‘পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরণও ভালো’
লুৎফর রহমান। বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। পেশায় রাজমিস্ত্রি। থাকেন টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর থানার কুন্ডুরা আদালতপাড়ায়। তবে গত দেড়মাসেরও বেশি সময় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাষ্টিক সার্জারি ইউনিটে সস্ত্রীক দিন কাটাচ্ছেন। একটি দুর্ঘটনা তার জীবন চলার পথকে এলোমেলো করে দিয়েছে।
পেশাগত কাজে একটি ভবনের ছাদের ওপর রড টেনে তুলতে গিয়ে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হন লুৎফর রহমান। গুরুতর অবস্থায় সহকর্মীরা তাকে প্রথমে স্থানীয় ও পরে ঢামেক বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসেন। প্রাণে বাঁচাতে পোড়া রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তার দুই হাত কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে বার্ন ইউনিট পরিদর্শনে দেখা যায় লুৎফুর রহমানের স্ত্রী তাকে বারান্দার একটি বেডে বসিয়ে হাত-পা মুছে দিচ্ছিলেন। মাথা, বুক ও পা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। শরীর মুছে দেয়ার সময় ব্যথায় বার বার কুঁকড়ে উঠছিলেন তিনি।
ঈদ কি হাসপাতালেই করবেন এমন প্রশ্ন করতেই ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে লুৎফর রহমান বললেন, ‘ঈদের আনন্দ কী তা ভুলে গেছি। এখন আমার কাছে ঈদ আর অন্য দশটা দিন সমান। দুই হাত কেটে ফেলেছে। কবে আবার পা দুটোও কাটা পড়ে সে দুশ্চিন্তায় ঘুমোতে পারি না’ বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি।
তার স্ত্রী জানান, গত ৫০ দিন স্বামীর সঙ্গে হাসপাতালেই দিন কাটছে তার। দুই মেয়ে থাকলেও তারা নিজেদের সংসার ফেলে আসতে পারেন না।
সেদিনের দুর্ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে লুৎফর রহমান জানান, আদালতপাড়ার পল্লী বিদ্যুত অফিসের সামনে একটি বহুতল ভবনের ছাদে রড টেনে ওপরে তুলছিলেন। দুর্ঘটনাবশত একটি রড রাস্তার পাশের বিদ্যুতের তারের সঙ্গে ঠেকে যায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জ্ঞান হারান লুৎফর।
দুদিন অচেতন থাকার পর যখন জ্ঞান ফেরে তখন নিজেকে ঢামেক বার্ন ইউনিটের বিছানায় দেখতে পান তিনি। চোখ মেলে দেখেন পান তার দুহাত কনুই পর্যন্ত ব্যান্ডেজ করা। দুই হাত নেই জেনেও স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। স্ত্রীর চোখের জল দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন তিনি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন।
এই অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেন না লুৎফর। তার মনে হয়, এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরণও ভালো।
এমইউ/এনএফ/এমএস