মালিকের বিশ্বাস নষ্ট কইরা একটা গোলাপও বেঁচতে পারুম না
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির পূর্বদিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে একটি ভ্যানগাড়ির সামনে গোল করে দাঁড়িয়ে আছেন প্রাতঃভ্রমণ করতে আসা কয়েকজন তরুণ-তরুণী ও একজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। গাড়িটির ওপর থরেথরে সাজিয়ে রাখা টকটকে লাল গোলাপ ফুলের স্তূপের দিকে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি। তরুণীদের একজন ভ্যানচালককে উদ্দেশ্যে করে বলে ওঠেন, `মামু কয়েকটা গোলাপ দিয়া একটা তোড়া বানাইয়া দিলে কয় টাকা নিবা।`
ভ্যানচালকের দ্রুত জবাব, সরি, পারুম না আপা। এই গোলাপ বেঁচনের লাইগ্যা না। পুরান ঢাকার নয়াবাজারে বিয়া বাড়ি সাজানের লাইগ্যা সব গোলাপ লইয়া যাইতাছি। তরুণীর সঙ্গে থাকা তরুণ মৃদু ধমক দিয়ে পাল্টা বলে ওঠেন, দূর ব্যাটা হাজার হাজার ফুলের মধ্যে কয়ডা ফুল দিলে কী সমস্যা অইবো। কিন্তু ভ্যানচালকের এক কথা মালিকের বিশ্বাস নষ্ট করতে পারুম না।
কৌতূহলবশত সামনে এগিয়ে গিয়ে কথা বলে জানা গেল, দরিদ্র এই ভ্যানচালকের নাম মোশাররফ হোসেন। বাড়ি শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া থানায়। ঢাকায় হাজারীবাগে থাকেন। পুরান ঢাকার জাবেদ নামে এক ঢাকাইয়্যা ব্যক্তি বিভিন্ন বিয়েবাড়িতে ফুল দিয়ে সাজানোর কাজ করে থাকেন।
জাবেদের নির্দেশনা অনুসারে সকালেই শাহবাগে এসে তিন হাজার টাকার গোলাপ কেনেন। এখন সেগুলো নিয়ে যাচ্ছেন। মোশাররফ জানান, যে ফুল তিনি তিন হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন সেই ফুলই ভ্যালেনটাইন ডে, পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে তিন-চার গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়।
ফুল কিনে তার ব্যবসা হয় কি-না জানতে চাইলে মোশাররফ জানান, জাবেদ নামে যে মালিকের সঙ্গে কাজ করেন তিনি না চাইতেই অনেক কিছু দেন। অনুষ্ঠানস্থলে ফুল সাজানোর পর থেকে শুরু করে শ্রমিকরা যখন যা নাস্তা খেতে চান তাই খেতে দেন। তাছাড়া রাতে চলে আসার সময় মজুরি হিসেবে কখনো এক হাজার টাকা কখনো ১২শ’ টাকা দেন। তাই শ্রমিকরা কেউ বিশ্বাস ভঙ্গ করেন না বলে জানায় মোশাররফ হোসেন।
কথা প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন জানান, জীবিকার তাগিদে তিনি তার এই ভ্যানে কখনো গোলাপ ফুল বহন, কখনো ফুল সাজানোর কাজ আবার কখনো শাকসবজি ও ফুলমূল বিক্রি করেন। তার দুই সন্তানের একজন হাজারীবাগের সেকশন সালেহা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেছে, অন্যজন স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী। সংসারে অভাব অনটন থাকলেও মালিকের সঙ্গে কখনো বেইমানি করবেন না এই তার নীতি বলে জানান।
এমইউ/বিএ/এমএস