল মুড়িয়ে বসে থেকে, কিংবা শুয়ে থেকেই সকালে ঠান্ডা শিশির ভেজা আমেজটাকে বিদায় জানায়।
অন্যদিকে শহুরে মানুষের কাছে শীতের দৃশ্যটা বলতে গেলে পুরোটাই ভিন্ন। কারণ সকালে ঘুম থেকে জেগেই সবাই নিজ নিজ কর্মস্থলে ছুটে যায়। শুধু শীতের পোশাক পরা ছাড়া শহরে শীতের আমেজ খুব একটা নেই। এদিকে আবার গ্রামের মানুষ শীতের ঠান্ডা পরিবেশকে একটু উৎসবে পরিণত করে। বাড়িতে বাড়িতে আগুনের নরম মিষ্টি আচ নেওয়ার জন্য আগুন জ্বালানো হয়। এ আগুনের চারপাশে বসে শীত কমানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল বেলা সূর্য উঠতেই ছেলে-বুড়ো মিলে রোদ পোহাতে বসে নানা গল্পে মেতে উঠে।
শীতের সময়টা সচ্ছল ও বিত্তবানদের জন্য আরামের ও উপভোগ্য। গরিব ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কাছে শীত অনেক কষ্ট ও বিষাদের বার্তা নিয়ে আসে। বিশেষ করে গ্রামের যাদের শীতের পর্যাপ্ত পোশাক নেই তাদের কাছে শীত বড়ই কষ্টের। অন্যদিকে শহরের ফুটপাথে ছিন্নমূল কিংবা বস্তিতে বসবাসকারী মানুষরাও শীতের পোষাকের অভাবে কষ্টে দিন কাটায়। এই সব শীতার্ত মানুষের পাশে আমাদের সবার দাঁড়ানো। শীতে কষ্ট পাওয়া এই সব মানুষদের যে যার মত সাধ্যমত সাহায্য করা উচিত।
এমএস