স্মৃতিময় শীতের সকাল
পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল হলেও একটু আগেই হাজির হয় শীত। সকালের আকাশে কুয়াশার ছড়াছড়ি। সূর্যের দেখা পাওয়া কঠিন। শহুরে জীবনের কথা বাদ দিলে গ্রামীণ জীবনে শীতের সকাল অনেকটা স্মৃতিময় হয়ে ওঠে। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার আলস্য জড়িয়ে থাকে শরীরজুড়ে। চোখ খুললেও শরীর নামতে চায় না বিছানা থেকে।
কুয়াশা ভেদ করে যখন সকালের প্রথম সূর্যটা উঁকি মারে; তখন ঝলমল করে ওঠে চারপাশ। চাঞ্চল্য ফিরে পায় মানুষ। কর্মব্যস্ত মানুষ ছোটে মাঠে। বৃদ্ধ-শিশুরা সকালের রোদে গা পেতে দেয় পরম আনন্দে। শীতের তীব্রতায় বা শৈত্যপ্রবাহে আগুন জ্বেলে চারিদিকে বসতে দেখা যায় কখনো কখনো।
শীতের সকাল উপভোগ্য হয় পিঠা-পায়েসে। বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি হয় শীতকে ঘিরে। রাতে পিঠাগুলো তৈরি করে খেজুর রসে ভিজিয়ে পরদিন সকালে পরিবেশন করার রেওয়াজ আছে গ্রামাঞ্চলে। হালকা রোদ গায়ে মেখে শীতের পিঠাপুলি আস্বাদন বহুবছরের পুরনো রীতি বা ঐতিহ্য।
শহুরে জীবনে শীতের সকাল আমাদের প্রলুব্ধ না করলেও গ্রামীণ শীতের সকাল আমাদের কাছে স্মৃতিময় হয়ে ওঠে। সারা বছরের স্বাভাবিক পোশাকের চেয়ে ভারি পোশাক আমাদের জন্য অপরিহার্য হয় তখন। কিছু বাড়তি অনুষঙ্গ যুক্ত হয় শরীরের সঙ্গে। কেননা শহরের চেয়ে গ্রামের শীত যেন আগে আসে। নভেম্বরের শুরু থেকেই গ্রামাঞ্চলে শীতের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। তবে শহরে ডিসেম্বরের আগে শীত তেমন অনুভূতই হয় না।
গ্রামাঞ্চলে শীতের সকালে আড্ডাটা জমে ওঠে। রাস্তার পাশে, চায়ের দোকানে, খোলা মাঠে ভিড় জমতে থাকে। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা যুক্ত হয় সে আড্ডায়। ছয়টি ঋৃতুর মধ্যে তাই শীতকালটি উপভোগ্য হয়ে ওঠে। স্মৃতিময় হয়ে থাকে সবার কাছে। যদিও দরিদ্রের শীতের সকাল হাড়কাঁপানো আর বিত্তশালীর শীতের সকাল আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে দেখা দেয়। তবু আমরা চাই শীত আসুক! আসুক প্রাকৃতিক সমৃদ্ধি! শাক-সবজিতে ভরে উঠুক গ্রামের মাঠ কিংবা আঙিনা।
স্মৃতিরা কখনো আনন্দের কখনো বেদনার। বেদনাময় স্মৃতিও মানুষের সহমর্মিতা বা সহযোগিতায় আনন্দময় হতে পারে। হতে পারে সবার জন্য মঙ্গলময়। তাই তো তীব্র শীতে মানবতার ডাকে দরিদ্রের পাশে দাঁড়ান বিত্তশালীরা। একই আঙিনায় শীতের চাদরে জড়াজড়ি করে উপভোগ করেন সুখময় স্মৃতি। তাই বলবো, শীত হোক মঙ্গলময়! শীতের সকাল হোক স্মৃতিময়!!
এসইউ/এমএস